কাকরাইলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা অগ্রাহ্যের পর বাধ্য হয়ে বলপ্রয়োগ: সেনাবাহিনী

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাতে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টি এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ থামানোর প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর হস্তক্ষেপ অপরিহার্য ছিল বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ২৯ মিনিটে নিজেদের ফেসবুক পেজে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেনাবাহিনী বলে, রাত ৮টার দিকে কাকরাইল এলাকায় দুটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেড়ে গেলে তারা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয় এবং এতে কয়েকজন সদস্য আহত হন।'
সেনাবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, 'ঘটনার শুরুতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে স্থান ত্যাগ করার জন্য ও দেশের বিদ্যমান আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার অনুরোধ জানায়। তবে বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও কতিপয় নেতাকর্মীরা তা উপেক্ষা করে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করে।'
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'তারা সংগঠিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায় এবং আনুমানিক রাত ৯ টার দিকে মশাল মিছিলের মাধ্যমে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি করে। এ সময় তারা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়ারও চেষ্টা চালায়। এছাড়াও বিজয়নগর, নয়াপল্টন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পায়।'
সেনাবাহিনী আরও বলে, 'আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শান্তিপূর্ণ সমাধানের সকল চেষ্টা তারা অগ্রাহ্য করে। ফলস্বরূপ, জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, আজকের উদ্ভূত ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫ জন সদস্য আহত হয়।'
সব ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী 'জনমনে স্বস্তি ও নিরাপত্তা আনয়নে সকল ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত রয়েছে'।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় আহত গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূরকে শুক্রবার রাতে 'আশঙ্কাজনক' অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি করা হয়েছে। রাত ১২টার দিকে তাকে হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টার (ওসিসি) থেকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢামেকে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, 'নূরের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যেভাবে নূরের ওপর হামলা করেছে, তাতে তার নাক ভেঙে গেছে, চোখের অবস্থাও খুব খারাপ, তার হাত গুরুতর জখম হয়েছে।'
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যৌথ বাহিনী লাঠিচার্জ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মারধর ও ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা সে সময় রাস্তায় একটি মঞ্চের পেছনে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করতে চেয়েছিলেন।
গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র নেতা ও মিডিয়া সমন্বয়ক আবু হানিফ দাবি করেন, নূর ও রাশেদ খানসহ তাদের ৫০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
জাতীয় পার্টির নেতারা অভিযোগ করেন, গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় তাদের ওপর হামলা চালায়।
অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা দাবি করেন, জাতীয় পার্টির সমর্থকরাই প্রথমে তাদের মিছিলে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন, যা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।