এটিএম আজহারের মুক্তি: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির

জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। দলটির দাবি, 'যুদ্ধাপরাধীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রতিপন্ন করে বেকসুর খালাস কোনো ন্যায়বিচার নয়, বরং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক প্রভাবের উদাহরণ'।
আজ শুক্রবার দলটির পক্ষ থেকে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. হারুন উর রশীদ, সীমা দত্ত, ড. সামিনা লুৎফা নিত্রা, আবদুল্লাহ আল কাফী, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, ড. মাহা মির্জা, আফজাল হোসেইন, মারজিয়া প্রভাসহ অন্যান্য সদস্যদের দেওয়া বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।
বিবৃতিতে তারা জামায়াত নেতার মুক্তির ঘটনায় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, '১৯৭১ সালে যুদ্ধচলাকালীন এটিএম আজহারুল রংপুরে ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি ও আল-বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। তিনি ও তার দল জামায়াতে ইসলামী, আল-বদর ও ইসলামী ছাত্র সংঘ সাংগঠনিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিলেন।'
'মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর গণহত্যায় সম্পৃক্ত থাকার ঐতিহাসিক ভিত্তিই প্রমাণ করে এটিএম আজহারুল সাংগঠনিক ভূমিকার কারণে এই গণহত্যার অংশীদার। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রথম থেকেই গণহত্যা বিচারের মৌলিক নীতি না মেনে, দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, আল-বদর, আল-শামস, ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিচারের পরিবর্তে তারা ব্যক্তি হিসেবে বিচারকার্য সম্পন্ন করেছেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন ঐতিহাসিক গণহত্যা বিচারের নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিকে আদৌ অনুসরণ করে না।'
'আশ্চর্যের বিষয় হলো, অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যকে ত্রুটিপূর্ণ বলার পরেও তারা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে সেই ট্রাইব্যুনালের ত্রুটিপূর্ণ বিচারিক প্রক্রিয়াতেই আপিল রিভিউ করল।'
তারা আরও বলেন, 'আমরা বলতে চাই, যে পদ্ধতিতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ পূরণের জন্য এই ত্রুটিপূর্ণ যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, সেই একই স্বার্থকে এই অন্তর্বর্তী সরকার ধারণ করে জামায়াতে ইসলামীর স্বার্থকে সংরক্ষণ করেছে।'
'শুধু তাই নয়, অন্তর্বর্তী সরকার এমনভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাজিয়েছে, যেখানে প্রধান প্রসিকিউটরসহ রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর আগের যুদ্ধাপরাধী আসামীদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই এই মামলার রায়ে 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট' ঘটেছে, যা মামলার রায়কে প্রভাবিত করেছে।'
'বর্তমান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পূর্ববর্তী প্রসিকিউশনের কার্যক্রমের দায় নিতে অস্বীকার করার মাধ্যমে কেবল পেশাগত অসদাচরণই নয়, বরং পুরো বিচারিক প্রক্রিয়াকেই দুর্বল করে দিয়েছেন। পূর্বের প্রসিকিউশন ভুল করলে বর্তমান প্রসিকিউশনের দায়িত্ব ছিল সেটি সংশোধন করে রাষ্ট্রকে ডিফেন্ড করা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আসামির নির্দোষ হিসেবে 'বেকসুর খালাস' পাওয়া ন্যায়বিচারের নামে প্রহসন।'
''জুলাই গণঅভ্যুত্থান যে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল, এই রায় সেই আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জুলাই গণহত্যারও বিচার না করার 'বন্দোবস্ত' করছে।''
'আমরা আরও দেখেছি যে, এই রায়ে ক্ষুব্ধ গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করলে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। গত ১৫ বছর ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেভাবে ছাত্রলীগ হামলা করত, ছাত্রশিবির তার পুনরাবৃত্তি করছে। শুধু তাই নয়, ন্যায্য দাবি দাওয়ার কথা বলতে গেলে সিলেটে এক নারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবির ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।'
'এ ঘটনাগুলোর ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, গত ১৫ বছর ধরে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা ছাত্রশিবির সংগঠনটি মননে ও আচরণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকেই বহন করে চলছে।'
সবশেষে তারা বলেন, 'আমরা দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ত্রুটিপূর্ণ অংশ সংশোধন করে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে গণহত্যার মৌলিক নীতি মেনে গণহত্যাকারী জামায়াতে ইসলামী এবং আওয়ামীলীগের বিচার করতে হবে। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ মিছিলে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছাত্রশিবিরের সদস্যদের চিহ্নিত করে বিচার করতে হবে।'