‘দ্য পিঙ্ক প্যান্থার’, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট’ খ্যাত কিংবদন্তী অভিনেত্রী ক্লদিয়া কার্ডিনাল মারা গেছেন

ইতালীয় সিনেমার কিংবদন্তী অভিনেত্রী ক্লদিয়া কার্ডিনাল আর নেই। 'দ্য পিঙ্ক প্যান্থার' এবং 'ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট'-এর মতো কালজয়ী চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পাওয়া এই তারকা ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ফ্রান্সের নেমুরসে নিজ বাসভবনে সন্তানদের সান্নিধ্যেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
যুদ্ধোত্তর ইতালীয় সিনেমার অন্যতম প্রতীক ক্লদিয়া কার্ডিনালের জন্ম তিউনিসিয়ায়, এক সিসিলিয়ান পরিবারে। স্কুলশিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও মাত্র ১৭ বছর বয়সে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পুরস্কার হিসেবে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ভ্রমণের সুযোগ পান তিনি, যা তার অভিনয় জীবনের দরজা খুলে দেয়।
অভিনয় জীবনের শুরুতে অবশ্য বেশ প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। সিসিলিয়ান উপভাষায় কথা বলা পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং ফরাসি ভাষার স্কুলে পড়াশোনা করার কারণে প্রথম দিকের ইতালীয় চলচ্চিত্রগুলোতে তার কণ্ঠ ডাবিং করতে হয়েছিল। ক্যারিয়ারের শুরুতে ব্যক্তিগত জীবনও ছিল জটিলতায় পূর্ণ। নিপীড়নমূলক এক সম্পর্কের কারণে গোপনে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। ১৯৫৮ সালে লন্ডনে জন্ম নেওয়া সেই ছেলে প্যাট্রিককে তিনি কয়েক বছর নিজের ছোট ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।
ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ের পর ১৯৬৩ সাল ছিল তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর। ফেদেরিকো ফেলিনির বিখ্যাত '৮-১/২' এবং লুচিনো ভিসকন্তির 'দ্য লেপার্ড'—এ দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে হলিউডেও। অভিনয় করেন কমেডি ছবি 'দ্য পিঙ্ক প্যান্থার' এবং ১৯৬৮ সালে সার্জিও লিওনের মহাকাব্যিক ওয়েস্টার্ন 'ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট'-এ। তবে তিনি তার হলিউডি চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ১৯৬৬ সালের 'দ্য প্রফেশনালস'কেই সেরা বলে মনে করতেন।

১৯৭০-এর দশকে চলচ্চিত্র প্রযোজক ফ্রাঙ্কো ক্রিস্টালদির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কার্ডিনালের কর্মজীবনে সংকট নেমে আসে। চলচ্চিত্র নির্মাতা পাসকুয়ালে স্কুইটিয়েরির সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করায় ক্ষুব্ধ ক্রিস্টালদি ইতালির চলচ্চিত্র জগতে তাকে একঘরে করে ফেলার চেষ্টা করেন।
অবশেষে পরিচালক ফ্রাঙ্কো জেফিরেলি তাকে সেই সংকট থেকে উদ্ধার করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে তার টেলিভিশন মিনি-সিরিজ 'জেসাস অফ নাজারেথ'-এ কার্ডিনেলকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। এরপর তিনি ওয়ার্নার হারজগ এবং মার্কো বেলোচিওর মতো বিখ্যাত ইউরোপীয় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যান।
কেবল অভিনয়েই নয়, ব্যক্তি জীবনেও ক্লদিয়া কার্ডিনাল ছিলেন প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা ও মুক্তমনা এক নারী হিসেবে পরিচিত। একবার তিনি পোপ ষষ্ঠ পলের সঙ্গে এক বৈঠকে মিনিস্কার্ট পরে গিয়ে ভ্যাটিকানের প্রটোকল ভঙ্গ করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।
তার জীবন নিয়ে ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ের নাম ছিল 'ক্লদিয়া কার্ডিনাল, দি ইনডোমিটেবল' (ক্লদিয়া কার্ডিনেল, এক অদম্য নারী)। ২০০০ সালে ইউনেস্কো তাকে নারী অধিকার রক্ষার জন্য শুভেচ্ছাদূত হিসেবে মনোনীত করে।
জীবনের শেষ ভাগেও অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন না তিনি। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ২০২০ সালেও তাকে সুইস টিভি সিরিজে দেখা গেছে। ২০০২ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে আজীবন সম্মাননা পাওয়ার পর তিনি তার অভিনয় জীবনকে মূল্যায়ন করেছিলেন এভাবে, 'আমি ১৫০টিরও বেশি জীবনযাপন করেছি—যৌনকর্মী, সাধ্বী, রোমান্টিকসহ সব ধরনের নারী চরিত্রে। নিজেকে এভাবে বদলানোর সুযোগ পাওয়াটা এককথায় চমৎকার। আমি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছি এবং তারা আমাকে সবকিছুই দিয়েছেন।'
মৃত্যুকালে তিনি দুই সন্তান রেখে গেছেন।