আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২৩৮ ভেনেজুয়েলানকে বের করে দিল ট্রাম্প প্রশাসন

আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ২৩৮ জন ভেনেজুয়েলান নাগরিককে প্রত্যর্পণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত এসব ভেনেজুয়েলান গ্যাং সদস্য বলে অভিযোগ রয়েছে এবং তাদেরকে এল সালভাদরের একটি কারাগারে নির্বাসিত করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এক ব্যতিক্রমী বিবৃতিতে দাবি করেছে, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোনো এখতিয়ার নেই আদালতের। ভেনেজুয়েলান গ্যাং সন্দেহে এই নাগরিকদের এল সালভাদরের একটি কারাগারে নির্বাসিত করা হয়েছে।
বিচারক জেমস বোসবার্গের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এলিয়েন অ্যাক্ট-এর যুদ্ধকালীন ক্ষমতা ব্যবহার করে ২০০-র বেশি ট্রেন ডি আরাগুয়া গ্যাং সদস্যকে দ্রুত দেশ থেকে বের করে দেওয়ার থেকে বিরত থাকতে বলার পরই তাদের পত্যর্পণ করা হলো। এই গ্যাং অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভাড়ায় খুনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, 'একজন বিচারক একক কোনো শহর থেকে একটি উড়োজাহাজের গতিপথ ঠিক করে দিতে পারেন না…বিশেষ করে সেটিতে যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া বিদেশি সন্ত্রাসী রয়েছে।'

তিনি আরও দাবি করেন, আদালতের এরকম আদেশ দেওয়ার কোনো 'বৈধ ভিত্তি' নেই এবং প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ওপর সাধারণত আদালতের কোনো এখতিয়ার নেই।
এই ঘটনা মার্কিন সংবিধানের 'চেক অ্যান্ড ব্যালান্স' ব্যবস্থা এবং বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
থিঙ্কট্যাঙ্ক কাতো ইন্সটিটিউট-এর জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক স্বাধীনতা বিশেষজ্ঞ প্যাট্রিক এডিংটন বলেন, যা-ই বলুক না কেন, হোয়াইট হাউসের এই কাজ 'প্রকাশ্যে' আদালতের 'অবাধ্যতা'।
তিনি একে 'নজিরবিহীন' উল্লেখ করে বলেন, গৃহযুদ্ধের পর মার্কিন বিচার ব্যবস্থার ওপর এত বড় চ্যালেঞ্জ আর আসেনি।

শনিবার সন্ধ্যায় এক শুনানিতে বোসবার্গ ১৪ দিনের জন্য এলিয়েন অ্যাক্ট-এর প্রয়োগ স্থগিত করেন। তার যুক্তি ছিল, আইনটি কেবল তখনই প্রযোজ্য, যখন অন্য কোনো দেশের দ্বারা সংঘটিত 'শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড যুদ্ধের সমতুল্য হয়'।
শুনানিতে এই বিচারক বলেন, এই আইনের আওতায় যেসব অভিবাসীদের বের করে দেওয়া হয়েছে, তাদের বহনকারী ফ্লাইটগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত আসতে হবে।
কিন্তু পরদিনই এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাফতরম এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের আঁধারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে লোকজনকে বিমান থেকে নামানো হচ্ছে।
বুকেলে ওই পোস্টের ক্যাপশনে লেখেন, 'উপস…বড্ড দেরি হয়ে গেল। ফেডারেল জাজ ভেনেজুয়েলার গ্যাং সদস্যদের বহিষ্কারকারী ফ্লাইটগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।'
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তার এই পোস্ট রিটুইট করে 'সহায়তা ও বন্ধুত্বের জন্য' বুকেলেকে ধন্যবাদ জানান।
ক্যারোলিন লেভিট তার বিবৃতিতে দাবি করেন, 'আদালতের লিখিত আদেশ ও প্রশাসনের পদক্ষেপ সাংঘর্ষিক নয়'।
তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের 'যুক্তরাষ্ট্রের মাটি থেকে বিদেশি সন্ত্রাসীদের বিতাড়ন এবং আক্রমণ প্রতিরোধের' ক্ষমতার ওপর আদালত 'সাধারণত কোনো এখতিয়ার রাখে না'।

তবে বেশ কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবির বিরোধিতা করেছেন।
জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাডেক ব্লুস্কাই-এ পোস্ট করে বলেন, 'ফেডারেল আদালতের এখতিয়ার কেবল জলসীমার কাছে গিয়েই শেষ হয়ে যায় না। প্রশ্ন হলো—আদালতের আদেশের আওতাভুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থা এটি মান্য করছে কি না, বহিষ্কার কোথায় ঘটেছে সেটা নয়।'
কার্ডোজো ল স্কুলের অধ্যাপক ও অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞ পিটার মার্কোভিটস বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপ 'আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করেছে'—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ট্রাম্প প্রশাসন এই ভেনিজুয়েলানদের গ্যাং সদস্য, 'দানব' বা 'বিদেশি সন্ত্রাসী' বলে অভিহিত করলেও তারা সত্যিই অপরাধী কি না, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অভ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও এল সালভাদর সরকার এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
রয়টার্সও পুরো প্রত্যর্পণ অভিযানের ব্যাপ্তি বা বুকেলের ভিডিওর সুনির্দিষ্ট সময় নিশ্চিত করতে পারেনি।
লাতিন আমেরিকাজুড়ে অভিবাসীদের বহিষ্কারের মিয়ামিভিত্তিক গ্লোবাল ক্রসিং এয়ারলাইন্সকে নিয়োগ করেছে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। এয়ারলাইন্সটিও তাৎক্ষণিকভাবে ইমেইলে পাঠানো প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।
এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট বুকেলে জানান, বিতাড়িত ২৩৮ জন 'ভেনেজুয়েলান গ্যাং সদস্যকে' সন্ত্রাসবিরোধী মেগা-কারাগারে রাখা হবে। এ কারাগারে একসঙ্গে ৪০ হাজার বন্দি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।