হোয়াইট কলার রেমিট্যান্সে রেট ৭.৫ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ফ্লো বাড়াতে হোয়াইট কলার জব হোল্ডারদের রেমিট্যান্স রেট ৭ টাকা ৫০ পয়সা বেড়ে এখন থেকে রেমিট্যান্স রেট হবে ১০৭ টাকা। এছাড়া ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্স রেট ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকাররা।
রোববার সন্ধ্যায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সন্ধ্যায় অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)- এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এমন সিদ্ধান্ত গতকাল থেকে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
যদিও আগে হোয়াইট কলার জব হোল্ডারদের রেমিট্যান্স রেট ছিল রপ্তানি আয় এনক্যাশমেন্টের রেট (৯৯ টাকা ৫০ পয়সা) অনুযায়ী।
সাধারণত হোইট কালার জব হোল্ডার বিদেশে প্রবসী (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশা) হিসেবে কর্মরত ব্যক্তিদের উল্লেখ করা হয়। যারা তাদের বেতন ভাতা সেই দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পেয়ে থাকে।
গত ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এবিবি-বাফেদার বৈঠকে হোয়াইট কলার জব হোল্ডার রেমিট্যান্স রেট নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া প্রবাসীদের জন্য কোন ধরনের ফি ছাড়া রেটিম্যান্স পাঠানোর সুযোগ ও সহজে রেমিট্যান্স পাঠাতে ছুটির দিনেও বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত এসেছে এই বৈঠকে।
এদিকে বৈঠকে রপ্তানি আয় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়।
সাধারণত দেশি ব্যাংকগুলোর নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের রেমিট্যান্স গ্রহণ করতো। ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে ১ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৫ ডলার পর্যন্ত ফি নেওয়া হয়।
বৈঠক থেকে বাফেদা চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, "আমরা (এবিবি-বাফেদা) নিয়মিত ফরেক্স মার্কেট পর্যালোচনা করে মিটিং করে থাকি। আজকে আমাদের প্রবাসীদের রেমিট্যান্স রেট ৫০ পয়সা কমিয়ে ১০৭ টাকা করা হয়েছে। এক্সপোর্ট প্রসিড এনক্যাশম্যান ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে।"
"আমাদের বিশেষ সিদ্ধান্ত হলো প্রবাসী কর্মীরা যেন রেমিট্যান্স পাঠাতে ওয়ার্ক প্লেস থেকে কোন ছুটি না নিতে হয়, তাই বন্ধের দিনেও রেমিট্যান্স হাউজ খোলা থাকবে," বলেন তিনি।
বৈঠকের সূত্রে জানা যায়, একাধিক ব্যাংকার জানিয়েছেন, ৪/৫টি ব্যাংক অন্য ব্যাংকগুলোকে প্রতিশ্রুত (ডলার) পেমেন্ট দিতে পারছে না। কিছু ব্যাংক অক্টোবরেই ডিফল্টার হয়েছে, নভেম্বরে পেমেন্টের আরো চাপ আছে। তখন ব্যাংকগুলোর আরো সমস্যা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
দেশে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক (এবিবি ও বাফেদা) কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেয়।
এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর সব ব্যাংকে ডলারের একক রেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। রেমিট্যান্স আনতে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দর দেওয়া হয় ১০৮ টাকা ও রপ্তানি বিল নগদায়ন রেট নির্ধারণ করা হয় ৯৯ টাকা।
এরপর যদিও রেমিট্যান্সের দর এক টাকা কমিয়ে ১০৭ টাকা ও রপ্তানি আয় এনক্যাশমেন্ট ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়।
বাফেদার এমন সিদ্ধান্ত প্রথম মাসেই রেমিট্যান্সে ধাক্কা হানে। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪৯৭ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স কম এসেছে। সেই ধারা অব্যাহত ছিল অক্টোবরেও। অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৫২ বিলিয়ন ডলার। যা প্রায় আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল।
এ বিষয়ে এবিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "ফরমাল চ্যানেলে তুলনায় ইনফরমাল চ্যানেলে অনেক বেশি রেট। যার কারণে রেমিট্যান্স কম। এটা একটা চাপানো রেট। রেট এভাবে চাপিয়ে রাখা যায়না। এর কারণে রেমিট্যান্সে হুন্ডি কারিদের কাছে যাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিট্যান্সের যে রেট পায় তার তুলনায় ব্যাংকিং চেনেলে কম পাচ্ছে। এখন রেমিট্যান্স রেট এভাবে আটকিয়ে রাখলে কখনো ফ্লো বাড়বে না। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন পরিক্ষা চলতে থাকলে ব্যাংকগুলোকে বাঁচানো খুবই কষ্টকর হবে।"
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "আমাদের রিজার্ভের সংকটের মধ্যে রেমিট্যান্স কমা খুবই আশঙ্কাজনক। এক মার্কেটে একাধিক ফরেক্স মার্কেট রেট কোনভাবেই কাম্য নয়।"
"হুন্ডিতে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় পাঁচ টাকা বেশি রেট পাচ্ছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত রেমিট্যান্সের ফ্লো বাড়াতে কার্ব মার্কেটের সঙ্গে সমন্বয় করে রেমিট্যান্স রেট ঠিক করা," বলেন তিনি।