স্ত্রীকে ছাড়তে নিজের মৃত্যু সাজিয়ে ইউরোপে পালিয়েছিলেন মার্কিন নাগরিক, ধরা পড়ে জেল-জরিমানা

মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনের তিন সন্তানের জনক রায়ান বর্গওয়ার্ট। সবাই ভেবেছিল তিনি হ্রদে ডুবে মারা গেছেন। কিন্তু পরে জানা গেল, নিজের মৃত্যু সাজিয়ে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন ইউরোপে নতুন জীবন শুরু করার স্বপ্নে। শেষমেশ সেই নাটক ফাঁস হয়ে গিয়ে আদালতে পেলেন জেল আর মোটা অঙ্কের জরিমানা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাকে খুঁজে বের করতে টানা ৮৯ দিন লেগেছিল—শেষ পর্যন্ত আদালতও সমান মেয়াদে, অর্থাৎ ৮৯ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন তাকে।
৪৫ বছর বয়সী বর্গওয়ার্ট ২০২৪ সালের আগস্টে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন বলে নাটক সাজান। হ্রদে উল্টে যাওয়া নৌকা, ফেলে রাখা মোবাইল ফোন ও পরিচয়পত্র দেখে ধারণা করা হয়, তিনি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। কয়েক মাস ধরে অনুসন্ধান চালান উদ্ধারকর্মীরা, কিন্তু পরে জানা যায় তিনি কানাডা হয়ে পালিয়ে গেছেন জর্জিয়ায়—সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি দেশ। সেখানে অনলাইনে পরিচিত উজবেকিস্তানের এক নারীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করার পরিকল্পনা ছিল তার।
গ্রিন লেক কাউন্টির সার্কিট কোর্টের বিচারক মার্ক স্লেট শুধু কারাদণ্ডই দেননি, বরং উদ্ধার অভিযানে ব্যয় হওয়া ৩০ হাজার ডলারও ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারকের ভাষায়, 'তিনি ৮৯ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করেছেন।'
আদালতে দাঁড়িয়ে বর্গওয়ার্ট বলেন, 'সেদিন রাতের কাজের জন্য আমি গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমার পরিবার ও বন্ধুদের যে কষ্ট দিয়েছি, তার দায় আমারই।'
তদন্তে উঠে এসেছে, স্ত্রীকে ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি জীবনবিমা করেছিলেন, বিদেশে ব্যাংক হিসাব খুলে টাকা স্থানান্তর করেছিলেন, নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন এবং সন্তান নেওয়ার সক্ষমতা ফেরাতে ভ্যাসেকটমি প্রত্যাহারের অস্ত্রোপারেশনও করিয়েছিলেন। প্রসিকিউটর জেরিস লা'স্পিসা বলেন, 'নিজের মৃত্যু সাজিয়ে পরিবারকে ধ্বংস করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিই ছিল তার উদ্দেশ্য।'
অবশেষে গত নভেম্বরে রুশ ভাষাভাষী এক নারী বিষয়টি প্রকাশ করায় তার অবস্থান ফাঁস হয়। পুলিশ তাকে ফেরাতে যোগাযোগ করলে তিনি ভিডিও বার্তায় জানান, 'আমি নিরাপদে আছি, কোনো সমস্যা নেই।'
ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং গ্রেপ্তার হন। এর পর তার স্ত্রী ২২ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন।
বর্গওয়ার্টের আইনজীবী এরিক জনসন আদালতে বলেন, 'তিনি চাইলে জর্জিয়াতেই থাকতে পারতেন। এত ছোট অভিযোগে তাকে জোর করে ফেরানো যেত না। কিন্তু তিনি নিজেই দেশে ফিরে এসে দায় স্বীকার করেছেন।'