বন্ধুত্ব চাইলে তিস্তা ইস্যু সমাধান, সীমান্তহত্যা ও ‘বড় দাদা’র মতো আচরণ বন্ধ করুন: ভারতকে ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে ভারতকে তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধান, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং 'বড় দাদা'সুলভ আচরণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমরা ভারতকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, যদি আপনার বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান, তবে তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে, সীমান্তে আমাদের নাগরিকদের গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে এবং বড় ভাইয়ের মতো আচরণ ত্যাগ করতে হবে।"
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) লালমনিরহাটে তিস্তা রেল সেতু পয়েন্টে 'জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই' শীর্ষক তিস্তা পাড়ে ৪৮ ঘণ্টা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলা জুড়ে ১১টি পয়েন্টে দুই দিনের কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আরও কঠোর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে তার ন্যায্য অধিকার আদায় করতে চায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়, তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে মর্যাদার ভিত্তিতে, যেখানে সব ন্যায্য ও প্রাপ্য অধিকার স্বীকৃত হবে।

ফখরুল বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকে আশা করেছিলেন, ভারত তিস্তার পানি নিশ্চিত করবে। "কিন্তু লবডঙ্কা! ১৫ বছরে [আওয়ামী লীগ] বাংলাদেশটাকে [ভারতের কাছে] বেচে দিছে, তিস্তার এক ফোঁটা পানি আনতে পারে নাই।"
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে ৩৬ দিনে, সবার লড়াইয়ের মাধ্যমে সে পালিয়েছে। কোথায়? ওই ভারতে।
"একদিকে [ভারত] পানি দেয় না, অন্যদিকে আবার আমাদের যে শত্রু, তাকে [[শেখ হাসিনা] দিল্লিতে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছে," বলেন ফখরুল।
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নির্দেশ দিচ্ছেন। "কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগের সব নেতা ভারতে পালিয়ে গেছেন।"

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেদের নিরপেক্ষ দাবি করে। "তবে এই জায়গায় কিন্তু নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে যে, আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই।"
ফখরুল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণ ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্থানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শেষদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি এসব মঞ্চে দিনভর থাকবে তিস্তা পাড়ের মানুষের সুখ দুঃখের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, ভাওয়াইয়া গানের আসর, ঘুড়ি উৎসবসহ নানান গ্রামীণ খেলাধুলা। এভাবে টানা ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা নদীর তীরেই অবস্থান করবেন রংপুরের ৫টি জেলার কয়েক লাখ মানুষ।
সমাবেশের বিভিন্ন স্পটগুলোতে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন— বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ, গণসংহতির সভাপতি জুনায়েদ সাকি।