বাংলাদেশ ও নাসার মধ্যে বেসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানে চুক্তির পরিকল্পনা: বিডা চেয়ারম্যান

বাংলাদেশ বেসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানসংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়ে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার (নাসা) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
আজ রোববার (৬ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'চুক্তিটি সই হলে আমরা বিস্তারিত জানাতে পারব।'
তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের কথা মাথায় রেখে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশিক মাহমুদ বলেন, 'বাংলাদেশ সম্পর্কে বৈশ্বিক বয়ান ঠিক করতে হবে এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য অভাবনীয় উন্নতি আনতে হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এবং আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
চার দিনব্যাপী 'বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫'-এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরতেই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সংস্থা ইউএনবির তথ্য অনুযায়ী, আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া সামিটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী ও শীর্ষ নির্বাহীরা অংশ নেবেন। এতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশের পরিবর্তন ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে।
আশিক মাহমুদ বলেন, 'বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। এই সামিট শুধু বিনিয়োগ সুযোগ তুলে ধরবে না, বরং একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলোর কথাও জানাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'সামিট ২০২৫ হবে একটি মাইলফলক, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে।'
চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের প্রতিনিধিদলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা সামিটে যোগ দেবেন।
বিডার তথ্য অনুযায়ী, সামিটের গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের উপসচিব জার্নো সিরইয়ালা, ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও সিইও সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম, ইনডিটেক্স-এর সিইও অস্কার গার্সিয়া মাচেইরাস, উবার এশিয়া-প্যাসিফিকের পাবলিক পলিসি ও গভর্নমেন্ট রিলেশনস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর মাইক অরগিল, স্যামসাং সি অ্যান্ড টি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি, টেলিনর এশিয়ার নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান জন ওমুন্ড রেভহাগ এবং জিওর্ডানো কোরিয়ার সিইও হান জুন-সিওক।
সামিট উপলক্ষে আগামী ৭ এপ্রিল বিনিয়োগকারীদের একটি বড় দল চট্টগ্রামের কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবে। ৮ এপ্রিল তারা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখবে।
এর আগে গত ২৩ মার্চ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সামনে দেশের 'বাস্তব চিত্র' তুলে ধরতে চায়—যাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্রকৃত দিকগুলো সামনে আসে।
তিনি বলেন, 'বিনিয়োগকারীদের সত্যিকারের চিত্র দেওয়া কঠিন, যতক্ষণ না আমরা তাদের এখানে নিয়ে আসি। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মাধ্যমে আমরা তাদের সামনে দেশের একটি বাস্তবচিত্র তুলে ধরতে চাই।'
বিনিয়োগকারীদের দূর থেকে করা গবেষণার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের জ্ঞান শুধুমাত্র কাগুজে নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিল থাকাটা জরুরি—কারণ মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা অনেক সময় ভিন্ন হয়ে থাকে।
এক প্রশ্নের জবাবে আশিক বলেন, বিনিয়োগকারীরা 'স্বল্পমেয়াদি অস্থিরতা' মাথায় রেখেই বাংলাদেশে আসছেন। তিনি বলেন, তারা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সামনে এমন একটি চিত্র উপস্থাপন করতে চান, যাতে বোঝা যায়—বাংলাদেশ একটি ভিন্ন পরিবেশ এবং এর দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অত্যন্ত ইতিবাচক।
তিনি আরও জানান, এখানে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা থাকবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা এসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।
সামিটে বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের সামনে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরতে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হবে।
১০ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় একাধিক ব্রেকআউট সেশনে বিনিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে রয়েছে—ডিজিটাল অর্থনীতি (সিটি এনএ ও ইউএনডিপি পরিচালিত), টেক্সটাইল (এইচএসবিসি ও বিজিএমইএ), কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ (ডাচ দূতাবাস ও এলসিপি) এবং স্বাস্থ্যসেবা (ইন্সপিরা, ইবিএল ও সাজিদা ফাউন্ডেশন)।
এই দিনেই একটি 'ম্যাচমেকিং সেশন' ও 'গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট বেস্ট প্র্যাকটিস' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনারও আয়োজন করা হবে।
ইভেন্টটির প্রধান অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে ইউএনডিপি, এফসিডিও, গ্রামীণফোন, বিশ্ব ব্যাংক এবং এফআইসিসিআই, যা বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধি করতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টাগুলি তুলে ধরেছে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের প্রাক্কালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, 'বাংলাদেশে বিনিয়োগের অসাধারণ সম্ভাবনা যাচাই করার এমন উপযুক্ত সময় আর আসেনি।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে ইতোমধ্যে গভীর পরিবর্তন হয়েছে এবং একটি দূরদর্শী বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।'
বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে দেয়া এক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা প্রতিটি বিনিয়োগকারীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সামিটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা আরও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ পাবেন। আসুন, বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিজ চোখে দেখুন এবং বিশ্বের অন্যতম গতিশীল অর্থনীতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন।'
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, তিনি বৈশ্বিক অংশীদার ও বিনিয়োগকারীদের 'নতুন বাংলাদেশে' স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় আছেন।