ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া রপ্তানি করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চীনকে এ চামড়া আমদানির অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চীনা রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আজ বুধবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটি'র সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১৩ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সভায় শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি (সরকার কর্তৃক মনোনীত) হিসেবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, 'বৃহস্পতিবার কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এবছর নিশ্চিতভাবেই গতবারের চেয়ে চামড়ার মূল্য বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হবে এবং মূল্য বাড়ানোটাই হবে যৌক্তিক।'
তিনি বলেন, 'আমরা চামড়ার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করব। কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নিশ্চিত করার জন্য যদি কাঁচা চামড়া সরাসরি রপ্তানি করতে হয়, তাই করব।'
'চামড়ার বাজারে তথাকথিত সিন্ডিকেট যাতে কাজ না করে, সেজন্য যতদিন উপযুক্ত দাম নিশ্চিত না হবে, ততদিন কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য দেশের মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোতে ৩০ হাজার টনেরও বেশি লবণ বিনা মূল্যে সরবরাহ করবে সরকার', যোগ করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, 'কোরবানির চামড়া লবণ দিয়ে কীভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়, সে বিষয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে তা ব্যাপকভাবে প্রচারও করবে সরকার।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ঈদের পর অন্তত ১৫ দিন পর্যন্ত কাঁচা চামড়া স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়ে আধা-সরকারি পত্র দেওয়া হয়েছে। কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ সারাদেশে বিনামুল্যে ৭০ হাজার টন লবন সরবরাহ করবে শিল্প মন্ত্রণালয়। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
গত বছর কোরবানিতে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরু ও মহিষের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০-৫৫ টাকা। আর সারাদেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা প্রতি বর্গফুট ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ১৮-২০ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ১৬.১৮ মিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.২২ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে এখাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ১.০৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১.৬০ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৯৩২.৫৩ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.০৮ শতাংশের বেশি।