'সরকারের চরম অব্যবস্থাপনায় দেশজুড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি': ড্যাব-এর উদ্বেগ

ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ মর্মে তাদের পদত্যাগ করা উচিত সেইসঙ্গে শাস্তির আওতায় আনা দরকার। এমতাবস্থায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়রের পদত্যাগ করা উচিত। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে ড্যাবের কিছু কর্মসূচি থাকবে বলে তিনি জানান।
লিখিত বক্তব্যে ডা. আবদুস সালাম বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকলেও এই বছর এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্ত্বেও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের উদাসীনতায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত আগামী আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তনের আভাস ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবেই বলা হচ্ছে দেশের ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
সরকারি হিসাব মতে, ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ হাজার ৩২১ ও ২৮১। তবে দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনো দেখা যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২০৮ জন। মারা গিয়েছিলেন ৮ জন।
ডা. সালাম বলেন, এই বছর এখন পর্যন্ত পাওয়া সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইতিমধ্যে দেশে ডেঙ্গুতে ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ১০,২৯২ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং ৯ হাজারের বেশি আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোট ভর্তি রোগীর প্রায় ২৯ শতাংশ ঢাকার বাইরের। ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমানো এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় রোগী দ্রুত শনাক্ত জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার কথা বললেও নেওয়া হচ্ছে না তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ। ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার অস্থায়ী ১২ কেন্দ্রের সবগুলো কিট সংকটে বন্ধ রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৩২টিতে সেবা মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
পরিস্থিতির আরো অবনতির আশংকায় ড্যাবের মহাসচিব বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত প্রাক্-বর্ষা জরিপ অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব এলাকাতেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি বেশি। এবার ডেঙ্গুর মৌসুম গত বছরের মতো দীর্ঘ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলো কার্যক্রম জোরালো উদ্যোগ না নিলে পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।
ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসা সংকটের কারণ হিসেবে ডা. সালাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। ডেঙ্গু নতুন কোনো রোগ নয়। এটা প্রতিকারের জন্য সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তাতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।