অপারেশন ডেভিল হান্টে অস্ত্র উদ্ধার ‘আশানুরূপ নয়’: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অপারেশন ডেভিল হান্টে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'অভিযানে যতগুলো অস্ত্র উদ্ধার আশা করেছিলাম, সে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। তবে আস্তে আস্তে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হবে।'
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর এলাকায় আনসার ভিডিপির ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫তম জাতীয় সমাবেশে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
অপারেশন ডেভিল হান্ট কত দিন চলবে? -এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'যতদিন ডেভিল থাকবে, ততদিন ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে।'
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো জাতীয় ঐক্যমত্য হয়েছে কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'এই বিষয় নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'
দেশের স্বার্থে আনসার ভিডিপির অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আনসার ভিডিপির সদস্যরা আইনশৃঙ্খলার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে তারা অংশগ্রহণ করছে। যে সময় অনেক কিছু খালি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আনসার সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ছাড়েননি। তারা সবসময় ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।'
আনসার ভিডিপির সদস্যদের কিছু দাবির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, 'দেশ গড়ার কাজে আনসার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং এখনও রয়েছে। যেগুলো যৌক্তিক দাবি সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর যেগুলো অযৌক্তিক, সেগুলো বিবেচনা করা হবে না।'
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই বাহিনীর অবদানের কথা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরে প্রশংসা করেছেন।
গণঅভ্যুত্থানে আনসার ভিডিপির অবদানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, '২০২৪ সালের আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বাহিনীর সদস্যরা থানাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দেশের ক্রান্তিকালে সড়ক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে এ বাহিনীর সদস্যরা শতভাগ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছে।'
যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে বাহিনীর অগ্রযাত্রা আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায়, সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে নীতিমালা ও বিধিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ১৬টি আনসার ব্যাটালিয়ন সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৬ হাজার আনসান ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং ১৩ হাজার হিল আনসার ও হিল ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছে।'
উপদেষ্টা বলেন, 'এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিক মিশন এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানে এই বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। বর্তমানে ৫১ হাজার ৬৬৭ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ৫ হাজার ৭৫৭টি স্থাপনায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বাহিনীর ৩৯টি পুরুষ আনসার ব্যাটালিয়ন, ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন এবং একটি বিশেষ আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি), রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভিডিপি সদস্যদের জন্য ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরি ও নতুন অবকাঠামো সংযোজন করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) সহযোগিতায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাহিনীর মৌলিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আধুনিক ও যুগোপযোগী নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে, যা তরুণদের কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে।'
অনুষ্ঠানে বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য ভালো কাজের স্বীকৃতির জন্য ১৫৬ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্য-সদস্যাদেরকে আনসার ও ভিডিপির বিভিন্ন পদকে ভূষিত করা হয়।
উপদেষ্টা আনসার ভিডিপির সদস্যদের তৈরি হস্তশিল্প প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এ সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আনসার সদস্যদের তৈরি পণ্যের গুণগত মান, উৎপাদন খরচ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেন।
বিভিন্ন স্টলে নারী উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্প শুনেন। তাদের আনসার ভিডিপির উন্নয়ন ব্যাংকের আওতায় হত নিয়ে আরো ভালো করার পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠান সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আনসার বাহিনীর বিভিন্ন পদবীর কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।