জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটের আসন সমঝোতায় বিলম্ব, এবি পার্টি নিয়ে ধোঁয়াশা
জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ১০ দলীয় জোটের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হতে বিলম্ব হচ্ছে। জোটের আসন বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। নতুন দুটি দল জোটে যুক্ত হওয়ায় আসন পুনর্বিন্যাসে এই বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। এছাড়া জোটের শরিক দল 'আমার বাংলাদেশ পার্টি' (এবি পার্টি) শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় থাকছে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
জোট সূত্রে জানা গেছে, পুরনো ৮টি দল জনপ্রিয়তা ও বাস্তবতার নিরিখে আলোচনার মাধ্যমে আসন বণ্টন করতে চাইলেও নতুন যুক্ত হওয়া দলগুলো সংখ্যার ভিত্তিতে সমঝোতার আলোচনা করছে।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আজকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সারা দেশের প্রাথমিক চিত্র সম্পর্কে আমরা একটি ধারণা পাব। এরপর চূড়ান্ত সমঝোতা হবে। সেজন্য কিছুটা সময় লাগবে। আর এবি পার্টি আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও আজকের মধ্যেই জানানো যাবে।'
জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, 'আসন সমঝোতার প্রায় ৮০ শতাংশ চূড়ান্ত হয়ে আছে। ৮ দলের নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে নতুন দুটি দল আসায় আবারও আসন পুনর্বিন্যাস করতে হচ্ছে, যার কারণে কিছুটা বিলম্ব হলো।'
তিনি আরও জানান, আজ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন হওয়ায় প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত আছেন। সবাই ঢাকায় ফিরলে পুনরায় আলোচনা শুরু হবে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত হবে এবং সমঝোতার বাইরে থাকা প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে জোটের আরেক প্রধান শরিক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৩০০ আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ বলেন, 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ তিনশ আসনেই মনোনয়নপত্র জমা দেবে। তবে আসন সমঝোতার আলোচনা চলমান রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে একটি চমৎকার সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।'
১০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, জোটের নতুন দুই শরিক এনসিপি ৩০টি এবং এলডিপি ১০টি আসন দাবি করেছে। সে আলোকেই বর্তমানে আলোচনা চলছে। তবে এই ১০ দলের বাইরে নতুন করে আর কোনো দলের জোটে আসার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, এবি পার্টির অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি জানান, তারা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের শরিক এনসিপির সাথে সম্মিলিতভাবে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমরা জানি যে এবি পার্টি এই জোটেই থাকবে। তবে জোটের পক্ষ থেকে কেন বলা হয়েছে যে আর কোনো দল অন্তর্ভুক্ত হবে না, তা আমাদের জানা নেই।'
উল্লেখ্য, গত রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ১০ দলীয় জোটের ঘোষণা দেন। আগে থেকে ৮টি দল সাথে থাকলেও নতুন করে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি ও এনসিপি জোটে যুক্ত হয়। সে সময় জামায়াত আমির জানিয়েছিলেন, ৩০০ আসনের প্রার্থী নির্ধারণে দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তবে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক দল আগ্রহ দেখালেও তাদের এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন।
