বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের আয়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, জিডিপিতে বিদেশি সহায়তার অংশ কমে যাওয়ায় এখন বাংলাদেশকে নিজস্ব অর্থ জোগাড়ের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আজ বুধবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর এক হোটেলে কেয়ার বাংলাদেশের আয়োজিত 'দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার: ড্রাইভিং ডেভেলপমেন্ট উইথ মার্কেটস, ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনোভেশন' শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'আমাদের নিজস্ব সম্পদ আহরণের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যা করা পুরোপুরি সম্ভব।'
গভর্নর বলেন, '১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল, তখন জিডিপির ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বিদেশি সহায়তা পেতাম। এখন সেই হার অনেক কমে এসেছে। তাই আমাদের নিজেদের অর্থ জোগাড় করতে হবে।'
আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'রাজস্ব আহরণে বাংলাদেশ ভালো করতে পারছে না, এ খাতে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের ধর্মঘটের নেতিবাচক প্রভাব আমরা দেখেছি। তারা মূলত তাদের বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু এটি কোনো সমাধান নয়।'
'আমাদের রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। ভারত যদি জিডিপির ১৮-২০ শতাংশ, নেপাল যদি ২০ শতাংশের বেশি রাজস্ব তুলতে পারে, তবে আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?', যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়ন শুধু প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (ওডিআই) মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বেসরকারি খাতেও বিদেশি অর্থায়নের সুযোগ আছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে কাজে লাগানোর বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার আর্থিক খাতকে উন্নত করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। 'প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। দাম স্থিতিশীল না হলে কিছুই সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে, যা বর্তমানে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে আছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা সবাই জানি দেশের উন্নয়নের অবস্থা এবং ব্যাংকিং খাতের নাজুক পরিস্থিতি। একে স্থিতিশীল করতে আমাদের একটি ধাপে ধাপে পরিকল্পনা আছে, যা বাস্তবায়নে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। তবে এটা করা সম্ভব এবং আমরা তা করবই।'
গভর্নরের মতে, তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নতুন উদ্ভাবন এবং আর্থিক শিক্ষার প্রসার। এই খাতেও একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ঋণ গ্রহণে স্বচ্ছতা বাড়ানো হচ্ছে এবং ব্যাংকবহির্ভূত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন ব্যাংকিং সেবা গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছেছে।
'মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হয়েছে, ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বিকাশের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে,' যোগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।