উত্তরাধিকারীদের হাতে রিলায়েন্সের নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছেন এশিয়ার সেরা ধনী

এশিয়ার সব সেরা ধনী তিনি। ব্যবসায়ীক সাম্রাজ্যের মূল্য ২১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। কথা হচ্ছে, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও এমডি মুকেশ আম্বানির প্রসঙ্গে। এবার সুবিশাল শিল্পগোষ্ঠীর ভার তিন সন্তানের হাতে তুলে দিতে চাইছেন। তাদের হাতেই থাকবে আগামীর সমৃদ্ধির ভার।
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ধীরুভাই আম্বানির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রিলায়েন্স কর্মীদের একটি অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব পরিবর্তনের এ ইঙ্গিত দেন মুকেশ।
খুচরা পণ্য বিক্রি থেকে পেট্রোলিয়াম পরিশোধন- বহু ধরনের ব্যবসায় জড়িত রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠী।
মুকেশ আম্বানির তিন সন্তান—আকাশ, ইশা ও অনন্ত। আকাশ ও ইশা যমজ, তাদের বয়স ৩০। আর সব ছোট অনন্তের বয়স ২৬।
মঙ্গলবার মুকেশ নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের আসার কথা জানিয়ে বলেছেন, "আমার প্রজন্মের জ্যেষ্ঠদের হাত থেকে পরের প্রজন্মের তরুণদের হাতে এই গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বভার তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা আমি আরও গতিশীল করতে চাই।"
নিজ সন্তানদের মধ্যে মুকেশ তার বাবা ধীরুভাই আম্বানির মতোই মেধা ও সম্ভাবনা দেখছেন জানিয়ে বলেন, এখন থেকে তারা ব্যবসার আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেবে।
তিনি বলেন, "এই প্রতিষ্ঠানের যারা নেতা নতুন প্রজন্ম যেন তাদেরকে ছাড়িয়ে যায় আমাদের এমন সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। আকাশ, ইশা ও অনন্তের মতো নতুন প্রজন্মের নেতারা যে রিলায়েন্সকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে- সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।"

ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, মুকেশ আম্বানির মোট সম্পদের পরিমাণ এখন প্রায় ৯১ বিলিয়ন ডলার। অনুষ্ঠানে দেওয়া ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি নিজ উত্তরাধিকারীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।
তবে ব্যবসা পরিচালনা ভার ও সম্পদের অধিকার বন্টনে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছেন বলে এর আগে জানিয়েছিলেন মুকেশ আম্বানি।
ওয়ালমার্ট ইঙ্কের সত্ত্বাধিকারী ওয়ালটন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যেভাবে গ্রুপটির সম্পদ বন্টন হয়েছে তিনিও এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছেন বলে গেল নভেম্বরে ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
অতি-ধনী অনেক পরিবারে উত্তরাধিকার নিয়ে যে বিভাজন ও বিচ্ছেদ দেখা দেয়, সেটাই এড়াতে চান মুকেশ। অতীতে নিজের ভাই অনিল আম্বানির সাথেও তার এনিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। সন্তানদের ক্ষেত্রে এমনটা না হোক- সেটাই তার সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। রিলায়েন্সে নেতৃত্বের পরিবর্তন হবে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বড় সম্পদ হস্তান্তর।
নিজ ইচ্ছের কথা বলে তুলে ৬৪ বছরের মুকেশ আম্বানি বলেছেন, "এখন রিলায়েন্সকে অত্যন্ত দক্ষ, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও সম্ভাবনাময় তরুণ নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়া উচিত। আমিসহ আমাদের জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের উচিত তাদের পরামর্শ দেওয়া, নেতৃত্বের জন্য তৈরি করে তোলা, উৎসাহিত করা এবং তাদের ক্ষমতায়ন করা।"
২০০২ সালে ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে দুই ভাই অনিল ও মুকেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। এর অন্যতম কারণ ছিল ধীরুভাই কোনো উইল রেখে যাননি। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব যখন চরম পর্যায়ে, তখন ২০০৫ সালে তাদের মা কোকিলাবেন আম্বানির হস্তক্ষেপে এক মধ্যস্ততা হয়, যার ভিত্তিতে রিলায়েন্সের ব্যবসাগুলো দুই ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।
