ডোডো পাখি ফিরিয়ে আনার প্রকল্পে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’র দাবি মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কলোসালের

চারশ' বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডোডো পাখিকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কলোসাল বায়োসায়েন্সেস।
প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা সফলভাবে শহুরে কবুতর হিসেবে পরিচিত রক ডাভ থেকে প্রাইমোরডিয়াল জার্ম সেল (পিজিসি) পুনরুৎপাদন করতে পেরেছেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা এখন ডোডোর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জীবিত আত্মীয় নিকোবার কবুতর থেকে কোষ পুনরুৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রকল্পটি এখনও চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনও বহু বছর লাগবে, তবে কলোসাল এই অগ্রগতিকে 'গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ' হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বেথ শ্যাপিরো বলেন, 'এই অগ্রগতি শুধু ডোডো প্রকল্প নয়, পুরো পাখি সংরক্ষণ আন্দোলনের ক্ষেত্রেই একটি বড় মাইলফলক।'
এর আগে কলোসাল ডি-এক্সটিঙ্কশন প্রযুক্তির মাধ্যমে বিলুপ্ত ডায়ার উলফ শাবক জন্ম দেওয়ার দাবি করেছিল, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠানটি এখন উইলি ম্যামথ, তাসমানিয়ান টাইগার ও মোয়া পাখিকে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কাজ করছে।

গত বুধবার কলোসাল জানায়, তারা অতিরিক্ত ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যার ফলে এই প্রকল্পে মোট অর্থায়নের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারে।
ডোডো ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি স্তন্যপায়ীদের তুলনায় জটিল, কারণ কারণ পাখিরা ডিম থেকে জন্মায়। তাই স্তন্যপায়ীদের মতো তাদের ক্লোন করা সম্ভব নয়, তাই এই প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়ে। ফলে একাধিক প্রজন্ম তৈরি ও জিন সম্পাদনের মাধ্যমে প্রজনন করাই একমাত্র উপায়।
কবুতরের কোষ পুনরুৎপাদনে সফলতার পর এখন নিকোবার কবুতরের পিজিসি কোষ নিয়ে গবেষণা চলছে। এ প্রজাতি ডোডোর আরও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। কলোসাল ইতোমধ্যে টেক্সাসে এদের প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন করেছে।
পরবর্তী ধাপে, নিকোবার কবুতরের কোষে ডোডোর বৈশিষ্ট্য সংযোজন করে তা জেনেটিকালি পরিবর্তিত মুরগির ভ্রূণে প্রতিস্থাপন করা হবে। মুরগিকে এ কাজে ব্যবহারযোগ্য ধরা হচ্ছে, কারণ তাদের পালন করা সহজ এবং ইতোমধ্যে তাদের নির্বীজ করার প্রযুক্তিও রয়েছে।
কলোসাল-এর লক্ষ্য হলো, সম্পাদিত নিকোবার কবুতরের জার্ম কোষ পিজিসি যেন ডিম ও শুক্রাণুতে রূপান্তরিত হয়ে কার্যকরভাবে কাজ করে। সেই ডিম ও শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চাগুলোর দেহে ডোডো-সদৃশ জিনগত বৈশিষ্ট্য বহন করবে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কবুতরের জার্ম সেল চাষ এবং জিন-সম্পাদিত নির্বীজ মুরগির ব্যবহার—এই দুটি অগ্রগতি একসঙ্গে মিলে ডোডোর আত্মীয় প্রজাতিগুলোর জন্ম দেওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে। ধাপে ধাপে এই পদ্ধতিতে ডোডো ফিরিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পাঁচ থেকে সাত বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী বেন ল্যাম।
তবে অনেক বিজ্ঞানী ও সংরক্ষণবিদ এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের মতে, একটি বিলুপ্ত প্রাণীকে পুরোপুরি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়—এতে কেবল জিনগতভাবে পরিবর্তিত একটি সংকর প্রজাতি তৈরি হতে পারে।
কলোসাল বলছে, তারা ১০০% জিনগতভাবে মিল রয়েছে এমন প্রাণী বানানোর চেষ্টা করছে না। বরং বিলুপ্ত প্রজাতির মূল বৈশিষ্ট্য বহনকারী কার্যকর কপি তৈরিই তাদের লক্ষ্য।
জেনেটিক গবেষক স্কট ম্যাকডুগল-শ্যাকলটন বলেন, ডোডো এবং নিকোবার কবুতরের মধ্যে অনেক সাধারণ জিন রয়েছে। তাই ডোডো-নির্দিষ্ট জিনগুলো নিকোবার কবুতরের কোষে সংযোজন করলেই ডোডো-সদৃশ একটি পাখি তৈরি সম্ভব।
তবে তিনি বলেন, একটি প্রাণী কেবল জিন নয়—তার বিকাশ প্রক্রিয়ায় পরিবেশ, হরমোন, বাবা-মায়ের প্রভাব ইত্যাদি প্রভাব ফেলে; যা বিলুপ্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে অনুলিপি করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, 'এটি নিঃসন্দেহে চমৎকার জিন প্রকৌশল, তবে এটিকে ডি-এক্সটিঙ্কশন বলা অতিরঞ্জন।'
তিনি আরও বলেন, 'বিপন্ন প্রজাতির জিন সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের অনুকূল পরিবেশে খাপ খাওয়ানো বা প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হতে পারে।'
উল্লেখ্য, কলোসাল তার বিপন্ন পিঙ্ক পিজন নিয়ে গবেষণার জন্য ভ্যান উস্টারহাউটকে অনুদান দিয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ার অধ্যাপক কক ভ্যান উস্টারহাউট বলেন, কলসাল-এর গবেষণা পদ্ধতি ভবিষ্যতে বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তার মতে, এ ধরনের বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ সেই সব দাতাদের আগ্রহী করে তুলছে, যারা সাধারণত জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অর্থ দেন না।
তবে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভ্যান উস্টারহাউট বলেন, 'জিন সম্পাদনা পুরো সমস্যার একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র। আমাদের উচিত হবে বিলুপ্তি প্রতিরোধ ও বাসস্থান ধ্বংস রোধে পদক্ষেপ নেওয়া। প্রযুক্তি জীববৈচিত্র্য সংকট সমাধান করতে পারবে না। এটি হয়তো কিছু প্রজাতিকে বাঁচাতে পারে, কিন্তু এটি কোনো ম্যাজিক বুলেট নয়।'