খালেদা জিয়া: আপসহীন নেত্রীর অনন্ত যাত্রা
সামনের দিনগুলোতে আমরা খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন, তাঁর ত্রুটি-বিচ্যুতি, তাঁর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে অনেক আলোচনাই দেখব। কিন্তু আজ বাংলাদেশ শোকে থমকে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে এক অকাট্য সত্য। আর সেটা হলো, হাজারো উত্থান-পতন ও অসম্পূর্ণতা ছাপিয়ে, গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করা একটি মানুষের জীবনাবসান ঘটেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার খুব কম নেতাই এমন গভীর আনুগত্য অর্জন করেছেন। এমন গভীর রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। সর্বোপরি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় রাজনীতিতে তার প্রবল উপস্থিতি বজায় রেখেছেন।
খালেদা জিয়া অনেক দিক থেকেই রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে একটি অপ্রত্যাশিত চরিত্র। তিনি তাঁর স্বামী রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে প্রধানতম চরিত্র হিসেবে যবনিকা টানলেন তিনি।
খালেদা জিয়া এমন এক জীবনের গল্প রেখে গেছেন, যে গল্প বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। ভাঙা-গড়া, আশা ও হতাশা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সেই গল্প। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই ও জনগণের অধিকার রক্ষার নিরন্তর সংগ্রামের দীর্ঘ বয়ানের এই গল্প।
তিনি কেবল রাজনীতিবিদ ছিলেন না, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তিতে রয়ে গেছেন তিনি। যখন পিছিয়ে যাওয়াটাই সহজ, তখন তিনি অটল থাকার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি এমন একজন নারী যিনি ক্ষমতার চাপে বা কোণঠাসা অবস্থাতেও কখনো নতিস্বীকার করেননি।
সর্বোপরি তিনি খুব সহজ একটি নীতির ভিত্তিতে জীবনযাপন করেছেন। ব্যক্তিগত পরিণতি যাই হোক না কেন, একজন মানুষকে তার কর্তব্য পালন করতে হবে— যতই বাধা-বিপত্তি, বিপদ-আপদ, চাপ থাকুক না কেন।
গৃহকোণ থেকে জাতীয় নেতৃত্বে পদার্পণ
খালেদা জিয়া ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির দিনাজপুরে ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু থেকে যথেষ্ট দূরে তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে। ১৯৬০ সালে তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন, অবশ্য তখন তিনি জানতেন না যে এই মানুষটি পরবর্তী সময়ে বহুবার বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেবেন। পরবর্তী দুই দশক তিনি ব্যক্তিগত পরিসরেই থেকেছেন—দুই ছেলেকে লালন-পালন করেছেন, স্বামী রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাঁকে সঙ্গ দিয়েছেন এবং জনসমক্ষে খুব কমই উপস্থিত হয়েছেন।
তবে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণ করলে তার ভাগ্যের মোড় ঘুরে যায়। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তখন গভীর অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। সংকট ও সম্ভাবনা দুই-ই উপলব্ধি করে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা শোকসন্তপ্ত তরুণী বিধবাকে নেতৃত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রথমে তিনি রাজি হননি। রাজনীতি তাঁর বেছে নেওয়া পথ ছিল না। কিন্তু ইতিহাস ও পরিস্থিতির চাপ উপেক্ষা করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ১৯৮৩ সালে তিনি দলের ভাইস-চেয়ারপারসন হন; আর ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ ঘটেছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে অন্ধকারতম একটি সময়ে। তখন চলছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনকাল। খালেদা জিয়া অল্প সময়ের মধ্যেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বদের একজন হিসেবে আবির্ভূত হন। তাঁর সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত হতো। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে তিনি সাতবার গ্রেপ্তার হন যা তাঁর প্রতি জনসমর্থনকে আরও জোরদার করেছিল এবং তাঁর ক্রমাগত সুদৃঢ় বক্তব্য প্রতিরোধের রাজনীতিকে একটি সুস্পষ্ট বয়ান দিতে সহায়তা করে।
১৯৮৩ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে যে সাতদলীয় জোট গঠিত হয়, তার নেপথ্য কারিগর ছিলেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৬ সালের অবৈধ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও খালেদা জিয়া রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। সেই থেকে তিনি হলেন 'আপসহীন নেত্রী'।
শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে প্রভাব বিস্তারকারী দুই নারী নেত্রীর একজন। তবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যে যুগল নেতৃত্ব একসঙ্গে লড়াই করেছিল, অল্প সময়ের মধ্যেই সেই যাত্রা রূপ নেয় তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
১৯৯১ সালে এরশাদ শাসনের পতন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় পর প্রথম সত্যিকারের প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অনেকের প্রত্যাশার বাইরে, মূলত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তার জোরেই সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয় বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বে দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হন।
তাঁর প্রথম মেয়াদ (১৯৯১-১৯৯৬) ব্যাপকভাবে তাঁর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি শাসন থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় উত্তরণের নেতৃত্ব দেন, গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধার করেন এবং বাজার উদারীকরণ ও বেসরকারি খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের সূচনা করেন।
তাঁর সরকার গ্রামে বিদ্যুতায়নের বিস্তার ঘটায়, শিক্ষার প্রসার ঘটায়। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষায় জোর দেয়। দেশের নতুন উদীয়মান রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে, যা পরবর্তীকালে অর্থনীতির মূল স্তম্ভে পরিণত হয় তার ভিত্তি স্থাপন করে। আন্তর্জাতিকভাবে তিনি বাংলাদেশকে একটি দায়িত্বশীল আঞ্চলিক ক্রীড়নক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তাঁর প্রশাসন একাধিক সংকটের মুখোমুখি হয়, যার মধ্যে ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক সংঘাত। বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেওয়ার কারণে দেশব্যাপী আন্দোলনের সূত্রপাত হয় এবং ১৯৯৫ সালে সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সব প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের কারণে ব্যাপকভাবে প্রহসনমূলক বলে বিবেচিত হয়। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হওয়ার পর তিনি শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের মত দেশে এমন উদারতা আসলে কতটা বিরল তা পরবর্তীতে আমরা দেখেছি।
রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন এবং অশান্ত সময়
২০০১ সালে খালেদা জিয়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসেন এবং জামায়াতে ইসলামীসহ চারদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন। তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ চলাকালে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল অত্যন্ত বিভক্ত। দেশে উগ্রবাদের উত্থান হয়, দেশে অরাজকতা বেড়ে যায় এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমবর্ধমান সংঘাত জড়িয়ে পড়ে।
এই মেয়াদে তাঁর সরকার কয়েকটি বড় অবকাঠামোগত ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেয়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, রেমিট্যান্সের প্রবাহ ব্যাপকভাবে বাড়ে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।
রাস্তা, সেতু এবং টেলিযোগাযোগের সম্প্রসারণসহ প্রধান প্রকল্পগুলো গতি পায়। বৈশ্বিক মন্দার হাওয়া বাংলাদেশে এসে লাগলেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করে। তাঁর প্রশাসন প্রাথমিক শিক্ষা ও গ্রামীণ সেবার সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখে। তখন বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর একটি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
তাঁর বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, তিনি 'দায়মুক্তির সংস্কৃতি'কে প্রশ্রয় দিয়েছেন; আর সমর্থকদের দাবি ছিল, স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও বিদেশি প্রভাবের কারণে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্দশার বছরগুলো
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া এবং তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ আইনি লড়াই, নিষেধাজ্ঞা এবং রাজনৈতিক প্রান্তিকীকরণের চক্র।
তবুও তখনও বিএনপির নিজস্ব পরিচয় এবং বৃহত্তর গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল তাঁর অবস্থান। তিনি বারবার দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ছায়া শক্তিগুলোর সঙ্গে কোনো গোপন সমঝোতায়ও রাজি হননি।
২০০৯ সালের পরের বছরগুলো সম্ভবত তাঁর জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে প্রতি পদক্ষেপে অপমান করার বার বার চেষ্টা করা হয়। তাঁর সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ গুজব ছড়ানো হয়। তাঁকে জোর করে তাঁর স্বামীর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তাঁকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। খালেদা জিয়াকে কারাগারের এমন একটি সেলে রাখা হয় যার অবস্থা ছিল ভয়াবহ। তাঁর চিকিৎসা ব্যবস্থা ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়। কেবল জেলের ভেতর তাঁর মৃত্যু ঠেকাতে কোভিডের মহামারির সময় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়।
২০২১ সালে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার বিদেশে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। শেখ হাসিনা তখন উপহাস করে বলেন, 'আমি তাঁকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছি, চিকিৎসা অনুমতি দিয়েছি, তার আর কী প্রয়োজন?'
খালেদা জিয়া বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে। তিনি তা মেনে নিয়েছিলেন।
তিনি এক ছেলেকে হারিয়েছেন; অন্য ছেলে বিদেশে নির্বাসিত। চাইলে তিনি আলোচনার পথ বেছে নিতে পারতেন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইতে পারতেন, সেইফ প্যাসেজ নিতে পারতেন, অথবা দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি কঠিন পথটিই বেছে নিয়েছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন তাঁর জীবন বাংলাদেশের জন্য।
রোগশয্যায় থেকেও তিনি হাজার হাজার মানুষের ভরসা প্রতীক হয়ে রইলেন, যারা বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ তাঁর দৃঢ়তার মাঝে প্রতিফলিত হয়।
অপরিহার্য এক চরিত্র
দেশের জন্য খালেদা জিয়ার দীর্ঘ সংগ্রামকে পাশ কাটিয়ে তাঁর জীবন দর্শন বোঝা সম্ভব না। কঠোর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের সময়ে তিনি ছিলেন জাতীয় সার্বভৌমত্বের অবিচল রক্ষাকর্তা, একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিরোধ। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে আকার দেবার ক্ষেত্রে সমসাময়িক যেকোনো নেতার চেয়ে তাঁর অবদান বেশি।
খালেদা জিয়ার কিংবদন্তীর সঙ্গে বাংলাদেশের নারীর শিক্ষার অগ্রগতিও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ১৯৯০-এর দশকে তার প্রথম প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর সরকার কিছু প্রকল্প চালু ও সম্প্রসারণ করে যা মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছিল। এর মধ্যে ছিল মহিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহায়তা কর্মসূচি (এফএসএসএপি), গ্রামীণ মেয়েদের জন্য স্টাইপেন্ড, এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ছাড়।
এই উদ্যোগগুলো শুধু ঝরে পড়ার হার কমায়নি, বরং দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী সামাজিক মানসিকতাকেও পরিবর্তন করেছে, দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করেছে। তাঁর মেয়াদকালের শেষের দিকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে নারী মাধ্যমিক শিক্ষায় অন্যতম উল্লেখযোগ্য রূপান্তর অর্জন করেছে, যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছেও স্বীকৃত।
তিনি ছিলেন এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক, দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার রক্ষক এবং দুইবার গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরের কারিগর। শেখ হাসিনার শাসনের সময়ও তাকে নিপীড়নের মুখে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন কেন তাকে আপসহীন নেত্রী বলা হয়।
খালেদা জিয়া একটি জটিল, বিতর্কিত, কিন্তু প্রভাবশালী এক কিংবদন্তী রেখে গেছেন। আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠারও আগে তিনি লিঙ্গ অসমতার বাধাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি তার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বিরোধী শক্তির একটি ভিত্তি হয়ে উঠেছিলেন, যা বিচ্ছিন্নতা এবং নিপীড়নের মুখে থেকেও মূলত তার প্রতীকী গুরুত্বের কারণে টিকে ছিল।
তার মৃত্যুর শূন্যতা শুধু তার দলের মধ্যে নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক কল্পনাশক্তির বিস্তৃত ক্ষেত্রেও অনুভূত হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ধৈর্যের প্রতীক। তার যাত্রা বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে থাকবেই।
এখন তাঁর কাজ শেষ, লড়াই সমাপ্ত। তিনি যাত্রা করলেন অনন্তের পথে। আমরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
