Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
June 15, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, JUNE 15, 2025
রাখাইনে মানবিক করিডোর: উদ্বেগ ও শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
30 April, 2025, 09:00 pm
Last modified: 30 April, 2025, 09:19 pm

Related News

  • ‘করিডর দেওয়ার বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা, এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প’: প্রধান উপদেষ্টা
  • ‘ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে’: আমীর খসরু
  • ‘করিডর স্পর্শকাতর ইস্যু, সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক’
  • রাখাইন করিডোর ইস্যুতে দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান
  • ‘গত আট মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে’: মির্জা আব্বাস

রাখাইনে মানবিক করিডোর: উদ্বেগ ও শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

তার চেয়েও বড় কথা, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি দরকার। বর্তমান সরকার হয়তো জনপ্রিয়, কিন্তু এটি একটি অনির্বাচিত ও অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। একটি আন্তঃরাষ্ট্র করিডোর খুবই সংবেদনশীল বিষয়—এর সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তাজনিত দিক জড়িত। ইতিহাস বলছে, অনেক সময় ‘মানবিক সহায়তা’র আড়ালে সামরিক উদ্দেশ্যও লুকিয়ে থাকে।
টিবিএস রিপোর্ট
30 April, 2025, 09:00 pm
Last modified: 30 April, 2025, 09:19 pm
অলংকরণ: টিবিএস

নীতিনির্ধারণী স্তরের সূত্রের বরাতে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সংঘাতপূর্ণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি মানবিক করিডোরের মাধ্যমে সহায়তা পাঠানো যেতে পারে বলে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তবে এ উদ্যোগ নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী—দুই দলের মধ্যেই তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

তবে ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি—এভাবেই তিনি এ দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।

এ প্রেক্ষাপটে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড মানবিক করিডোর গঠনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ, সুযোগ ও উদ্বেগ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে কিছু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে। একইসঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে বৃহত্তর রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান।


'রাখাইন একটি যুদ্ধক্ষেত্র, আরাকান আর্মির সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই'

স্কেচ: টিবিএস

— হুমায়ুন কবির, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

এটি আমাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা, যার প্রভাব বড় পর্যায়ে পড়তে পারে। রাখাইনে যাদের সরাসরি স্বার্থ রয়েছে, তারা অবশ্যই আমাদের পরিকল্পনা জানতে চাইবে এবং নিজেদের অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেটি বিশ্লেষণ করবে। চীন ও ভারত এ প্রক্রিয়ায় আগ্রহ দেখাতে পারে।

এ সিদ্ধান্তের ধরন কী তা মিয়ানমার সরকারের সঠিকভাবে জানা উচিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক পক্ষও এতে যুক্ত হতে পারে।

ঘটনাটি আমাদের সীমান্তের ঠিক ওপারে ঘটছে। রাখাইনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে নতুন করে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে—যা আমাদের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তাই এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে সহায়তামূলক যেকোনো উদ্যোগ ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।

জাতিসংঘ ইতোমধ্যে আমাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। আমাদের এককভাবে এত বড় উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ জোগাড় করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘের অংশগ্রহণ মানে হচ্ছে—আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।

বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ যদি একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে বাংলাদেশ নিজের মতামতও দিতে পারবে। আমার ধারণা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়—এ উদ্যোগে বাংলাদেশ তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

জাতিসংঘ কেবল সহায়তা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। এগুলো বাংলাদেশে সংরক্ষণ করে পরে রাখাইনের সংশ্লিষ্ট পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে। পুরো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অপরিহার্য, কারণ এটি শুধু মানবিক নয়—এতে নিরাপত্তা ও লজিস্টিকসের জটিল বিষয়ও রয়েছে।

আমাদের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, নানা আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে। অন্যদিকে, রাখাইন এখন কার্যত একটি যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু তাদের প্রকৃত সামরিক শক্তি সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই। ফলে আমরা রাখাইনের অন্য পক্ষগুলোর প্রতিক্রিয়ার মুখেও পড়তে পারি।

এছাড়া, সহায়তা বিতরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এটি রাখাইনের দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে—সহায়তা যেন সত্যিই যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছেই পৌঁছে। অনেক সময় দেখা যায়, স্থানীয় গোষ্ঠীগুলো সহায়তা আটকে রাখে বা অন্যত্র সরিয়ে নেয়। তাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—সহায়তা যেন সঠিক ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছেই যায়।

তবে, নীতিগতভাবে সম্মতির আগে সরকারের উচিত ছিল দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া জরুরি। এ পরামর্শহীন সিদ্ধান্ত একটি সমস্যা—কারণ মনে হচ্ছে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংজ্ঞা অনুযায়ী অস্থায়ী। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কিংবা স্থগিত করার অধিকার থাকবে। শুরুতেই যদি রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হতো, তাহলে এটি চালিয়ে যাওয়ার একটি প্রতিশ্রুতি তৈরি হতো। এখন যেহেতু তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি, নতুন সরকার চাইলে এটি বাতিলও করতে পারে। এ কারণেই জাতীয় ঐক্যমত্য গুরুত্বপূর্ণ—যেটি কার্যক্রমের দীর্ঘমেয়াদি টেকসইতা নিশ্চিত করে।

তবে আমি মনে করি না, এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশকে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হবে। আমরা এতে একেবারেই আগ্রহী নই। বরং আমরা চাই, তারা যত দ্রুত সম্ভব স্বেচ্ছায় ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যাক। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। রাখাইনে স্থিতিশীলতা ফিরলেই তারা ফিরতে পারবে—এটাই আমাদের লক্ষ্য।


'এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি জরুরি'

স্কেচ: টিবিএস

— আলতাফ পারভেজ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস ও রাজনীতির গবেষক

বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত নিয়ে একটি নতুন অগ্রগতি আন্তর্জাতিকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সরকার রাখাইন (পূর্বে আরাকান) অঞ্চলে জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত একটি 'মানবিক করিডোর' চালুর কথা ভাবছে। এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে।

তবে এখনো কিছু বড় প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

প্রথমত, বাংলাদেশ এর বিনিময়ে কী পাচ্ছে? এ নিয়ে কোনো শর্ত থাকলে তা কী? আমাদের রাজনৈতিক মহল এসব শর্ত সম্পর্কে কতটুকু জানে? এসব প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, এ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা নেতৃত্বের সম্পৃক্ততাও নিশ্চিত করা দরকার।

এটা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট যে আরাকানের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ এলাকায় এখন আরাকান আর্মির দখল। তারা যত বেশি এলাকা দখলে নেবে, তত বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করবে—এ কথা দৈনিক সমকাল-এর এক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, যেখানে প্রতিদিন নতুন করে রোহিঙ্গা আসার খবরও নিশ্চিত করা হয়েছে।

এ বাস্তবতায়, করিডোর চালুর আগে আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা পাওয়া বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আরাকান আর্মি এসব শর্ত মানতে রাজি হবে কি? কারণ, রাখাইন জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী মনোভাব এখনো স্পষ্টভাবে বিদ্যমান।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা কি আরাকানের ভেতরে ত্রাণ গ্রহণ ও বণ্টনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন? বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই জাতিসংঘের কাছে এ প্রশ্ন তোলার দরকার। শুধু রাখাইনদের হাতে ত্রাণ তুলে দিলে তা পক্ষপাতদুষ্ট এবং অবিচারপূর্ণ হবে।

এ ছাড়া করিডোর দিয়ে ত্রাণ পাঠাতে হলে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোর সরকারের অনুমতি লাগবে।  কারণ, করিডোরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি। মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এ করিডোর দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর রাখতে হলে একটি তৃতীয় পক্ষকে গ্যারান্টি দিতে হবে—যে পক্ষটি মিয়ানমারের সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘকে বিশেষ করে চীনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

এ করিডোর ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগও রয়েছে। যদিও এটি মানবিক সহায়তার করিডোর হিসেবে চালু হচ্ছে, তবু বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কিছু বড় প্রশ্ন এখনো রয়েছে—এ করিডোরের নিরাপত্তার দায়িত্বে কে থাকবে? বাংলাদেশ, জাতিসংঘ না কি অন্য কোনো দেশ? ভারত ও চীনের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো কি বঙ্গোপসাগরে জাতিসংঘের কার্যক্রমে সম্মতি দেবে? করিডোর কি 'নো-ফ্লাই জোন' হিসেবে ঘোষণা করা হবে? কেউ যদি এ শর্ত লঙ্ঘন করে, তাহলে দায়ভার কার? এসব প্রশ্নের পরিষ্কার উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত এবং সব পক্ষ একমত না হওয়া পর্যন্ত এ উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

করিডোরটি 'নো-ফ্লাই জোন'-এর আওতায় পড়বে কি না এবং এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে থাকবে কি না—এ বিষয়গুলোও এখনো পরিষ্কার নয়, অথচ এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তার চেয়েও বড় কথা, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে হলে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি দরকার। বর্তমান সরকার হয়তো জনপ্রিয়, কিন্তু এটি একটি অনির্বাচিত ও অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। একটি আন্তঃরাষ্ট্র করিডোর খুবই সংবেদনশীল বিষয়—এর সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তাজনিত দিক জড়িত। ইতিহাস বলছে, অনেক সময় 'মানবিক সহায়তা'র আড়ালে সামরিক উদ্দেশ্যও লুকিয়ে থাকে।

তাই বাংলাদেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এমন উদ্যোগ নিলে তা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না। বর্তমানে কার্যকর সংসদ না থাকায় করিডোর নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ ও সম্মতির ভিত্তিতে নেওয়া উচিত।


'জবাবদিহিতা ছাড়া মানবতা জাতীয় দায়বদ্ধতায় পরিণত হতে পারে'

স্কেচ: টিবিএস

— শরীফুল হাসান, ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক ও অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান

এ উদ্যোগ ঘিরে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো কি এতে একমত? সরকার কি জানে, সাধারণ মানুষ এ সিদ্ধান্তে কতটা সমর্থন দিচ্ছে? একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া করিডোরের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে?

আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে—এ করিডোর দিয়ে কী ধরনের পণ্য যাবে এবং কীভাবে তা নির্বাচন ও যাচাই করা হবে? যদি মানবিক করিডোর খোলা হয়, তাহলে জানতে চাই—আরাকান আর্মি, বিদ্রোহী গোষ্ঠী বা অপরাধীরা কি এটিকে নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ নেবে? যদি সে আশঙ্কা থাকে, তাহলে আমাদের করণীয় কী?

এ মানবিক করিডোর দেওয়ার বিনিময়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা কি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে? আমি বুঝতে পারছি, এ করিডোর মূলত রাখাইনের মানুষদের কথা ভেবেই প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এ করিডোর দিচ্ছি কী পরিস্থিতিতে? আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কি এ বিষয়ে একমত?

ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস—এ চার দেশেরও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত আছে। তাদের কি মানবিক করিডোরের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে? না-কি শুধু বাংলাদেশই এ করিডোর তৈরি করবে?

দেখুন, মানবিক হতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাস্তবতাকে বুঝতে হবে। আমরা মানবিকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে ইতোমধ্যে দশ লক্ষের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু একজনকেও কি আমরা ফেরত পাঠাতে পেরেছি? যদি না পেরে থাকি, তাহলে কেন? জাতিসংঘ তাহলে কী করেছে?

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি শরণার্থী শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এর মধ্যে পাঁচ লাখ শিশু, যাদের বয়স ছয় থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। প্রতি বছর শিবিরে যুক্ত হচ্ছে আরও ৩০ হাজার শিশু। বিয়ের হারও অনেক বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে—এ শিশুদের ভবিষ্যৎ কী?

কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছিল, তারা ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাবে। তাহলে আমরা কীভাবে আরও ১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেব? বাংলাদেশের জনগণ কি এর জন্য প্রস্তুত?

আমরা কি জাতিসংঘকে বলতে পারি, করিডোর দেওয়ার শর্ত হিসেবে এক বা দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে? যদি তারা না নেয়, তাহলে জাতিসংঘ কী ব্যবস্থা নেবে?

আমি নিজে রাখাইনে গিয়েছি। শুধু বাংলাদেশে নয়, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াতেও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের দুর্দশার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা চোরাচালান, মানব পাচারসহ নানা অপরাধ নিয়েও রিপোর্ট করেছি। রোহিঙ্গাদের আচরণ এবং মিয়ানমার সরকারের মনোভাব সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানি। সে অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি—আমরা কি নতুন কোনও সংকট তৈরি করছি না?

আমি সবসময় আশঙ্কা করি—জাতিসংঘ, চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দুর্বল ভূমিকা বোঝায়, রোহিঙ্গারা হয়তো আর কখনও মিয়ানমারে ফিরতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? আমি আশা করি, সরকার এসব বিষয়ে গভীরভাবে ভাববে।

বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করছে। আমি তাদের অনুরোধ করব, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও যেন জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হয়। আমি জানতে চাই—বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ রোহিঙ্গা বিষয়ে কী ভাবছে? রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী? করিডোর কি দেওয়া হবে? দিলে কী শর্তে? অপরাধমূলক কার্যকলাপ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে? এমন কোনও করিডোর কি আছে যেখানে কোনো সমস্যা হয়নি?

এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের এসব প্রশ্নের উত্তর জানার অধিকার আছে। সরকার কীভাবে এসব প্রশ্নের জবাব না দিয়েই করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে? তারা কোন আইনের অধীনে এটি করছেন?

আমি সরকারকে বলতে চাই—এমন কিছু করবেন না, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

সম্প্রতি বিএনপি বলেছে, এর ফলে বাংলাদেশ গাজাতে পরিণত হতে পারে। এটি একটি জোরালো মন্তব্য। আমি যদি মির্জা ফখরুলকে সঠিকভাবে বুঝে থাকি, তাহলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন—এক সময় ফিলিস্তিনে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছিল, এখন তারা নিজেই একটি রাষ্ট্র ইসরায়েল গঠন করে স্থানীয় জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আজ গাজার মানুষকে সহায়তা করতে করিডোর নিয়ে আলোচনা চলছে। এটি একটি শক্তিশালী এবং প্রাসঙ্গিক পয়েন্ট।

আমি আশা করি, নীতিনির্ধারকেরা এসব বিষয়ে মনোযোগী হবেন। আমি চাই, তারা মনে রাখুন—বাংলাদেশই সবার আগে। নানা বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও, দেশের স্বার্থে সবাইকে একত্রিত হতে হবে।


'এ ধরনের করিডোর প্রায়ই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও বিদেশি সামরিক উপস্থিতির কেন্দ্রে পরিণত হয়'

স্কেচ: টিবিএস

— ড. মুবাশ্বার হাসান, পোস্টডক্টরাল ফেলো, অসলো বিশ্ববিদ্যালয়

আমি যতটা বুঝতে পেরেছি, এ আলোচনার কয়েকটি প্রধান দিক আছে।

প্রথমত, সিদ্ধান্তের বিষয়টি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি নিয়ে ভাবছে, তবে এখনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা ও খোলামেলা আলোচনা হয়নি। মনে রাখতে হবে, সবকিছু ঠিকঠাক হলে এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম আনুষ্ঠানিক করিডোর। এর আগে দু'বার টেকনাফ অনানুষ্ঠানিকভাবে করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সেদিক থেকে এটি এক ধরনের অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক রূপ।

দ্বিতীয়ত, প্রক্রিয়াটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। এখানেই অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। তাছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, কিছু শর্ত রয়েছে, যা এখনই সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হবে না।

ফলে সিদ্ধান্তটি একরকম অনানুষ্ঠানিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হয়েছে—যেখানে সেনাবাহিনী, বিএনপি ও জামায়াতের মতো ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ পক্ষগুলো সম্পৃক্ত নয়। তাদের অবহিত না করায় প্রক্রিয়াটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। তদুপরি, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। সে ক্ষেত্রে তার বলা যে সরকার কোনো বিষয়ে আলোচনা করবে না—এটি সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, এর একটি বাস্তবতা আছে—সেটাও আমি অনুধাবন করি।

তৃতীয় দিকটি হলো সম্ভাব্য ঝুঁকি। বলা হচ্ছে, এ করিডোর ভুক্তভোগী মানুষদের সহায়তা করবে। আমি যতদূর জানি, রাখাইনে রসদ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় করিডোরটি জরুরি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ যদি কিছু না করে, তাহলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। এটাই সংঘাতের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

ইউক্রেন বা ফিলিস্তিনের উদাহরণ নিলেই দেখা যায়—সংঘাত শুরু হলে মানুষ দেশ ছেড়ে পালায়। আমরা চাই না, আরও শরণার্থী বাংলাদেশে আসুক। কারণ আমরা প্রতিবেশী দেশ। তাই সংঘাত যদি আরও বাড়ে, তাহলে শরণার্থীর নতুন ঢল নেমে আসতে পারে। সরকার মনে করছে, এ করিডোর একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে এবং ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করবে।

তবে নিরাপত্তার দিক থেকেও করিডোরটির প্রভাব রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের করিডোর অপরাধ, অস্ত্র চোরাচালান ও মানবপাচারের পথ খুলে দিয়েছে। এটি বিদেশি সামরিক বাহিনীর উপস্থিতির সুযোগ করে দিতে পারে। সবচেয়ে যৌক্তিক অনুমান হলো—এ বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হতে পারে। কিন্তু যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ উদ্যোগে যুক্ত হয়, তাহলে তা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কারণ হতে পারে।

এছাড়া, এ করিডোর তৈরি করতে হলে বার্মিজ সেনাবাহিনী তাতমাদোর সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ রাখতে হবে—এ বিষয়টিও মাথায় রাখা উচিত। করিডোরের উদ্দেশ্যই হলো সংঘাতের বাইরে থাকা। ফলে বিদেশি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

আমরা চাইলে অন্য কিছু বিকল্প নিয়েও ভাবতে পারি। কারণ, এ উদ্যোগটি বাংলাদেশের জন্য খুব ইতিবাচক বলা যায় না। শরণার্থী গ্রহণের মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ জড়িত থাকায় সরকার চাইলে তাদের মাধ্যমেই অন্য দেশগুলোর সহায়তা চেয়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে পারে।

সবশেষে, আমি বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাই—এ বিষয়ে যেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এটি একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশ সাধারণ কোনো রাষ্ট্রের মুখোমুখি নয়—আমরা এক ধরনের মাফিয়া-সদৃশ কর্তৃত্ববাদী সরকারের মোকাবিলা করছি। রাখাইন ক্রমেই গাজার মতো হয়ে উঠছে। এ বাস্তবতায়, আমাদের সর্বস্তরে ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি, আর এখানেই সরকারের আরও ভালো করা উচিত ছিল।

 

Related Topics

টপ নিউজ

রাখাইনে মানবিক করিডোর / মানবিক করিডোর / মানবিক করিডর / রাখাইনে মানবিক করিডর / করিডর / আরাকান আর্মি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইরানের হিসেবের ভুল, যে কারণে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
  • আলীকদমে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম গ্রেপ্তার
  • ‘পরমাণু স্থাপনায় হামলা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী নিষিদ্ধ’: জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এলবারাদেই
  • ‘ইসরায়েলকে ছাড়ো’: ইরানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা যেভাবে ট্রাম্প সমর্থকদের বিভক্ত করছে
  • ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কতটা কাছাকাছি?
  • ইরান-ইউক্রেন বিষয়ে পুতিন ও ট্রাম্পের ফোনালাপ, ইসারয়েলি হামলার নিন্দা পুতিনের

Related News

  • ‘করিডর দেওয়ার বিষয়টি সর্বৈব মিথ্যা, এটা চিলে কান নিয়ে যাওয়ার গল্প’: প্রধান উপদেষ্টা
  • ‘ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে’: আমীর খসরু
  • ‘করিডর স্পর্শকাতর ইস্যু, সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক’
  • রাখাইন করিডোর ইস্যুতে দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলন করবেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান
  • ‘গত আট মাসে ৯০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে’: মির্জা আব্বাস

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইরানের হিসেবের ভুল, যে কারণে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

2
বাংলাদেশ

আলীকদমে পর্যটক মৃত্যুর ঘটনায় ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম গ্রেপ্তার

3
আন্তর্জাতিক

‘পরমাণু স্থাপনায় হামলা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী নিষিদ্ধ’: জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এলবারাদেই

4
আন্তর্জাতিক

‘ইসরায়েলকে ছাড়ো’: ইরানের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনা যেভাবে ট্রাম্প সমর্থকদের বিভক্ত করছে

5
আন্তর্জাতিক

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের কতটা কাছাকাছি?

6
আন্তর্জাতিক

ইরান-ইউক্রেন বিষয়ে পুতিন ও ট্রাম্পের ফোনালাপ, ইসারয়েলি হামলার নিন্দা পুতিনের

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net