স্মার্টফোন, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কছাড়ে প্রযুক্তিখাতের শেয়ারে উত্থান

আজ সোমবার বিশ্ববাজারে প্রযুক্তি খাতের শেয়ারদর বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি করা স্মার্টফোন, কম্পিউটার হার্ডওয়্যারসহ বেশ কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের যুক্তরাষ্ট্র তার পাল্টা শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়ায় ঘটেছে এই উত্থান। এতে করে সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ক্ষতিগ্রস্ত খাতটিতে সাময়িক স্বস্তিও ফিরেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে পাল্টা-পাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে দেখা দেয় প্রযুক্তি পণ্যের যন্ত্রাংশ আরও ব্যয়বহুল হওয়ার উদ্বেগ। এতে ভোক্তা চাহিদা কমার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তাছাড়া করোনা মহামারির পর এটিই প্রযুক্তিখাতের সরবরাহ চক্রের সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত হতে চলেছে এমন উৎকন্ঠা তো ছিলই। যেকারণে পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিপণ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে বড় ধস দেখা যায় বিশ্বব্যাপী।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আলবের্তো গেগরা বলেন, "সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা আপাতত কিছুটা কমেছে, যা প্রযুক্তি খাতে একটি সহায়ক উপাদান। বিশেষ করে, চীনের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের ফলে পুরো সরবরাহব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ার যে আশঙ্কা ছিল, তা আপাতত এড়ানো গেছে বলে মনে হচ্ছে।"
অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড এর শেয়ার মূল্য ৩.৫ শতাংশ বেড়েছে এদিনের লেনদেনে, যদিও আগের দুই সপ্তাহে এটি ৯.১ শতাংশ কমে গিয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনে তৈরি এবং যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া আইফোনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক থাকলে মূল্য বেড়ে যেত।
কম্পিউটার নির্মাতা এইচপি এবং ডেল টেকনোলজিস এর শেয়ার মূল্যও যথাক্রমে ৩.৫ শতাংশ ও ৫.৯ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া -এর শেয়ারও ১.৫ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা পুরো সেমিকন্ডাক্টর খাতে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আটলান্টিকের ওপর পাড়েও প্রযুক্তিখাত পুঁজিবাজারে ভাল করেছে। সোমবার ইউরোপের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারদরও বাড়ে, বিশেষত যেসব কোম্পানি মার্কিন বাজারের ওপর বেশি নির্ভরশীল। এএসএম ইন্টারন্যাশনাল এবং ইনফিনিয়ন -এর শেয়ারদর ১.৪ শতাংশ থেকে ৩.২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে এদিনের লেনদেনে।
এদিকে, অ্যাপলের প্রধান সরবরাহকারী এশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভ করেছে। আইফোনের সবচেয়ে বড় অ্যাসেম্বলার ফক্সকন- এর বাজারমূল্য দিনের শুরুতে ৭.৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়লেও দিনের শেষে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে লেনদেন শেষ করে। কোয়ান্টা ৫.৮ শতাংশ এবং ইনভেন্টেক- এর বাজারদর ৪.১ শতাংশ বাড়ে।
হোয়াইট হাউস শুক্রবার যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়, তাতে মোট ২০টি ক্যাটাগরির পণ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল— যার মধ্যে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস, মেমোরি চিপ ও ফ্ল্যাট প্যানেল ডিসপ্লে উল্লেখযোগ্য।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই স্বস্তি হতে পারে স্বল্পমেয়াদি। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোববার ঘোষণা করেছেন, আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক হার আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঘোষণা করবেন।
অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক জানিয়েছেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হবে সেমিকন্ডাক্টরসহ ওইসব পণ্যের ওপর, যেগুলো সম্প্রতি ছাড়ের আওতায় এসেছে।
সিএফআরএ রিসার্চের সিনিয়র বিশ্লেষক অ্যাঞ্জেলো জিনো বলেন, "এই মুহূর্তে প্রযুক্তি পণ্যে চীনের আমদানির ওপর প্রায় ২০% হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত। এ সুযোগে কিছু পণ্যের মজুত বাড়ানো হতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "যদিও এসব ডিভাইসের ভেতরে থাকা চিপগুলোর ওপর শুল্ক থাকবে, তবে তা আগের তুলনায় অনেক কম হবে এবং এতে করে ডিভাইস নির্মাতা ও সরবরাহকারীরা চিপের অধিক ব্যয়ের ধাক্কা সামলাতে পারবে।"