Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
May 12, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, MAY 12, 2025
ডেমরায় আজও জমজমাট ২০০ বছরের পুরনো জামদানির হাট    

ফিচার

খুশনূর বাশার জয়া & মেহেদি হাসান
26 January, 2022, 01:30 pm
Last modified: 27 January, 2022, 06:31 pm

Related News

  • প্রাচীনতম সেলুন ট্রুফিট এন্ড হিল: যেভাবে বাকিংহাম প্যালেস থেকে গুলশানে
  • ঘর তার দুর্লভ সব সুরমাদানির ভাঁড়ার
  • বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ
  • ডেমরায় কিশোরীকে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
  • হাজার বছর পুরনো টি হর্স রোডের খোঁজে

ডেমরায় আজও জমজমাট ২০০ বছরের পুরনো জামদানির হাট    

সময়ের সাথে সাথে নারীদের ফ্যাশনে পরিবর্তন এলেও মলিন হয়নি জামদানির জৌলুস। দেশে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি তৈরি হলেও ডিজাইন, নান্দনিকতা এবং আভিজাত্যের বিচারে শীর্ষে থাকবে জামদানি। আর এই ঐতিহ্যের উপর ভর করেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে 'ডেমরা বাজার জামদানি হাট'।
খুশনূর বাশার জয়া & মেহেদি হাসান
26 January, 2022, 01:30 pm
Last modified: 27 January, 2022, 06:31 pm

ছবি: টিবিএস

কঠিন পাথরের রত্ন নয়, বরং সুতোয় তৈরি অমূল্য নকশা ও কারুকার্যমন্ডিত ১২ হাতের গল্প — যা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে মাতিয়েছে সারা বিশ্বকে। বলা হচ্ছে বাঙালির শত শত বছরের ঐতিহ্য জামদানি শাড়ির কথা।

একসময় বাঙালি নারীর প্রধান পোশাক ছিল শাড়ি। সময়ের সাথে সাথে নারীদের ফ্যাশনে পরিবর্তন এলেও মলিন হয়নি জামদানির জৌলুস। দেশে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি তৈরি হলেও ডিজাইন, নান্দনিকতা এবং আভিজাত্যের বিচারে শীর্ষে থাকবে জামদানি।

আর এই ঐতিহ্যের উপর ভর করেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে 'ডেমরা বাজার জামদানি হাট'। রাজধানীর অদূরে ডেমরা থানায় অবস্থিত, প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই হাট দেশের সবচেয়ে প্রাচীন জামদানির হাট। ডেমরা চৌরাস্তা থেকে উত্তর দিকে লতিফ বাওয়ানি জুট মিল সড়ক ধরে এগোলেই ডেমরা বাজার। এখানেই বালু নদের পারে গড়ে উঠেছে ডেমরা বাজার জামদানি হাট।

চালাঘর উঠানোর আগে এখানেই বসতো ডেমরা বাজার জামদানি হাট।

হাট থেকে জামদানি কিনতে চাইলে আপনাকে সেখানে হাজির হতে হবে কাকডাকা ভোরে। কারণ প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ৩টা থেকে পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত থাকে এই হাট। রাতে হাট শুরু হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা; যাতে তারা সকাল সকাল হাট শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারেন।

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন জামদানির হাট হলেও ডেমরা বাজার জামদানি হাটের আয়তন খুব বড় নয়। একসময় এই হাট বসতো ডেমরা বাজারের ঠিক মাঝখানে। হাটে ক্রেতার সংখ্যা বেশি হলে তা ডেমরা মধ্য বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো। কিন্তু রোদ-বৃষ্টিতে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে ১০-১৫ বছর হলো এখানে চালাঘর উঠিয়ে দিয়েছে সরকার। বর্তমানে সেখানেই জড়ো হন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

হাটের পঞ্চপাণ্ডব ও তাঁতিরা

ডেমরা বাজার জামদানি হাটে নিয়মিত বসেন পাঁচজন ব্যবসায়ী। এরা হলেন চাঁদ জামদানি হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহেদ, নকশি জামদানির মো. মাসুম মিয়া, ময়নামতি জামদানি হাউজের আবদুল জলিল, ঢাকা জামদানি শাড়ি ঘরের মো. ইউসুফ মিয়া এবং ডেমরা তাঁত জামদানির আবদুল করিম। এদের প্রত্যেকেই হাটে 'ভিটি' ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। মো. শাহেদ জানান, দুই খাম (খুঁটি) মিলিয়ে এক ভিটি হয়; প্রতি হাটে ভিটি ভাড়া হিসেবে ইজারাদারকে দিতে হয় ৪০০ টাকা।

হাটে শুধু ৫ জন ব্যবসায়ীই কেন বসেন, এই প্রশ্নের জবাবে ডেমরা তাঁত জামদানির অংশীদার আবদুর রহিম বলেন, "এখানে আরও অনেকে বসার সুযোগ আছে, ভিটি ভাড়া নিয়ে চাইলে বসতে পারে। কিন্তু জামদানির ব্যবসা চালাতে হলে অনেক অভিজ্ঞতা লাগে, সবাই এটা পারে না। আর জামদানি তৈরির কেন্দ্র ডেমরা থেকে সরে এখন নারায়ণগঞ্জের দিকে চলে গেছে, এটাও একটা কারণ।"

দোকানমালিক পঞ্চপাণ্ডব ছাড়াও হাটে নিজেদের বোনা জামদানি নিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁতিরা। ভোর না হতেই নিজ নিজ এলাকা থেকে রিকশা-ভ্যানে করে কাপড়ের গাঁট নিয়ে হাজির হন তারা। কিন্তু হাটে বসার জন্য তাঁতিদের কোনো খাজনা বা ভাড়া দিতে হয় না।

ছবি: শাটারস্টক

শীতলক্ষ্যা তীরের নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও উপজেলা বাংলাদেশে জামদানি শিল্পের প্রধান কেন্দ্র। তাই ডেমরায় জামদানি তৈরি না হলেও পার্শ্ববর্তী নোয়াপাড়া, রূপগঞ্জের রূপসী, মৈকুলী, খাদুন, পবনকুল, কাজীপাড়া, মোগরাকুল, সোনারগাঁ এবং আড়াইহাজারের তাঁতিদের তৈরি জামদানি সংগ্রহ করতে এই হাটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে অনলাইনে জামদানি কেনাবেচার ট্রেন্ড শুরু হওয়ায় প্রচুর অনলাইন ব্যবসায়ী এখান থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামে জামদানি সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ঢাকা থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় ডেমরা জামদানি হাট হয়ে উঠেছে তাদের প্রধান টার্গেট।

জামদানির সুতা ও নকশা

জামদানি শাড়ির আসল রহস্য এর নকশা ও সুতার ধরনে। ডেমরা বাজার জামদানি হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, জামদানি মূলত দুই ধরনের হয়- মেশিন জামদানি ও তাঁত জামদানি। মেশিন জামদানির শাড়িগুলো এক প্রকার যান্ত্রিক মেশিনে একজন বসেই তৈরি করা যায় এবং সময়ও কম লাগে। তাই মেশিন জামদানির দাম কম থাকে। সাধারণত ৯০০-১৪০০ টাকার মধ্যে মেশিন জামদানি পাওয়া যাবে এই হাটে। অন্যদিকে তাঁতের জামদানি তৈরি করতে শাড়ির দুই পাড়ে দুজন লোক বসতে হয়। সপ্তাহভর কিংবা ডিজাইনভেদে কয়েক মাসও কাজ করেন তারা একেকটি জামদানি তৈরি করতে। ফলে তাঁতের জামদানির দাম অনেক বেশি এবং এগুলো টেকসই হয়।

ছবি: টিবিএস

সুতার ধরনেও আছে পার্থক্য। বর্তমানে সুতি, হাফসিল্ক, রেশম এবং সুতি ও হাফসিল্ক মিক্সড শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। চাঁদ জামদানি হাউজের মালিক মো. শাহেদ বলেন, "মেশিন জামদানিতে নাইলন সুতা বেশি দেয়া হয়, তাই কিছুদিন পরেই শাড়ি ফেঁসে যায়। কিন্তু তাঁত জামদানিতে সেটা হয় না।"

জামদানির দাম ও মান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে সুতার কাউন্ট। ব্যবসায়ীরা জানান, সুতার কাউন্ট যত বেশি হবে, শাড়ি তত ওজনে হালকা হবে এবং কাউন্ট কম হলে শাড়ি ভারি হয়ে যায়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৮৪-১০০ কাউন্ট জামদানি পাওয়া যায়। কিন্তু ১০০ কাউন্টের সুতা দেশে সহজলভ্য নয় এবং তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই সবচেয়ে দামি শাড়িগুলো বেশিরভাগই ৮৪ কাউন্টের হয়ে থাকে।

জামদানির দাম কেন বেশি?

এবার দামের প্রসঙ্গে আসা যাক। সুতার কাউন্ট, তাঁতির মজুরি, শাড়ির পাড় ও জমিনের নকশা, হাফবডি কাজ বা ফুল বডি কাজ, কাজের ঘনত্ব ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে শাড়ির দাম নির্ধারণ করা হয়। সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকার শাড়িও পাওয়া যাবে ডেমরা বাজার জামদানি হাটে।

তানা (টেক্সটাইলের ভাষায় 'বেইজ', যা তাতে লম্বালম্বিভাবে যায়) এবং বাইন (যা আড়াআড়িভাবে যায়); এই দুই ধরনের সুতা তাঁতে সেট করা হয়। ডেমরা তাঁত জামদানি ঘরের আবদুর রহিম সাগর বলেন, "সুতার দাম আসলে ওঠানামা করে। মোটামুটি সব শাড়িতেই ৬০০-৭০০ টাকার বাইন সুতা লাগে। ৮৪ কাউন্টের একটা শাড়িতে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকার বাইন সুতা লাগে। আর ৪টা শাড়িতে তানা সুতা লাগে প্রায় ১০০০ টাকার মতো। দেখা গেছে ৮০ হাজার টাকার একটা শাড়িতে সুতার খরচ পড়ছে ২০০০-৩০০০ টাকা।"

জামদানির দাম কেন অন্যান্য শাড়ির চাইতে বেশি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে তাঁতির পারিশ্রমিকই প্রধান। সপ্তাহে কাপড় কাটে একটা করে, দুজন তাঁতিকে মজুরি দিতে হয় দিনপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা; অর্থাৎ এক সপ্তাহে ৫০০০-৬০০০ টাকা। ৮৪ কাউন্টের একেবারে হালকা কাজের একটি জামদানি তৈরি করতেও ন্যুনতম ১৫-২০ দিন সময় লাগে। জানা যায়, যেসব তাঁতি ৮৪ কাউন্টের শাড়ি বোনেন, তারা কমদামি শাড়ি বোনেন না। অনেক সময় শাড়ির নকশা এতটাই সূক্ষ্ম হয় যে একদিনে এক হাত শাড়িও বোনা যায় না। তরুণ কারিগররা এতে ধৈর্য হারিয়ে ফেলতে পারে, তাই শুধুমাত্র অভিজ্ঞ তাঁতিরাই দামি শাড়িগুলো বোনেন।

ছবি: টিবিএস

এছাড়া ডেমরা হাটে পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙের জামদানি থ্রি-পিস এবং ওয়ান পিস। ওয়ান পিসগুলোর শুধু গলায় কাজ থাকে, তাই চাইলে এগুলো দিয়ে পাঞ্জাবিও বানানো যাবে। হাটে থ্রি-পিসের দাম শুরু ১০৫০ টাকা থেকে এবং ওয়ান পিস পাওয়া যাবে ৫০০-১৩০০ টাকার মধ্যে। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে প্রথমবারের মতো ডেমরা হাটে শাড়ি কিনতে এসেছিলেন মিরাত। তিনি বলেন, "আমি আজকে হাফবডি কাজের দুটি শাড়ি কিনেছি ১০০০ টাকা করে। এগুলো আগে অনলাইনে কিনেছিলাম ১৬০০ টাকা করে। অনলাইন পেজগুলো এখান থেকে শাড়ি নিয়ে প্রচুর লাভ করে। আবার এখানে ব্যাগে করে যেসব তাঁতিরা শাড়ি এনেছেন, দোকানের চাইতে তাদের কাছে আরও কম দামে শাড়ি পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে এখানে এসে আরও কেনাকাটা করার ইচ্ছা আছে।"

হাটের লেনদেন ও ব্যবসায়ের হাল-হকিকত

ঐতিহ্যবাহী ডেমরা বাজার জামদানি হাটের মাসিক লেনদেনের পরিমাণ কখনো কখনো ২-৩ কোটি টাকার উপরে। লকডাউন দেওয়ার আগে সাধারণ বাজারে প্রতি হাটে ১৫-২০ লাখ টাকা থেকে ধরে ৫০-৬০ লাখ টাকার বিক্রি হতো বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বিক্রেতাদের ভাষ্যে, বাজার বুঝে বেচাকেনা ওঠানামা করে। ঈদ ও পূজায় জামদানির শাড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এদের প্রায় সবাই জানান, বর্তমানে জামদানির বাজার বেশ ভালো। কারণ করোনা মহামারির সময় অনেক তাঁতি জামদানি তৈরির কাজ ছেড়ে অন্য শ্রমে চলে গেছেন। কেউ কেউ মুদি দোকান, গার্মেন্টসে কাজ বা রিকশা চালানোর মতো পেশাও বেছে নিয়েছেন। কিন্তু জামদানির প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা কমেনি। চাহিদা বেশি এবং শাড়ির যোগান কম হওয়ায় শাড়ির দামও তরতর করে বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, করোনা মহামারির আগপর্যন্ত প্রচুর ভারতীয় পাইকার এই হাট থেকে জামদানি সংগ্রহ করতেন।

ছবি: টিবিএস

পড়ালেখার পাশাপাশি জামদানি ব্যবসায়ে যুক্ত আছেন ডেমরা তাঁত জামদানি হাউজের আবদুর রহিম। তিনি জানান, প্রতি সপ্তাহে ২০০০-৪০০০ পিস শাড়ি বিক্রি করেন তিনি। ২০২১ সালের পূজায় প্রচুর শাড়ি ভারতে সরবরাহ করেছেন এবং পূজায় তার সর্বনিম্ন বিক্রি ছিল ৭০-৮০ লাখ টাকা। রোজার ঈদে এই বিক্রির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

শাড়ি নিয়ে হাটে এসেছিলেন ডেমরার তাঁতি মো. জামান মিয়া। জানালেন, নিজস্ব তাঁত থাকলেও তিনি নিজে শাড়ি বোনেন না, অন্য তাঁতিদের দিয়ে বোনান। সর্বনিম্ন ১২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৫০০ বা ৪০০০ টাকার শাড়ি পাওয়া যাবে তার কাছে। তিনি বলেন, "আমি তাঁতিদের ম্যাচিং সুতা ও নকশার জন্য জরি সুতা কিনে দেই। একেক বান্ডিল সুতার দাম ১০০-১২০ টাকা, ১২০০ টাকার শাড়িতে প্রতি শাড়ির জন্য ২/৩ টি বান্ডিল লাগে। ৩৫০০ টাকার শাড়িতে আমার মজুরি দিতে হয় কমপক্ষে ১৫০০ টাকা, সেই সাথে সুতার দাম তো আছেই। এসব শাড়ি ২০০-৩০০ টাকা লাভে বিক্রি করে দেই।"

ছবি: মুমিত এম/টিবিএস

হাটে দালাল বা ফড়িয়ার উৎপাত আছে কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, তিনি সরাসরি ক্রেতার কাছেই শাড়ি বিক্রি করেন। আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, "ক্রেতা নিজে যদি দালাল বা এ ধরনের কাউকে নিয়ে আসে তাহলে তো কিছু করার নাই। কিন্তু এমনিতে আমি কোনো দালালের মাধ্যমে শাড়ি বিক্রি করি না।"

তবে হাটের বেচাকেনা ভালো থাকলেও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে মানুষ ভিড়ের মধ্যে বেরোতে ভয় পায়। তাই বর্তমানে ডেমরা হাটে জনসমাগম কিছুটা কম।

অনলাইনের আশীর্বাদ

গত কয়েক বছর ধরে এফ-কমার্সের ব্যাপক প্রসার ঘটায় অনলাইনে জামদানি বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে, যা এই হাটের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ। বর্তমানে হাটের ক্রেতাদের একটি বড় অংশ হলেন বিভিন্ন অনলাইন পেজের মালিকেরা। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিকে জামদানির জন্য অফসিজন ধরা হলেও, অনলাইন ব্যবসার কারণে এখন শাড়ির চাহিদা বিগত ১০-১৫ বছরের চাইতে বেশি।

একাধিক বিক্রেতা জানিয়েছেন, ডেমরা হাট থেকে জামদানি শাড়ি-থ্রিপিস নিয়ে সেগুলো অনলাইনে দ্বিগুণ লাভে বিক্রি করেন পেজ মালিকেরা। তবুও অনলাইন ব্যবসাকে তাদের সমর্থন দেওয়ার পেছনে কারণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ময়নামতি জামদানি হাউজের কর্মচারী ফারুক বলেন, "এখন অনলাইনের কারণেই আমাদের বিক্রি বাড়ছে। তারা লাভ করুক, কিন্তু শাড়ি তো আমাদের কাছ থেকেই নিবে।"

আরেকজন তাঁতি বলেন, "অনলাইনের লোকেরা যদি মাসে ১০টা শাড়ি বিক্রি করে ৫০ হাজার লাভ করে, তাহলে হাট থেকে দোকানিরা মাসে লাভ করে কমপক্ষে দেড়-দুই লাখ টাকা।"

হাটে ক্রেতাদের জামদানি শাড়ি দেখাচ্ছেন দোকানি। ছবি: টিবিএস

হাটে শাড়ির ব্যবসা ছাড়াও ২০-২৫টি অনলাইন পেজকে শাড়ি সরবরাহ করে ডেমরা তাঁত জামদানি। দোকানের অংশীদার আবদুর রহিম বলেন, "এখন বিদেশে জামদানির প্রচুর চাহিদা। আমার কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডনে পার্টি আছে; আর ভারতে তো আছেই। আমার দোকানে একটা পেজেরই মাসিক বিল হয় সর্বনিম্ন ৩০-৪৫ লাখ টাকা। গত পূজায় একটা পেজেই শাড়ি সাপ্লাই দিয়েছি ন্যুনতম ১০০০ পিস।"

জানা যায়, ৮৪ কাউন্টের দামি শাড়িগুলোর চাহিদা বিদেশে সবচেয়ে বেশি। কারণ বিদেশে শাড়ি পাঠাতে ওজন অনুযায়ী আলাদা চার্জ দিতে হয়। দামি শাড়িগুলো ওজনে হালকা বলে সেগুলোর চার্জ লাগে কম।

ডেমরা হাটে শাড়ি কিনতে এসেছিলেন অনলাইন পেজ জামদানি বিডি ডটকমের স্বত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, "শাড়ির ছবি তুলতে, পেজ বুস্ট দিতে বা শোরুমের ভাড়ার জন্য আমাদের খরচ হয়। তাই শাড়িপ্রতি লাভ করি। ৮০-১০০ কাউন্টের শাড়িতে ৩-৪ হাজার টাকা লাভ করে ছেড়ে দেই।"

হাটের ইজারা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

ডেমরা বাজার জামদানি হাটের ইজারা ডাকা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে। এক বছর মেয়াদি এই ইজারা দেওয়া হয়। হাটের বর্তমান ইজারাদার মামুনুর রশীদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হাটের ইজারা এনেছেন মূলত স্থানীয় কাউন্সিলর, এরপর কাউন্সিলর আমাকে খাজনা তোলার দায়িত্ব দিয়েছেন। হাটে যারাই শাড়ি কিনতে আসেন, শাড়িপ্রতি ২০ টাকা করে খাজনা দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে। হাটের ইজারা আলাদা ভাবে ডাকা হয় না; ডেমরা বাজারের সাথে একসঙ্গে যুক্ত হয়েই হাটের কাজকর্ম।"

১৯৭২ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর হাটের ইজারাদারের দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক ইজারাদার মো. আবুল হাশেম। তিনি জানান, হাটে বিক্রেতাদের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কোনো সমস্যা হলে তা মীমাংসা করার দায়িত্ব পালন করেন ইজারাদার। তবে বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়লে তা মীমাংসা করার দায়িত্ব বাজার কমিটির।

ডেমরার কাছাকাছিই আছে রূপগঞ্জের বিসিক শিল্প এলাকার নোয়াপাড়া জামদানি হাট। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাটে রূপগঞ্জ অঞ্চলের তাঁতিরা  তাদের পসরা সাজান। নোয়াপাড়া হাটের সাথে কোনো ডেমরা হাটের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে কিনা জানতে চাইলে বর্তমান ইজারাদার বলেন, "নোয়াপাড়ায় হাট হওয়ায় ডেমরা বাজারে তাঁতির সংখ্যা কিছুটা তো কমেছেই। তারা এখন নিজ এলাকার হাটেই বসে অনেকে। কিন্তু ডেমরা জামদানি হাটকে টিকিয়ে রাখতে আমরা মাঝেমধ্যে ঐ এলাকার তাঁতিদের ফোন করে এবং যাতায়াত ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসি, তাদেরকে বলি এখানে বসতে।"

জামদানি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতখানি ভূমিকা রাখছে তা নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন। ২০১৩ ইউনেসকো জামদানি বয়নশিল্পকে 'ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি' বা 'বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য' হিসেবে ঘোষণা করেছে। এছাড়া ২০১৬ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কর্তৃক জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন অ্যাক্ট) আইনের আওতায় জামদানি বাংলাদেশের, বিশেষ করে ঢাকা অঞ্চলের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই দুটি অর্জন থেকেই বোঝা যায় জামদানির কদর কতটা উঁচুতে।

কিন্তু দেশের সবচেয়ে প্রাচীন জামদানি হাট হলেও ডেমরা বাজার জামদানি হাট পাচ্ছে না উল্লেখযোগ্য কোনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। ডেমরা চৌরাস্তা থেকে হাটে আসার রাস্তাটির বেহাল দশা ক্রেতাদের দুর্ভোগের কারণ। এমনকি করোনাকালে ১৮ মাস হাট বন্ধ থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি কোনো সহায়তা।

ছবি: টিবিএস

তাছাড়া ডেমরা বাজার হাটে নেই উল্লেখযোগ্য কোনো খাবারের হোটেল বা থাকার ব্যবস্থা। তবে হাটে এলে মুসলিম ব্যাপারীর বিখ্যাত মাঠা একটু স্বস্তি দিতে পারে ক্লান্ত ক্রেতাকে।

ক্রেতারা মনে করেন, সরকারিভাবে এই এলাকাটিকে আরও উন্নত করে তুললে তা দেশের মানুষের কাছে আরও পরিচিতি পাবে এবং জামদানি শিল্পের প্রসার ঘটবে।

Related Topics

টপ নিউজ

ডেমরা / জামদানি / জামদানি হাট / প্রাচীন

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘ভীতিকর গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়ে যুদ্ধবিরতির জন্য মোদিকে ফোন দেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট
  • বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, পানি সংরক্ষণ শুরু
  • ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মেরুদণ্ড এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাকিস্তানি ভাষ্য
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হলে আ.লীগের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার
  • ব্যাংকের তহবিল প্রতারণায় এমডি-চেয়ারম্যানও দায়ী হবেন, অধ্যাদেশ জারি
  • সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নে বিপুল ব্যয় চীনের; ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রথম বড় পরীক্ষা

Related News

  • প্রাচীনতম সেলুন ট্রুফিট এন্ড হিল: যেভাবে বাকিংহাম প্যালেস থেকে গুলশানে
  • ঘর তার দুর্লভ সব সুরমাদানির ভাঁড়ার
  • বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পুরনো সংবাদপত্রের প্রিন্ট সংস্করণ
  • ডেমরায় কিশোরীকে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
  • হাজার বছর পুরনো টি হর্স রোডের খোঁজে

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

‘ভীতিকর গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়ে যুদ্ধবিরতির জন্য মোদিকে ফোন দেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

2
আন্তর্জাতিক

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, পানি সংরক্ষণ শুরু

3
আন্তর্জাতিক

ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মেরুদণ্ড এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের পাকিস্তানি ভাষ্য

4
বাংলাদেশ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হলে আ.লীগের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকার

5
অর্থনীতি

ব্যাংকের তহবিল প্রতারণায় এমডি-চেয়ারম্যানও দায়ী হবেন, অধ্যাদেশ জারি

6
আন্তর্জাতিক

সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নে বিপুল ব্যয় চীনের; ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রথম বড় পরীক্ষা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net