আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন: প্রধান বিচারপতি
বিচার বিভাগের টেকসই রূপান্তর এবং ন্যায়ের দৃঢ় প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, বরং এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত 'গৌরবের ৭২ বছর' শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, '২০২৫ সালের সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ নিয়ে মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন একটি সুপরিকল্পিত ও বহুপাক্ষিক প্রয়াসের ফল। গত পনেরো মাসে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী শাখার পারস্পরিক সহযোগিতা এ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করেছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন প্রয়োজন- সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, বার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, জেলা আদালতের বিচারক ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা, যাতে কাঠামোগত রূপান্তরের টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত হয়।'
বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, 'জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাস্তবতায় বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী ও সংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ বিনির্মাণ করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সবাই একটি পারস্পরিক দায়বদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ। পারস্পরিকতা, যুক্তিনিষ্ঠতা ও একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবণতা পরিহার- এই তিন নীতিই বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসনের স্থায়িত্বের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত। অবিশ্বাস বা একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামান্য ইঙ্গিতও বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারে।'
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস স্মরণ করে তিনি বলেন, '১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য ছিল না; এটি ছিল ন্যায়, মর্যাদা ও অস্তিত্বের অধিকারের সংগ্রাম। ঠিক একইভাবে ১৯৭১ সালে বাঙালি কেবল একটি পতাকা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং মর্যাদা, সমতা ও নিজেদের অধিকারের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামে নিয়োজিত হয়েছিল।'
এর আগে শনিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সামনে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকীব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস. এম. এমদাদুল হক এবং বিচারপতি এ. কে. এম. আসাদুজ্জামান।
অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে শুরু হয়ে প্যারিস রোড ঘুরে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।
