ভুল ভ্রূণ প্রতিস্থাপনে অস্ট্রেলিয়ায় এক নারীর গর্ভে অন্যের সন্তান!

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনে একটি দম্পতির জীবনে ঘটে গেছে অবিশ্বাস্য এক ঘটনা। ভুল করে অন্য নারীর ভ্রূণ গর্ভে প্রতিস্থাপন করার ফলে এক নারী জন্ম দিয়েছেন এক অচেনা ব্যক্তির সন্তানের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মনাশ আইভিএফ নামের সংশ্লিষ্ট প্রজনন চিকিৎসাকেন্দ্র। খবর বিবিসির।
এই ঘটনাকে 'মানবিক ত্রুটি' হিসেবে আখ্যা দিয়ে মনাশ আইভিএফ-এর প্রধান নির্বাহী মাইকেল ন্যাপ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'মনাশ আইভিএফ-এর পক্ষ থেকে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ঘটনায় আমাদের প্রত্যেকেই গভীরভাবে মর্মাহত।'
মনাশ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই ভুলটি সামনে আসে, যখন শিশুটির জৈবিক অভিভাবকরা তাদের অবশিষ্ট ভ্রূণ অন্য একটি ক্লিনিকে স্থানান্তরের অনুরোধ করেন। তদন্তে জানা যায়, ভুল করে অন্য এক রোগীর একটি ভ্রূণ গলিয়ে (থড করে) সেটি ভুল নারীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এর ফলে এক সন্তানের জন্ম হলেও, তা সংশ্লিষ্ট নারীর জৈবিক সন্তান নয়।
এ ঘটনায় একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে ক্লিনিকটি। যদিও মনাশ কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি একটি 'পৃথক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা' এবং তারা আরও এমন ঘটনার ঝুঁকি নেই বলে নিশ্চিত।
ঘটনাটি জানার পরপরই মনাশ তাদের 'ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিম' সক্রিয় করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট রোগীদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চায় ও মানসিক সহায়তা প্রদান করে।
এছাড়া ক্লিনিকটি অস্ট্রেলিয়ার প্রজনন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও কুইন্সল্যান্ডের নতুন সহায়ক প্রজনন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক দপ্তরকে বিষয়টি স্বেচ্ছায় জানায়।
এর আগেও মনাশ আইভিএফ বিতর্কে জড়িয়েছিল। ২০২৩ সালে তারা প্রায় ৭০০ রোগীর সঙ্গে একটি ক্লাস অ্যাকশন মামলায় ৫৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ক্ষতিপূরণে রাজি হয়। ওই মামলায় অভিযোগ ছিল, ভুল জেনেটিক পরীক্ষার কারণে শত শত কার্যকর ভ্রূণ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, ওইসব ভ্রূণের প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রকৃতপক্ষে সুস্থ ছিল এবং গর্ভধারণের উপযোগী ছিল।
উল্লেখ্য, আইভিএফ বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, যেখানে নারীর ডিম্বাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে শুক্রাণুর মাধ্যমে নিষিক্ত করা হয় এবং পরে তা ভ্রূণ রূপে গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতি সবসময় সফল হয় না।
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে ২০ হাজার ৬৯০টি শিশু জন্ম নিয়েছিল।