চট্টগ্রামে ১৫ দিনের ব্যবধানে মুরগীর দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ

চট্টগ্রামে ১৫ দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার, সোনালী এবং দেশী জাতের মুরগীর দাম বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। করোনার প্রভাবে লোকসানে পড়ে প্রায় অর্ধেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে করোনার প্রভাব কমে লকডাউন উঠে যাওয়ায় বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মুরগির চাহিদা বাড়ায় দামও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ী, বহদ্দারহাট, কর্ণফুলী বাজার, চকবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজার পরিদর্শনের পর জানা যায়, বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার মুরগী খুচরা পর্যায়ে ১৬০ টাকায়, সোনালী মুরগী ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় এবং দেশী মুরগী ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোর্শেদ কাদের টিবিএসকে বলেন, 'বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ঘাটতি থাকায় ১৫ দিনের ব্যবধানে দাম বেড়ে গেছে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মুরগীর দাম কমে আসবে। মুরগীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সেক্টরের ব্যবসায়ীদের নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক করা হবে'।
ব্যবসায়ীরা জানান, ১৫ দিন আগে খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি ব্রয়লার মুরগীর দাম ছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। সোনালী জাতের কেজি প্রতি মুরগীর দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং দেশী জাতের মুরগী ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘির পাড়ের বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, 'লকডাউন খুলে দেওয়ায় বাজারে মুরগীর চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের অর্ডারও শুরু হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাই গত ১৫ দিন থেকে বাড়তে শুরু করেছে মুরগীর দাম'।
পোল্ট্রি খামারিরা জানিয়েছেন, ব্রয়লার মুরগীর ৫০ ভাগ ক্রেতা ব্যক্তিশ্রেণির গ্রাহক। বাকি ৫০ ভাগ বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, হোটেল রেস্টুরেন্ট, বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে সরবরাহ হয়। লকডাউনকালীন সময়ে সামাজিক অনুষ্ঠান, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় বাকি ৫০ ভাগ ক্রেতা কমে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় এই শ্রেণির চাহিদাও বেড়েছে।
মিরসরাই উপজেলা পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেন টিবিএসকে বলেন, করোনার কারণে লোকসানে পড়ে ৫০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বর্তমানে পাইকারীতে ব্রয়লার মুরগী ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং সোনালী জাতের মুরগী ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর কাজীর দেউড়ী বাজারের নিয়মিত ক্রেতা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, 'শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) কাজীর দেউড়ী বাজার থেকে ১৬৫ টাকা দরে ব্রয়লার মুরগী কিনেছি। অথচ ১৫ দিন আগে প্রতি কেজির দাম ছিল ১১৫ টাকা। এভাবে দাম বৃদ্ধি পাওয়া উদ্বেগজনক। প্রশাসনের উচিত দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা'।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল রিটন প্রসাদ চৌধুরী বলেন, ৩ মাসের ব্যবধানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ফিডে দাম বেড়েছে প্রায় ৭০০ টাকা। আগে এক বস্তা খাদ্যের দাম ছিল ১৮০০ টাকা। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০০ টাকায়। ওষুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ ভাগ। খামারিরা তাদের খামারে মুরগীর বাচ্চা তুলতে ভয় পাচ্ছে। এ কারণে বাজারে মুরগীর সংকট দেখা দিয়েছে'।
চট্টগ্রাম জেলার প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় বর্তমানে ৪ হাজার ২০০ ব্রয়লার এবং ৫১২টি লেয়ার মুরগির খামার চালু আছে। লোকসানে পড়ে কিছু খামার বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।