‘বিএনপির মৃত্যুঘণ্টা বেজে গেছে’: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
বিএনপির মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত 'মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ রাষ্ট্রগঠনের ব্যর্থতার অনিবার্য পরিণতি: নভেম্বর ১৯৭৫'- শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'বিএনপিরে একটাই কথা বলবো যে, কিছু লোক আছে না নিজের নাক কেটে অপরের যাত্রা ভঙ্গ করে। বিএনপির হলো এই অবস্থা। নিজের ক্ষতি করে হলেও বাংলাদেশের জনগণের ক্ষতি করতে আসছে তারা।বিএনপির অবস্থা কী হবে, এটা তো বলছি যে—"হাঁ" ভোটের মধ্য দিয়ে জন্ম আর "না" ভোটের মধ্য দিয়ে তাদের মৃত্যু। তাদের মৃত্যুঘণ্টা অলরেডি বেজে গিয়েছে বাংলাদেশে।'
তিনি আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে প্রতীক বিক্রির দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রতীক বিক্রির দিন শেষ।'
পাটওয়ারী বলেন, 'সাম্প্রতিক সময় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় আগুন জ্বালানো, সড়ক অবরোধ ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা বেড়েছে, যা দেখে মনে হচ্ছে একটি সংগঠিত হরতাল চলছে।'
তিনি বলেন, 'কেউ কোথাও মনোনয়ন বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় আগুন জ্বালাচ্ছে; তবে দেশে এত ফায়ারস্টেশন নেই যে সব ঘটনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, 'কিছু ব্যবসায়ী টাকা দিয়ে নির্বাচনি মহড়া শুরু করেছে এবং প্রতীক বিক্রির মতো অনৈতিক প্রথা এখনও চলছে।'
পাটওয়ারী বলেন, 'এনসিপির কোনো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ন্যূনতমও অভিযোগ থাকলে তাদের মনোনয়ন দেবেই না।'
তিনি আরও বলেন, 'ইতিহাসে অনেক সুযোগ এসেছিল, কিন্তু সেগুলো কাজে লাগানো হয়নি। বিশেষ করে ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে দুর্নীতির বিস্তার দেশের উন্নয়নগত প্রক্রিয়াকে দুর্বল করেছে '
পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি দুর্নীতিতে 'চ্যাম্পিয়ন' ছিল এবং খালেদা জিয়ার সময় দুর্নীতিবাজদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, '২০১৪-পরবর্তী সময়ে জনগণের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের পর সংস্কারের দাবি ওঠে এবং সংস্কার কমিশন গঠিত হয়; কিন্তু মনোনয়ন ফরম বিক্রি, রোড ব্লক, বাড়িঘর ভাঙচুর ও গডফাদারগিরি—এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংস্কারকে ব্যাহত করেছে।
তিনি আশঙ্কাপ্রকাশ করেন, বিএনপি যদি পুরনো পদ্ধতিতে ক্ষমতায় ফেরে, দেশের আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, 'লন্ডনে হওয়া ডিলে ক্ষমতায় গেলে এনসিপির হাতে পতন হবে।'
এনসিপির এই নেতার ভাষ্যে, জিয়াউর রহমান অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করার চেষ্টা করলেও তার দল বিএনপিই প্রথম দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্নীতি শুরু করে। তিনি বলেন, 'জিয়াউর রহমানের মুখে কালিমাখা লাগিয়ে বিএনপি প্রথম এই বাংলাদেশে দুর্নীতির... অভিযানটা শুরু করে।'
তিনি আরও বলেন, 'শেখ মুজিবের পাশে ছিল হলো সব চোর, কম্বল-চোর, আর এই খালেদা জিয়ার পাশে ছিল সব দুর্নীতি, সরকারি অফিসের টাকার চোরের লোকেরা।'
পাটওয়ারী এসময় সব ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, 'সংখ্যালঘু, নারী, আলেম ও অন্যান্য ধর্মালম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রথম দায়বদ্ধতা।'
মসজিদ, মন্দির বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ঘাঁটিতে পরিণত না করতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করে তিনি বলেন, 'ধর্মীয় মর্যাদা ও প্রতীকগুলোকে টাকার জন্য বিক্রি করা বন্ধ করুন, এগুলো আমাদের পবিত্র ঐতিহ্য।'
সভায় পাটওয়ারী জানান, 'যারা দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসে জড়িত, তাদেরকে এনসিপি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জায়গা দেবে না। সংস্কারের পথে যারা বাধা সৃষ্টি করবে, তাদেরকে ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করা হবে।'
তিনি দলের মনোযোগ দেশের রাজনৈতিক পুনর্গঠন, স্বচ্ছতা ও জনগণের কল্যাণে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
