নাইজেরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী হামলা’ চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে 'শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী হামলা' চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বৃহস্পতিবার রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র 'উগ্র ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদকে মাথাচাড়া দিতে দেবে না'।
তিনি আইএসকে 'সন্ত্রাসী আবর্জনা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, এই গোষ্ঠী মূলত নিরীহ খ্রিস্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করছে।
ট্রাম্পের দাবি, মার্কিন সামরিক বাহিনী 'একাধিক নিখুঁত হামলা' পরিচালনা করেছে।
পরে যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ড (আফ্রিকম) জানায়, বৃহস্পতিবারের এই হামলা নাইজেরিয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে সোকোতো রাজ্যে চালানো হয়েছে।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ মাইতামা তুগার বিবিসিকে বলেন, এটি ছিল 'সন্ত্রাসীদের' লক্ষ্য করে চালানো একটি 'যৌথ অভিযান', এবং এর সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের সম্পর্ক নেই।
ভবিষ্যতে আরও হামলা হতে পারে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তুগার বলেন, তা দুই দেশের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
এর আগে নভেম্বরে ট্রাম্প নাইজেরিয়ায় ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন।
সে সময় তিনি কোন হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করছেন, তা স্পষ্ট করেননি। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ডানপন্থী মহলে নাইজেরিয়ায় খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি 'নাইজেরিয়ান সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ'।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি 'মেরি ক্রিসমাস!' লিখেছেন।
তবে সহিংসতা পর্যবেক্ষণকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী জানিয়েছে, নাইজেরিয়ায় মুসলমানদের তুলনায় খ্রিস্টানদের বেশি হত্যা করা হচ্ছে—এমন কোনো প্রমাণ নেই। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় সমান অংশ মুসলমান ও খ্রিস্টান।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুর এক উপদেষ্টা ড্যানিয়েল বাওয়ালা এর আগে বিবিসিকে বলেন, জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান যৌথভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নাইজেরিয়া স্বাগত জানাবে, তবে দেশটি একটি 'সার্বভৌম' রাষ্ট্র।
ড্যানিয়েল বাওয়ালা আরও বলেন, জঙ্গিরা কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে না এবং তারা সব ধর্মের মানুষকে, এমনকি কোনো ধর্মের অনুসারী নন—এমন লোকদেরও হত্যা করেছে।
প্রেসিডেন্ট টিনুবু বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, দেশে ধর্মীয় সহনশীলতা রয়েছে এবং নিরাপত্তা সংকট সব ধর্ম ও অঞ্চলের মানুষের ওপরেই প্রভাব ফেলছে।
এর আগে ট্রাম্প নাইজেরিয়াকে 'কান্ট্রি অব পার্টিকুলার কনসার্ন' হিসেবে ঘোষণা করেন।
তিনি দাবি করেন, খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর জন্য সেখানে 'অস্তিত্বের হুমকি' রয়েছে এবং 'হাজার হাজার' মানুষ নিহত হয়েছে।
যদিও এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই শ্রেণিবিন্যাস ব্যবহার করে থাকে, যা নিষেধাজ্ঞার পথ খুলে দেয়।
এই ঘোষণার পর টিনুবু বলেন, সব ধর্মের জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করতে তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্সের মতো জিহাদি গোষ্ঠীগুলো এক দশকের বেশি সময় ধরে নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা বিশ্লেষণকারী সংস্থা অ্যাকলেডের তথ্য অনুযায়ী, এসব সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, তবে তাদের বেশিরভাগই মুসলমান।
মধ্য নাইজেরিয়ায়ও প্রায়ই সংঘর্ষ হয়, যেখানে প্রধানত মুসলমান পশুপালক ও কৃষিকাজে জড়িত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পানি ও চারণভূমি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এসব কৃষক গোষ্ঠীর অনেকেই খ্রিস্টান।
পাল্টাপাল্টি হামলার ধারাবাহিকতায় সেখানেও হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, তবে উভয় পক্ষই সহিংসতার জন্য দায়ী।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, খ্রিস্টানদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই।
এদিকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে 'ব্যাপক হামলা' চালিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) জানায়, যুদ্ধবিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার ও কামানের গোলাবর্ষণের মাধ্যমে মধ্য সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে ৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। এই অভিযানে জর্ডানের বিমানও অংশ নেয়।
