ডাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় ফলাফলের সঙ্গে হলভিত্তিক ১৮ প্রার্থীর প্রাপ্তভোটে গড়মিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের কেন্দ্রীয় ফলাফলের সঙ্গে হলভিত্তিক ১৮ প্রার্থীর ফলাফলে গড়মিল পাওয়া গেছে। এই গড়মিলের কারণে প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১৮টি হলের ফলাফল যোগ করে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ফলাফলে নয়জনের ভোট বেশি দেখানো হয়েছে এবং নয়জনের ভোট কম দেখানো হয়েছে।
তবে বিরতিহীন কর্মসম্পাদনজনিত মানবীয় অবসাদের কারণে কয়েকটি ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন।
যাদের ভোট কম দেখানো হয়েছে
ডাকসু ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে বিজয়ী আসিফ আব্দুল্লাহর প্রকৃত ভোট ৯ হাজার ১০১ হলেও ফলাফলে ৪০ ভোট কমিয়ে ৯ হাজার ৬১ ভোট দেখানো হয়েছে। একই পদে মো. আসিফ জারদারীর ভোট ২ হাজার ৫০ হলেও ফলাফলে ২ হাজার দেখানো হয়েছে।
ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে নির্বাচিত মাজহারুল ইসলামের ৫০০ ভোট কম দেখানো হয়েছে। তার ১৮টি হল মিলিয়ে ভোট ৯ হাজার ৮৪৪ হলেও ফলাফলে ৯ হাজার ৩৪৪ ভোট দেখানো হয়েছে।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদলের প্যানেলের চিম চিম্যা চাকমার প্রাপ্তভোট ৩ হাজার ৮৮৮ হলেও ফলাফলে ১০০ ভোট কমিয়ে ৩ হাজার ৭৮৮ দেখানো হয়েছে।
সদস্য পদে সর্বমিত্র চাকমার ভোট ৯ হাজার ৫৪৮ হলেও ফলাফলে ৫৬০ ভোট কমিয়ে ৮ হাজার ৯৮৮ দেখানো হয়েছে। সদস্য পদে আবিদ আব্দুল্লাহর পেয়েছেন ২ হাজার ৪২৩ ভোট। কিন্তু ৪০টি ভোট কমিয়ে দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৩৮৩টি।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে মো. লানজু খানের প্রকৃত ভোট ১ হাজার ৫৭১ হলেও ফলাফলে ১ হাজার ৫৩১ ভোট দেখানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ সাকিবের ৩ হাজার ৯৬২ ভোটকে দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ৯২২ ভোট। একই পদে আতাউর রহমান অপুর ভোট তিনটি কমিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি ৫৯৮ ভোট পেলেও দেখানো হয়েছে ৫৯৫ ভোট।
যাদের ভোট বেশি দেখানো হয়েছে
সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মোট ৬টি ভোট পেলেও ৮টি ভোট দেখানো হয়েছে। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে আশরেফা খাতুন প্রকৃতপক্ষে ৮৯০ ভোট পেলেও ফলাফলে ৯০০ ভোট দেখানো হয়েছে।
সমাজসেবা সম্পাদক পদে তাওহিদুল ইসলামের এক ভোট বেশি দেখিয়ে ২ হাজার ৪৪ ভোটকে ২ হাজার ৪৫ হিসেবে গণনা করা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ফাতিন ইশরাক ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ১১টি। তবে ১০ ভোট বাড়িয়ে ২০২১ ভোট উল্লেখ করা হয়েছে। একই পদে ফারহান লাবিবের ভোট ৪৮৬ হলেও ৪০ ভোট বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে ৫২৬টি।
ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে মাহাথির খান নিনাদ ও মো. রায়হানের ভোট যথাক্রমে ৬৯৪ ও ৩০৫ হলেও ১০টি করে বাড়িয়ে ফলাফলে ৭০৪ ও ৩১৫ দেখানো হয়েছে।
সদস্য পদে আবির হাসানের ভোট ৩ হাজার ২২৬ হলেও দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ৩২৬। আর মনির হোসেনের ৫৪৬টি ভোট পেলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে ৫৮২টি।
যা বলছেন ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা
এদিকে আজ রোববার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক জসীম উদ্দিন জানান, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষিত ও প্রকাশিত ফলাফল চূড়ান্ত ও অপরিবর্তিত আছে। ৮টি কেন্দ্রের ভোট যোগ করে ডাকসুর সমন্বিত ফলাফল তৈরির সময় দীর্ঘ বিরতিহীন কর্মসম্পাদনজনিত মানবীয় অবসাদের কারণে সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে যোগবিভ্রাট ঘটে। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইতোমধ্যে প্রকাশিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের ভিত্তিতে ডাকসুর সমন্বিত ফলাফল সংশোধিত হয়েছে। এই সংশোধনীর কারণে নির্বাচিতদের তালিকায় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
আনুষ্ঠানিক ফলাফলে অসম্পূর্ণ তথ্য
নির্বাচনের চারদিন পরে হলভিত্তিক ফলাফল জানালেও পূর্ণাঙ্গ তথ্য উল্লেখ করেনি নির্বাচন কমিশন। ফলাফলে মোট কত ভোট পড়েছে, কতটি ভোট বাতিল হয়েছে—এটি কেন্দ্রীয় কিংবা সব হলে উল্লেখ করা হয়নি।
১৮টি হলের মধ্যে ছয়টি হলের ফলাফল শিটে কতটি ভোট কাস্ট হয়নি এবং কতটি বাতিল হয়েছে, সেটি উল্লেখ করা হয়। হলগুলো হলো- বিজয় একাত্তর হল, এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, জগন্নাথ হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। এই হলগুলোতে কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি পদে ৬৩টি, জিএস পদে ১৬৭টি ও এজিএস পদে ৩৪৪টি ভোট পড়েনি।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে ৫০টি, জিএস পদে ৫৮টি, এজিএস পদে ২১টি ভোট অতিরিক্ত দাগানোর কারণে বাতিল করা হয়েছে। হল সংসদে ভিপি পদে ৯টি, জিএস পদে ৬টি ও এজিএস পদে ১৬টি ভোট বাতিল হয়েছে।
তবে শামসুন নাহার হল, রোকেয়া হল, সূর্যসেন হল, কবি জসীম উদ্দিন হল, জিয়াউর রহমান হল, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, কুয়েত মৈত্রী হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, সুফিয়া কামাল হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, শেখ মুজিবুর রহমান হলের কত ভোট পড়েনি, কতটি ভোট বাতিল হয়েছে সেই তথ্য যুক্ত করা হয়নি।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, আমরা আলাদা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এটি দিয়ে দেব। অফিস বন্ধ থাকায় কাজটি করতে পারিনি।
মোট ভোট পড়েছে ৭৩.৫৬ শতাংশ
১৮টি হলের প্রকাশিত ফলাফলে মোট কত শতাংশ ভোট পড়েছে, সেটি উল্লেখ করা হয়নি। তবে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ভিপি পদে। এখানে মোট ভোট দিয়েছেন ২৯ হাজার ২৫৭ জন, যা ভোট ভোটারের ৭৩.৫৬ শতাংশ (মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৭৭৪)।
উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহণের পরদিন সকালে কেন্দ্রীয়ভাবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।