ঋণ নিয়ে আলোচনায় ২৬ অক্টোবর ঢাকায় আসছে আইএমএফ’র প্রতিনিধিদল
বাজেট সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশের চাওয়া ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করতে আগামী বুধবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকায় আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল।
ঋণের শর্তাবলী নিয়ে আলোচনার পর আগামী বছরের জানুয়ারিতে ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে দেড় বিলিয়ন ডলার পাওয়ার আশা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থনৈতিক ও আর্থিক সংস্কার এবং এ সংক্রান্ত নীতি নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত ঢাকা সফরের পরিকল্পনা করছেন আইএমএফ কর্মকর্তারা।
সফরের উদ্দেশ্য হল, একটি সম্ভাব্য বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধা প্রোগ্রামে স্ট্রাফ লেভেলে চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়া এবং আগামী সময়ে রিসাইলেন্স অ্যান্ড সাবস্টেইনাবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) তে প্রবেশ করা।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে জলবায়ু ঝুঁকির বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা তৈরিতে সহায়তা করতে সাশ্রয়ী মূল্যের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দেওয়াই আরএমএফ'র লক্ষ্য।
আইএমএফ কর্মীরা সফরকালীন অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশে আইএমএফ মিশন চিফ রাহুল আনন্দ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড কে বলেন, আইএমএফ টিমের সঙ্গে দরকষাকষিতে যেসব শর্ত বাংলাদেশকে মানতে হবে, সে বিষয়ে সরকারকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সম্মতিও নিতে হবে। ফলে আগামী জানুয়ারির আগে সংস্থাটির কাছ থেকে ঋণের অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
আইএমএফ'র সাবেক কর্মকর্তা ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, "বর্তমানে প্রতিমাসে রিজার্ভ থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এ অবস্থায় আইএমএফ'র কাছ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেলে তা শেষ হতে মাত্র তিন মাস সময় লাগবে।"
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে ঋণ দিলে তা যে ফেরত পাওয়া যাবে না, সেটি আইএমএফও জানে। তাই সংস্থাটি বাংলাদেশের ম্যাক্রো ইকোনমি স্থিতিশীলতায় স্বাভাবিকভাবেই বেশকিছু শর্ত দেবে। কারণ, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংকট টাকা দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়, পলিসি দিয়ে সমাধান করতে হবে।
তার মতে, রাজস্ব আয় বাড়াতে মধ্যমেয়াদী শর্তারোপ করবে আইএমএফ। এজন্য রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। এছাড়া, ব্যাংক ঋণের সুদহারের ওপর আরোপিত ক্যাপ প্রত্যাহার করার শর্তারোপ করবে সংস্থাটি। পাশাপাশি, মনিটারি পলিসি চালু করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলবে সংস্থাটি।
"আইএমএফ'র অন্যতম শর্ত হবে 'মার্কেট-ডিটারমাইন্ড এক্সচেঞ্জ রেট' (বাজার নির্ধারিত বিনিময় হার) নিশ্চিত করা। বর্তমানে আমাদের দেশে চারটি এক্সচেঞ্জ রেট রয়েছে- একটি সরকারের জন্য, একটি আমদানিকারকদের জন্য, একটি রপ্তানিকারকদের জন্য এবং একটি রেমিটেন্সের জন্য। আইএমএফ'র শর্ত থাকবে, আগের মতো একটি এক্সচেঞ্জ রেট নিশ্চিত করা এবং কার্ব মার্কেটের রেটের সঙ্গে এক্সচেঞ্জ রেটের ব্যবধান কমিয়ে আনা," যোগ করেন ড. যোগ করেন আহসান এইচ মনসুর।
এমনকি, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করার শর্ত এই মুহূর্তে আরোপ না করলেও এসব খাতে যেনো নতুন করে ভর্তুকি বাড়ানো না হয়, আইএমএফ সেই শর্ত দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, "এখন আর সময়ক্ষেপনের সুযোগ নেই। আইএমএফ'র পরামর্শ মেনে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ম্যাক্রো ইকোনমিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে।"
বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের শর্তাবলী সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এগুলো এখনো ঠিক হয়নি। তবে এই ঋণের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সংস্কার বাস্তবায়ন, নন-পারফর্মিং ঋণ হ্রাস, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন- বিশেষ করে দেশীয় ঋণ বাজারের ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক, রাজস্ব ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও বড় যে বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনা যেতে পারে তারমধ্যে রয়েছে- আর্থিক নীতি কাঠামোর আধুনিকীকরণ, আর্থিক কাঠামোর উন্নতি এবং আর্থিক ঝুঁকি হ্রাস করা, প্রবৃদ্ধি-বর্ধন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যয়ের জন্য আর্থিক খাত তৈরি, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আর্থিক দুর্বলতাগুলো কমানো, আরও শক্তিশালী তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির পাশাপাশি তথ্য-উপাত্তের গুণমান উন্নত করা। সেইসঙ্গে জলবায়ু-সম্পর্কিত ঝুঁকি হ্রাসের জন্য সংস্কারের বিষয়টিও আলোচনায় থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
