ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যাংক ঋণের নিশ্চয়তা দিতে পিকেএসএফ-এর ২৪০ কোটি টাকার তহবিল

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) শনিবার (২৪ মে) দেশের প্রথম 'ক্রেডিট এনহেন্সমেন্ট স্কিম' (সিইএস) চালু করতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, যা এতদিন ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের (এমএফআই) পক্ষে সংগ্রহ করা কঠিন ছিল।
এই প্রকল্পের আওতায় পিকেএসএফ তার অংশীদার সকল এমএফআই-কে ২৪০ কোটি টাকার রিজার্ভ তহবিলের ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণের গ্যারান্টি দেবে। এর বিনিময়ে ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী এককালীন ০.৫ শতাংশ কমিশন আদায় করা হবে।
পিকেএসএফ সূত্রে জানা গেছে, এতে অংশীদার সংস্থাগুলোর জন্য ঋণ পাওয়া সহজ হবে এবং তারা আরও বেশি সংখ্যক ঋণ বিতরণ করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শনিবার পিকেএসএফ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই প্রকল্পের উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এছাড়াও থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশ মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিওং।
সরকার এবং এডিবির সহায়তায় নেওয়া এই পাইলট প্রকল্পে পিকেএসএফ পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) সঙ্গে চুক্তি করবে বলে জানা গেছে।
ব্যাংক ও এনবিএফআই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইউবিআইসিও)।
এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ৫৫টি অংশীদার সংস্থাকে নির্বাচন করা হয়েছে। ঋণের সুদের হার নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে।
তবে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ২৪ শতাংশ বার্ষিক সুদ নিতে পারবে, চাইলে তারা আরও কমও রাখতে পারবে।
পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল কাদের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, "বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের আনুমানিক তহবিলের চাহিদা প্রায় ৬০ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ অন্যান্য উৎস মিলে এই চাহিদার মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ পূরণ করছে। এই ঘাটতি কমাতেই আমরা এই প্রকল্প চালু করেছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আশা করি, আরও ব্যাংক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই উদ্যোগে যুক্ত হবে। পিকেএসএফ শুধু ঋণের গ্যারান্টিই দেবে না, ঋণের সঠিক ব্যবহারের ওপরও নজরদারি করবে।"
এই প্রকল্প নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, "এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যদিও ব্র্যাক ব্যাংক ইতোমধ্যেই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিচ্ছে, তবে সীমিত নেটওয়ার্ক ও ঝুঁকির কারণে অনেক ব্যাংক এখনো এই খাতে আসেনি। পিকেএসএফের প্রকল্পটি এই ঝুঁকি কমাবে এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও তহবিল দিতে উৎসাহিত করবে।"
পিকেএসএফ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০টি ব্যাংক ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে, প্রকল্পটির মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ বাজারে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা প্রবাহিত হতে পারে, যা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়নের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে।
পিকেএসএফ তার অংশীদার এমএফআইগুলোর ঋণযোগ্যতা মূল্যায়ন করবে এবং নিজস্ব অভ্যন্তরীণ রেটিংয়ের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে ঋণযোগ্যতার সনদ দেবে। এতে ব্যাংকগুলো সহজে তাদের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যাচাই করতে পারবে।
এছাড়া পিকেএসএফ মাঠপর্যায়ে এই ঋণ কোথায় ও কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাও পর্যবেক্ষণ করবে। উৎপাদন, সেবা এবং ব্যবসার পাশাপাশি দারিদ্র্যপীড়িত, জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কেন এই উদ্যোগ
পিকেএসএফের অংশীদার এমএফআইগুলো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ে। অনেক সময় ব্যাংকগুলো জামানত হিসেবে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) বা স্থাবর সম্পদ চায়, যা অনেক ক্ষুদ্রঋণ সংস্থার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে, এসব সংস্থা তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত ঋণ দিতে পারে না।
বিশেষ করে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় কাজ করা সংস্থাগুলোকে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো অনাগ্রহী থাকে। কারণ, এসব অঞ্চলের ঋণগ্রহীতারা অনেক সময় বাস্তুচ্যুত হন এবং তাদের স্থায়ী আয়ের উৎস থাকে না।
সারা দেশে পিকেএসএফের ২১৪টি অংশীদার এমএফআই আছে। নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করলেই কোনো প্রতিষ্ঠান পিকেএসএফের অংশীদার হতে পারে। এরপর তারা ঋণ বিতরণের জন্য পিকেএসএফ থেকে অর্থ পায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পিকেএসএফ এসব সংস্থাকে মোট ৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা তহবিল দিয়েছে। তবে তাদের প্রকৃত চাহিদা আরও বেশি। সীমিত সম্পদের কারণে পিকেএসএফ সেই চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করতে পারে না।
এই ২১৪টি সংস্থা সম্মিলিতভাবে প্রায় ২ কোটি সদস্যকে সেবা দিয়ে থাকে।