একীভূত হতে যাওয়া ৪ ব্যাংকের বন্ডের দায় ৪,০১০ কোটি টাকা
সংকটে থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের মধ্যে চারটি, যেসব ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনা চলছে, সম্মিলিতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের মোট বন্ডের দায় রয়েছে ৪,০১০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এই চারটি ব্যাংক হলো—এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। একীভূত হতে যাওয়া পঞ্চম ব্যাংক গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২০২২ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) ৪২৫ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তবে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোনো বন্ড ইস্যু করেনি।
ব্যাংকগুলোর সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রকাশিত ব্যালান্স শিট অনুযায়ী, এই দায়গুলো মূলত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক অনুমোদিত বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, যা মূলধন পর্যাপ্ততার শর্ত পূরণে সহায়ক ছিল। তবে চার ব্যাংকের একটি এখনো ৯ মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি— এবং, তাদের বন্ড সংক্রান্ত তথ্য জুন ২০২৫ পর্যন্ত পাওয়া গেছে।
এর আগে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে। যেগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম, অনৈতিক ঋণ বিতরণ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক আর্থিকভাবে সংক্টগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "এক্সাক্ট টাইম আমি বলব না। তবে এটি এ মাসের মধ্যেই হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমরা আশাবাদী এ মাসের শেষ নাগাদ যদি তারা চায়, আমরা তাদের (গ্রাহক) হাতে টাকা দিতে পারব। এই পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরা এক মাসের মধ্যেই তাঁদের টাকা তোলার সুযোগ পাবেন।"
বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে এসব ব্যাংকের সংগৃহীত প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার দায়ের ভবিষ্যৎ কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, "আমরা বন্ড-সংক্রান্ত দায়গুলো পর্যালোচনা করব।"
তিনি আরও বলেন, অর্থাৎ আমরা আগে খতিয়ে দেখব এই তহবিল কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এগুলো কোন শ্রেণির দায়ের মধ্যে পড়ে। খুব শিগগিরই সরকারি গেজেটের মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দেব বিনিয়োগকারীরা কীভাবে তাঁদের অর্থ ফেরত পাবেন। যেভাবেই হোক, তাঁরা তাঁদের অর্থ ফিরে পাবেন।
গভর্নর আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে আমরা বিনিয়োগকারীদের শ্রেণি বা বন্ডহোল্ডারদের ধরন স্পষ্ট করব। প্রয়োজনে বন্ড দাবির বৈধতা যাচাই করে উপযুক্ত পুনরুদ্ধার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।
এক্সিম ব্যাংকের বন্ডের দায় ১,৮৯০ কোটি টাকার
এক্সিম ব্যাংকের সমন্বিত ব্যালান্স শিট অনুযায়ী, ব্যাংকটির মোট ১,৮৯০ কোটি টাকার বন্ড দায় রয়েছে—এর মধ্যে ১,২৯০ কোটি টাকা মুদারাবা সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড এবং ৬০০ কোটি টাকা মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ড।
২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটি ছয়টি সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করেছে। এর মধ্যে দুটি—২০১৫ সালের ২৫০ কোটি টাকা এবং ২০১৭ সালের ৪০০ কোটি টাকার বন্ডের দায় সম্পূর্ণ পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি দায়ের মধ্যে রয়েছে– ২০১৯ সালে ইস্যু করা ৬০০ কোটি টাকার বন্ড থেকে ৩১৫ কোটি টাকা, ২০২১ সালের ৫০০ কোটি টাকার বন্ড থেকে ৪০০ কোটি টাকা, এবং ২০২৩ ও ২০২৪ সালের দুটি বন্ডের সম্পূর্ণ অপরিশোধিত ৪০০ কোটি ও ২৫০ কোটি টাকা।
ইউনিয়ন ব্যাংকের ১৭০ কোটি টাকা দায়
ইউনিয়ন ব্যাংক মূলধনের টিয়ার-২ ক্যাপিটাল রিকয়ারমেন্ট পূরণে ৪০০ কোটি টাকার মুদারাবা সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করেছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির বন্ড দায় দাঁড়ায় ১৭০ কোটি টাকায়, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের ২৪০ কোটি টাকা থেকে কমেছে। তবে ২০২৫ সালের আর্থিক বিবরণী ব্যাংকটি এখনো প্রকাশ করেনি।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১,২০০ কোটি টাকা দায়
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে চারটি মুদারাবা সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যু করে মোট ১,৮০০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছিল, যা বেসেল-৩ মানদণ্ডের আওতায় মূলধন ভিত্তি শক্তিশালীকরণে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ৭০০ কোটি টাকার বন্ড পরিশোধ করা হয়েছে, ৭০০ কোটি টাকা এখনো বকেয়া আছে, আর বাকি ৪০০ কোটির আংশিক পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২২ সালে ব্যাংকটি ৫০০ কোটি টাকার মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ড ইস্যু করে, যা এখনো পুরোপুরি বকেয়া। এই বন্ডের প্রধান সাবস্ক্রাইবারদের মধ্যে রয়েছে—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (১৫০ কোটি টাকা), এক্সিম ব্যাংক (১৫০ কোটি), এআইবিএল এমপ্লয়ী প্রভিভেন্ড অ্যান্ড গ্যাচুইটি ফান্ড (১০০ কোটি), এবং আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক (১০০ কোটি টাকা)।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭৫০ কোটি টাকা দায়
২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বন্ড দায়ের পরিমাণ ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা মুদারাবা সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড এবং ৬০০ কোটি টাকা মুদারাবা পারপেচুয়াল বন্ড রয়েছে।
