১৪৪ ধারা জারির পর চবিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, গ্রামবাসী চলে গেলেও ২নং গেইটে অবস্থানে ছাত্ররা

হাটহাজারী উপজেলাধীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারির পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়েছেন। প্রায় দেড় ঘন্টার চেষ্টায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আসে।
সংঘর্ষ থামলেও পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কয়েকশ ছাত্র এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইটে অবস্থান করছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি ও শিল্প) মোহাম্মদ রাসেল ৬টার দিকে টিবিএসকে বলেন, "সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের পাঁচ শতাধিক সদস্য বর্তমানে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে ছাত্ররা এখনো ২ নং গেটে অবস্থান করছে।"
তিনি বলেন, "১৪৪ ধারা বলবত আছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। হতাহতের বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।"
এদিকে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন, "ছাত্ররা গ্রামে হামলা চালিয়ে প্রচুর লুটপাট করেছে। আমার পাশের বাড়ি থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে গেছে। নারীদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। হামলায় ২০০-৩০০ গ্রামবাসী আহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু।"
তিনি বলেন, "সংঘর্ষ থামলেও এলাকায় বর্তমান থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।"
স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ ও আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মুমিন আজ (৩১ আগস্ট) এক আদেশে জানান, হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেল গেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পার্শ্বে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। আজ দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল রাত ১২টা পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, উল্লেখিত সময়ে উল্লেখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশী অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আজ রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর আবারও স্থানীয়দের হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ ও এক সহকারী প্রক্টর আহত হয়েছেন।
এদিন দুপুরে ২ নম্বর গেট এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মুখোমুখি অবস্থানে গেলে সমঝোতার চেষ্টা করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ সময় স্থানীয়রা দুই দিক থেকে ঘিরে মুহুর্মুহু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে তারা আহত হন।
এঘটনায় আরও অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন।
টিবিএসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহফুজ শুভ্র বলেন, 'সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর স্যারদের শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।'
এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা ও মারধররের জেরে শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটসংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন।
টিবিএসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহফুজ শুভ্র বলেন, 'সংঘর্ষের ঘটনায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর স্যারদের শিক্ষার্থী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।'