বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণের পরিমাণ বাড়লেও বাড়েনি অর্থ ছাড়

বিশ্বব্যাংকের নিট ঋণের প্রতিশ্রুতি গত পাঁচ বছরে ৪.৬ বিলিয়ন ডলার বাড়লেও কমেছে ঋণ বিতরণ অনুপাত।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র ৫১৯ মিলিয়ন ডলার বেশি বিতরণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে বিতরণ না করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৮.৫ বিলিয়ন ডলার যা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিশ্রুত ঋণ বিতরণ অনুপাত ১৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই অনুপাত ছিল ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৮ শতাংশ।
গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে প্রকল্প সংক্রান্ত বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। প্রকল্প শুরু হতে বিলম্ব, তৎপরতার অভাব এবং সরকার ও ঋণদাতার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব মূলত ঋণ বিতরণে বিলম্বের জন্য দায়ী।
সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যান্য সমস্যার মধ্যে জটিল কারিগরি নকশা, বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জটিল হওয়া, প্রকল্পের অপর্যাপ্ত কর্মী, বিবরণে অসঙ্গতি এবং অপর্যাপ্ত এডিপি বরাদ্দের প্রাপ্যতা ইত্যাদি চিহ্নিত করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে পরিবহন খাতে, যার পরিমাণ ২.৯৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্ত বিগত পাঁচ অর্থবছরে এ খাতে অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৪৩.৪ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ বছরে সব চেয়ে বেশি অর্থ ছাড় হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান খাতে। এই খাতে প্রতিশ্রুত ১.৩৪ বিলিয়ন ডলারের বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়েছে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার। একইসময়ে স্বাস্থ্যখাতে প্রতিশ্রুত ১.৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৮৯৪.৪ মিলিয়ন ডলার অর্থ বিতরণ হয়।
ঋণ বিতরণ দ্রুততর করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়। ছয়টি বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আরও ১৮টি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয় যার প্রতিশ্রুত ঋণের ৮০ শতাংশের বেশি এখনও বিতরণ করা হয়নি।
বিশ্বব্যাংক ও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো চিহ্নিত সমস্যাগুলো অবিলম্বে সমাধান করতে সম্মত হয়েছে বলে জানান বৈঠকে যোগদানকারী ইআরডি কর্মকর্তারা।
তারা আরও জানান, বৈঠকে ধীরগতির প্রকল্পগুলো সংশোধন, প্রকল্প প্রস্তাব পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা এবং ঋণ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান ৮০ শতাংশের বেশি অর্থ ছাড় না হওয়া বেশ কিছু প্রকল্পের ঋণ চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশ আঞ্চলিক নৌপথ পরিবহন প্রকল্প-১ এর অর্থায়নে ২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। ছয় বছরে ধরে চলমান এই প্রকল্পের ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ ঋণ এখনো ব্যবহার করা যায়নি।
এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের নিট প্রতিশ্রুতি ২৩৪ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালে প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
৮০ শতাংশের বেশি অর্থ ছাড় না পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো- ঢাকা সিটি নেইবারহুড আপগ্রেডিং প্রজেক্ট; রুরাল ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন ফর হিউম্যান ক্যাপিটাল প্রজেক্ট; ইনহ্যান্স ডিজিটাল গভর্নম্যান্ট অ্যান্ড ইকোনমিক প্রজেক্ট; বেসরকারি বিনিয়োগ ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা প্রকল্প; ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহ্যান্সমেন্ট প্রোগ্রাম।
বিদ্যুৎ খাতে বিতরণ সমস্যা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো হলো- বাংলাদেশ পাওয়ার সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, পূর্বাঞ্চলের পাওয়ার নেটওয়ার্ক বর্ধন ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়ন প্রকল্প, ঘোড়াশাল ৪র্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন ও নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়ন (আরইআরইডি-২) প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থা আধুনিকায়ন কর্মসূচি।