ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে নীরব ব্যালট বিপ্লবে ‘সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের’ পরাজিত করেছে শিক্ষার্থীরা: গোলাম পরওয়ার

সাম্প্রতিক ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে নীরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা 'সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের' পরাজিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি বলেন, 'গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণ শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায়। তারা আর আগের শাসনে ফিরে যেতে চায় না। তার প্রমাণ হলো সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নীরব ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে লেজুড়বৃত্তিক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের শোচনীয় পরাজয় ঘটিয়েছে।'
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয় অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, 'অতীতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন আবাসিক হলগুলোতে গেস্টরুম, গণরুম কালচারের নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অকথ্য জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। আবার দলের অন্তর্কোন্দলে মারামারি, অস্ত্রের ঝনঝনানিতে খুনোখুনি পর্যন্ত হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী সনি ও আবরার হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শরিফুজ্জামান নোমানী হত্যা; এরকম দেশ স্বাধীনের পর থেকে শত শত মেধাবী শিক্ষার্থী তার নিজ ক্যাম্পাসে হত্যার শিকার হয়েছে।'
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, 'দেশের মানুষ আজ সচেতন। কিসে তাদের ভালো আর কিসে তাদের মন্দ জনগণ আজ তা ভালো করেই বোঝে। তাইতো জনগণ এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে নিরব ব্যালট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের পুরোনো শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন জনকল্যাণমুখী, কল্যাণকর বাংলাদেশ বিনির্মাণের '
তিনি বলেন, 'জনগণ এখন আর কর্তৃত্ববাদী শাসন পছন্দ করে না। ফ্যাসিবাদী সরকার অব্যাহত খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি, সন্ত্রাসী, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের মাধ্যমে এদেশের ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ মানুষের উপর জেঁকে বসেছিল। জনগণ ভেবেছিল এ অবস্থা হতে আর মনে হয় পরিত্রাণ পাবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু বান্দার কোনো ইচ্ছাই পূর্ণ হয় না মহান আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করেন। তাইতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে এক দুর্দান্ত প্রতাপশালী ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ জনগণ তাদের মতপ্রকাশ করতে পারছে।'
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, 'এ কারণেই জনগণ এখন অনুরূপ কোনো শাসন ব্যবস্থাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে চায়না। আসতে চাইলে সেটিকে তারা লালকার্ড দেখাবে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্পষ্ট করে বলেছে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে যে সংবিধানের কারণে একটা সরকার এত প্রতাপশালী হয়ে উঠেছিল, এত মানুষকে হত্যা করেছে, এত মানুষকে আহত করেছে, জুলাই সনদের লিখিত স্বীকৃতির মাধ্যমে সেই সংবিধানের ন্যূনতম সংশোধন এনে তারপর নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে এই সংবিধানের আলোকে আবার যদি নির্বাচন হয় তাহলে যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদের আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ হয়ে ওঠার সুযোগ থেকে যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'এ কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সংবিধান সংশোধন করতে হবে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। তাহলে আমরা সবাই মিলে জুলাই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব।'