কাউন্টডাউন ১৬ ডিসেম্বর: বাংলাদেশ কি পারবে ৯০ শতাংশের ‘গ্রে ফোন’ বাজার বন্ধ করতে?
আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকর করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এতে দেশের সব মোবাইল হ্যান্ডসেট বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধনের আওতায় আসবে এবং পর্যায়ক্রমে সব অনিবন্ধিত বা আনঅফিসিয়াল (গ্রে) ডিভাইসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
কর ফাঁকি ও প্রতারণা ঠেকাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। তবে শিল্পখাতের ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর মত, দেশের মোবাইল ফোনের বড় একটি অংশই এই গ্রে বাজারের মাধ্যমে আসে। তাই এই বাজার হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হবে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বলছে, দেশে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ৬০ শতাংশের বেশি আনঅফিসিয়াল বা অননুমোদিত। তবে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর দাবি, প্রকৃত সংখ্যা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি—যা এ অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ 'গ্রে মার্কেট' হিসেবে বিবেচিত।
এ বিশাল বাজারের পেছনে মূল কারণ হলো করের ব্যাপক বৈষম্য। অনুমোদিত মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিতে মোট প্রায় ৫৭ শতাংশ কর দিতে হয়, আর স্থানীয় উৎপাদনে করের হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। এর বিপরীতে গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা কার্যত কোনো করই দেন না। ফলে তারা একই পণ্য প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে পারেন। তাই কম দামে ফোন কিনতে ক্রেতাদের বড় একটি অংশ স্বাভাবিকভাবেই এ বাজারের দিকে ঝোঁকে।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বিষয়টির বৈষম্য স্পষ্ট করে বলেন, "অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিতভাবে আমদানি করা ফোনের দাম আনঅফিসিয়াল সেটের দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই বৈষম্যের কারণেই গ্রে মার্কেট এত বড় হয়েছে, আর মানুষ স্বাভাবিকভাবেই আনঅফিসিয়াল ফোনের দিকে ঝুঁকছে।"
২০১৬ সালে সারাদেশে বাধ্যতামূলক সিম নিবন্ধন কার্যকর হওয়ার পর তৎকালীন সরকার হ্যান্ডসেট নিবন্ধন চালুরও কয়েকটি উদ্যোগ নেয়। তবে তার কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি। এবার স্থানীয় হ্যান্ডসেট নির্মাতাদের আর্থিক সহায়তায় বিটিআরসি আবারও এ উদ্যোগে ফিরে এসেছে। নির্মাতারা বলছেন, স্থানীয় উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে হলে অবৈধ পথে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সরকারের দাবি, এনইআইআর কার্যকর হলে স্থানীয় মোবাইল ফোন নির্মাতারা উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত হবেন এবং ধীরে ধীরে দেশে হ্যান্ডসেটের দাম কমে আসবে।
গত মাসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী বলেন, দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে যেসব ফোন ইতোমধ্যে চালু আছে, সেগুলো আগামী ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর চালুর আগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।
তবে ১৬ ডিসেম্বরের পর যেকোনো নতুন হ্যান্ডসেট প্রথমবার নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন করতে হবে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি, ব্যবহৃত ফোন বা বিদেশ থেকে উপহার হিসেবে আনা ডিভাইসও যেন গ্রাহক নিজেই নিবন্ধন করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও চালু করতে যাচ্ছে বিটিআরসি।
যেভাবে কাজ করবে এনইআইআর
বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, অনিবন্ধিত ফোনগুলোর জন্য তিন মাসের গ্রেস পিরিয়ড থাকবে। এ সময় ব্যবহারকারীদের এসএমএসের মাধ্যমে সতর্ক করা হবে। এরপরও নিবন্ধন না হলে প্রযুক্তিগতভাবে ওই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে বিটিআরসি।
তিনি বলেন, "আমাদের উদ্দেশ্য হলো হ্যান্ডসেটকে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ করা।"
"বিপুল পরিমাণ অবৈধ ও রিফারবিশড সেট দেশে ঢুকতে থাকলে দাম কমানো কখনোই সম্ভব হবে না। এনইআইআর চালু হলে এসব ডিভাইস শনাক্ত করা সহজ হবে এবং স্থানীয় নির্মাতারাও সুরক্ষা পাবে," বলেন তিনি।
বিটিআরসি কর্মকর্তাদরা জানান, এ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো কর ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ, হ্যান্ডসেট ক্লোনিং ও আর্থিক প্রতারণা বন্ধ করা এবং স্থানীয় উৎপাদনকে সহায়তা করা। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৮টি কোম্পানি মোবাইল ফোন উৎপাদন বা সংযোজন করছে।
দামে ব্যাপক বৈষম্য
বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের বাজারে অনুমোদিত ও অননুমোদিত ডিভাইসের দামে ব্যাপাক ব্যবধান দেখা যায়।মোবাইল ফোনে ৫৭ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের কারণে অনুমোদিত সেটের দাম গ্রে মার্কেটের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে, স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ এস২৫ আল্ট্রা-এর অফিসিয়াল দাম ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, যেখানে ড্যাজলসহ বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতা এই ফোন বিক্রি করছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়; সঙ্গে আবার দিচ্ছে এক বছরের ইনস্যুরেন্স।
একইভাবে, আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক্স গ্রে মার্কেটে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় মিলছে, যেখানে এর অফিসিয়াল দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
যমুনা ফিউচার পার্কে ড্যাজলের এক বিক্রয় প্রতিনিধি টিবিএসকে বলেন, "আমরা দুবাই বা মালয়েশিয়া থেকে অরিজিনাল ফোন আনি। এগুলো আনঅফিসিয়াল, কিন্তু সেটগুলো অরিজিনাল।"
এদিকে, এনইআইআর চালুর ঘোষণায় তৈরি হয়েছে নতুন উদ্বেগ। অনেকেই মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে; আর এতে সবার জন্য ইন্টারনেট সুবিধা বিস্তারের যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে, সেটি ব্যাহত হতে পারে।
মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সভাপতি মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, আমদানিকৃত ফোনে ৫৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। অন্যান্য ব্যয়সহ এ শুল্ক অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদিত হ্যান্ডসেটের দাম দ্বিগুণ করে দেয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, "এনইআইআর চালু হলে, দাম বাড়ার বাস্তব ঝুঁকি থেকে যায়।"
তবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী এক্ষেত্রে আশাবাদী। তার মতে, স্থানীয় নির্মাতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হলে তারা প্রতিযোগিতামূলক দামে হ্যান্ডসেট সরবরাহ করতে পারবেন। তিনি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হলো হ্যান্ডসেটকে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ করা। ২০১৮ সাল থেকে বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় ১৮টি স্থানীয় কোম্পানি ফোন উৎপাদন করছে, যা দেশের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করছে।"
তিনি আরও বলেন, এনইআইআর চালু হলে অবৈধ ও নিম্নমানের রিফারবিশড সেটের অনুপ্রবেশ কমানো যাবে, ফলে স্থানীয় নির্মাতারা টিকে থাকার সুযোগ পাবেন।
তিনি আরও জানান, স্যামসাং ও আইফোনসহ দেশে এখনও তৈরি হয় না এমন ফোন আমদানি এবং স্থানীয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে কর কমানোর জন্য বিটিআরসি ইতোমধ্যেই সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে।
এনইআইআর তদারকি কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, গ্রে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা কোনো কর দেন না, ফলে বৈধ ব্যবসায়ীরা প্রতিযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত হন।
তিনি বলেন, "অনেক অবৈধ বা রিফারবিশড সেট বাজারে ঢুকে পড়ে, যেগুলো আমরা সবসময় শনাক্ত করতে পারি না—এ কারণেই দাম কমানো সম্ভব হয় না। এনইআইআর চালু হলে এসব ডিভাইস শনাক্ত করা যাবে এবং বৈধ নির্মাতারা সুরক্ষা পাবেন।"
শিল্পখাতের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে মাসে ৩২ থেকে ৩৫ লাখ স্মার্টফোন বিক্রি হয়। বছরে মোট বিক্রি হয় প্রায় ৩ থেকে ৩ কোটি ২০ লাখ স্মার্টফোন, যার ৮০–৮৫ শতাংশই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস। এই বাজারে শাওমি, স্যামসাং, ভিভো, অপো, রিয়েলমি, ইনফিনিক্স ও টেকনোর মতো ব্র্যান্ডগুলোরই প্রাধান্য বেশি।
ঝুঁকিতে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা
দেশের প্রায় ১০–১৫ লাখ মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে মোবাইল ফোনের গ্রে মার্কেটের ওপর। এই বাজারের সঙ্গে সরাসরি ২০ হাজারের বেশি খুচরা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ী জড়িত। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, হঠাৎ এই বাজার বন্ধ হয়ে গেলে বহুদিনের প্রতিষ্ঠিত এই ইকোসিস্টেম ধসে পড়বে।
আসলাম উদ্দিন বলেন, "১৫ বছর ধরে আমরা লাইসেন্স নিয়ে বৈধভাবেই ব্যবসা করে আসছি। আমরা এখন যে ফোন বিক্রি করি তাকে অবৈধ বলা হচ্ছে। এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে লাখ লাখ মানুষ জীবিকা হারাবে।"
এনইআইআর বাস্তবায়নের ঘোষণার পর থেকেই ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির সভাপতি সতর্ক করে বলেন, এই উদ্যোগ সরকারের হ্যান্ডসেট ব্যবহারের বিস্তার এবং তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেট সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যকে ব্যাহত করবে।
তিনি বলেন, "আমাদের বাজার শেয়ার ৯০ শতাংশ। এখন আমরা যে পণ্য বিক্রি করি তাকে অবৈধ বলা হচ্ছে। সারাদেশে ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষের জীবিকা এ ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল। হঠাৎ এই ব্যবসা বন্ধ হলে তারা না খেয়ে মরবে।"
মোবাইল ফোন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদও দায় চাপান নীতিগত দ্বিধাদ্বন্দ্বের ওপর। তিনি বলেন, "নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বহু বছর ধরে সহনশীলতা দেখানোর কারণেই এই ব্যবসা বেড়েছে। এখন নীতি বদলের কারণে যদি তাদের ব্যবসায়ে ধস নামে, তাহলে তার দায় নেবে কে?"
তিনি অভিযোগ করেন, স্থানীয় মোবাইল ফোন নির্মাতাদের অর্থায়নেই এনইআইআর বাস্তবায়ন হচ্ছে; এটা একচেটিয়া বাজার তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে।
এদিকে, এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমওআইবি) সভাপতি জাকারিয়া শাহিদ বলেন, দেশে ১৮টি কোম্পানি ফোন উৎপাদন করলেও গ্রে মার্কেটের কারণে তারা বিনিয়োগের যথাযথ রিটার্ন পাচ্ছেন না।
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগের যেকোনো প্রচেষ্টার মতো এবারও অজানা কারণে উদ্যোগটি থেমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন
২০১৬ ও ২০২১ সালে এনইআইআর চালুর প্রচেষ্টা দুই দফা ব্যর্থ হওয়ার পর এবারের উদ্যোগ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিটিআরসি।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান এমদাদুল বারী স্বীকার করেন, সাইবার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে জনগণের ভোগান্তি না বাড়ানোই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, "১৬ ডিসেম্বর থেকে অনেক কিছুই বন্ধ করে দেওয়া যায়। কিন্তু মানুষের জীবনে যে ভয়াবহ ভোগান্তি নেমে আসবে, সেটা কমানোই এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।"
তিনি ধাপে ধাপে এগোনোর কৌশল তুলে ধরে বলেন, "আমরা খুব নরমভাবে শুরু করছি। ধীরে ধীরে, ধাপেধাপে, নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হবে।"
চেয়ারম্যান আরও বলেন, এনইআইআর বাস্তবায়ন স্থানীয় নির্মাতাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক দামে বাজারে ফোন সরবরাহের একটি টেকসই পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে সরকার আমদানি ও স্থানীয় উৎপাদনের ওপর কর কমিয়ে বাজারকে যৌক্তিক করতে এবং অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কতটা দ্রুত উদ্যোগ নিতে পারে তার ওপর।
উদ্যোগের পূর্ণ বাস্তবায়ন চান স্থানীয় নির্মাতারা
স্থানীয় নির্মাতারা বলছেন, তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষায় এনইআইআর সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করতে হবে। মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এমওআইবি) সভাপতি ও এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শাহিদ বলেন, "গ্রে মার্কেট বৈধ ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।সুতরাং, এইবার যেন কোনো অজানা কারণে এর বাস্তবায়ন বিলম্বিত না হয়।"
মোবাইল ফোন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এ ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে গ্রে মার্কেটের সঙ্গে সংলাপ জরুরি।"
তার মতে, কর কমানো, আমদানি সুবিধা দেওয়া—এসব সুযোগ তাদের জন্যও রাখতে হবে। না হলে এনইআইআর সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
কঠোর অবস্থানে সরকার
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ–বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফায়েজ আহমদ তায়্যেব বলেন, "চোরাচালানকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে আইন বানানো যায় না। আমরা ব্যবসায়ীদের সময় দিচ্ছি। এনইআইআর চালুর পর বাজারে শুধু 'ব্ল্যাক' (কালো) আর 'হোয়াট' (সাদা) থাকবে, কোনো 'গ্রে' (ধূসর) বাজার থাকবে না।"
তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য তুলে ধরে জানান, অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে প্রতিবছর রাষ্ট্রের প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়।
গতকাল দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ফায়েজ তায়্যেব আরও বলেন, "অবৈধভাবে আমদানি, চোরাচালান বা নকল করা ফোন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো আপস নেই।"
তিনি বলেন, "অবৈধ ফোন ব্যবহার করে জুয়া সংক্রান্ত গণবার্তা পাঠানো, প্রতারণামূলক চক্রের অর্থ সংগ্রহ, মোবাইল আর্থিক সেবার সঙ্গে জড়িত নানা অপরাধ, বিভিন্ন পেটেন্ট ও প্রযুক্তিগত রয়্যালটি পরিশোধ না করা, এবং আয়কর ও শুল্ক ফাঁকির মতো অপরাধ ঘটে থাকে। এসব ঘটনা স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্পের বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করে।"
তিনি আরও বলেন, কেউ কর ফাঁকি দিয়ে আগেভাগেই দেশে লাখ লাখ ফোন ঢুকিয়ে দিতে পারবে না। "আমরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি—কারও ব্যবসা নষ্ট করা হচ্ছে না; ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং বৈধভাবে আমদানি করা ফোনই বিক্রি করবেন এবং সৎভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবেন।"
