২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৩৫%

দেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বরে) দেশে সরাসরি বিদেশি নিট বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৩৫.৫৬ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিদেশি নিট বিনিয়োগ এসেছে ৭০৩ মিলিয়ন ডলার; যা আগের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১,১০০ মিলিয়ন ডলার।
দেশের বিভিন্ন খাতে এফডিআইয়ে বিনিয়োগ আসে। তার থেকে বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন করে বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ থেকে মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অঙ্ককে নিট এফডিআই বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিনিয়োগ কিছুটা বাড়ছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করেছে। একইসঙ্গে যুদ্ধের কারণে বেড়েছে ডলারের বিনিময় হার। এসব কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন তারা।
তবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালজুড়ে বিদেশি নিট বিনিয়োগ বেড়েছে ২০.১৮ শতাংশ। ২০২১ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর পর্যন্ত) নিট বিনিয়োগ হয়েছে ২,৮৯৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের একইসময়ে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৩,৪৭৯ মিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে ২০২২ সালে দেশে বিদেশি নিট বিনিয়েগ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৫৮৪ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩ সালের ২৬ এপ্রিলে এসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১.০৬ বিলিয়ন ডলারে। যা ২০২২ সালের একইদিনে ছিল ৪৪.০৬ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কমেছে ১৩ বিলিয়নের বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গেল বছরের শেষ প্রান্তিকে দেশের ডলারের বাজারে বেশ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিদেশি পাওয়া পরিশোধে অক্ষমতা, বিভিন্ন ব্যাংকের ডলার সংকটের খবর- এসব কিছু বিদেশি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
তিনি বলেন, "আইএমএফ'র ঋণের প্রথম কিস্তি জানুয়ারিতে এসেছে। আশা করছি, পরের প্রান্তিক থেকে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।"
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে দেশে ডলার সংকটের প্রভাব বেড়েছে; মূলত এ কারণেই অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে।
তবে ফেডারেল রিজার্ভ রেট কমে গেলে এবং বাংলাদেশে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজার হারে ফিরে আসলে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডলার রেট কমার কারণে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ১৯.৪৪ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, এপ্রিলে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার, যা আগের মাসের তুলনায় প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার কম।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দশমাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭.৭১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪০৯ মিলিয়ন ডলার বেশি।
যদিও প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এখনও পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে ১১.৮৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শ্রমিকের মজুরি কম হলেও দেশটি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারছে না।
এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ঘাটতি, দুর্বল সঞ্চালন অবকাঠামো, শিল্পের জন্য জমির অভাব, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও নিয়মকানুন সবক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ না হওয়া- এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছে না।