গাজায় শিশুদের ‘একবেলা খাবারও জুটছে না’: সহায়তা সংস্থা

ইসরায়েলের অবরোধ ও অব্যাহত বিমান হামলায় বিপর্যস্ত গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি শিশুরা একবেলার খাবারও পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত ১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার নেতৃবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, ১৮ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি সামরিক অভিযান এবং গত মাসে আরোপিত সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা 'সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে'।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'ভয়াবহ ও নির্বিচার বোমাবর্ষণের' কারণে গাজায় চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সেখানে কাজ করা ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সহায়তা সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম স্থগিত বা সীমিত করেছে।
অক্সফামের নীতিনির্ধারণী প্রধান বুশরা খালিল বলেন, "শিশুরা দিনে একবেলারও কম খাবার পাচ্ছে। তাদের জন্য এখন খাবার জোগাড় করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কেবল টিনজাত খাবার খেয়ে বেঁচে আছে তারা... অপুষ্টি এবং ক্ষুধার্ত অঞ্চলের সংখ্যা বাড়ছেই।"
অন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ডক্টর্স উইদআউট বর্ডারস-এর গাজা অঞ্চলের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্ডে বাজরোল বলেন, "সহায়তা কর্মীরা চোখের সামনে মানুষকে—যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু—কষ্ট পেয়ে মারা যেতে দেখছেন, অথচ তাদের হাতে পর্যাপ্ত সামগ্রী নেই। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী ফুরিয়ে আসায় সহায়তা কার্যক্রম চালানো একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এটা মানবিক বিপর্যয় নয়—এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, একটি জাতির বেঁচে থাকার সক্ষমতার ওপর ইচ্ছাকৃত আঘাত, যা অবাধে এবং শাস্তিহীনভাবে চলছে।"
শুক্রবার গাজা শহর থেকে আল জাজিরার হানি মাহমুদ জানান, শিশুখাদ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের অভাবে শিশু ও নবজাতকরা চরম অপুষ্টিতে ভুগছে।
তিনি বলেন, "আমরা বহু শিশুকে পুষ্টিহীনতায় ভুগতে দেখেছি। পরিবারগুলো তাদের ন্যূনতম চাহিদাও মেটাতে পারছে না। বাজার ও ফার্মেসিতে শিশুখাদ্য নেই বললেই চলে। গাজায় সমস্ত জরুরি পণ্যের সংকট চলছে।"
দেইর আল-বালাহ এর আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে আল জাজিরাকে ফিলিস্তিনিরা জানান, তারা অপুষ্টিজনিত কারণে তাদের সন্তানদের হারাচ্ছেন।
নিজের সন্তান হারানো ফাদি আহমেদ বলেন, "হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ছেলের ফুসফুসে মারাত্মক সংক্রমণ হয়েছিল, যার ফলে তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।"
তিনি বলেন, "দুর্বলতা ও চরম অপুষ্টি তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়... হাসপাতালে এক সপ্তাহ থাকার পর মারা যায় সে।"
এক দাদী ইনতিসার হামদান জানান, তার নাতি তিন দিন ধরে দুধ না পেয়ে মারা গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ৬০ হাজারেরও বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
এছাড়া, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত চলা সংঘাতে গাজায় ৪০০ জনের বেশি সহায়তা কর্মী এবং ১,৩০০ জনের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন।