যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন, গ্যাবার্ডের মন্তব্যে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই

তুলসি গ্যাবার্ড কোনো নতুন বক্তব্য দেননি; তিনি কেবল বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থি উগ্রবাদ নিয়ে তার এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ কীভাবে উঠে এসেছে, তা বিবেচনায় নেওয়াও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল এবং প্রশ্নটি সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনামূলক ছিল।
জবাবে তিনি সংক্ষিপ্ত ও কূটনৈতিক ভাষায় উত্তর দেন। তিনি নিজে থেকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তুলতেন, এমন সম্ভাবনা খুব কম।
তবে একইসঙ্গে তার মন্তব্য ট্রাম্প সরকারের ইসলামবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডার বৃহত্তর প্যাটার্নের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
হিন্দু ধর্মানুসারী হিসেবে গ্যাবার্ড হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু বিশ্বব্যাপী বা ভারতের অভ্যন্তরে মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
এ থেকেই বোঝা যায়, তিনি মূলত সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর প্রশ্নের সূত্র ধরেই কথা বলেছেন। মার্কিন প্রশাসন বা নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন, তার বক্তব্য থেকে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না।
তবে অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশে ইসলামপন্থি উগ্রবাদের পুনরুত্থান ঘটেছে। এই উদ্বেগ শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, পশ্চিমা পর্যবেক্ষক—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যেও রয়েছে।
এই পুনরুত্থানের দুটি দিক রয়েছে।
প্রথমত, গত ১৫-১৬ বছর ধরে ইসলামপন্থি উগ্র গোষ্ঠীগুলো বড় চাপে ছিল, ফলে তেমন তারা দৃশ্যমান ছিল না। এখন দীর্ঘ সময় পর তারা নতুন করে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের উপস্থিতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, সরকারের শাসনব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার ফলে উগ্রবাদী, এমনকি নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে এবং মোকাবিলা করতেও বিলম্ব করছে।
এই পুনরুত্থান নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক, বিশেষত উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে সরকার পরিচালনা করছেন উদার গণতান্ত্রিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ড. ইউনূস। অনেক বিদেশি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে তার নেতৃত্বাধীন সরকার কীভাবে ইসলামপন্থি উগ্রবাদের উত্থান বরদাশত করছে।
এই সরকার অবশ্যই আমাদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ৫ আগস্টের পর আমরা সবাই এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। তবে শাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতার কারণে এ সরকার ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারাচ্ছে। যদি এই বিষয়গুলোর সমাধান না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশকে মারাত্মক ফল ভোগ করতে হতে পারে।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যদি দ্রুত নির্বাচন না হয় এবং ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে না যায়, তাহলে বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
জিল্লুর রহমান সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) নির্বাহী পরিচালক। ফোনে তার মন্তব্য নিয়েছেন জান্নাতুল নাঈম পিয়াল।