নেতানিয়াহুকে রক্ষায় আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিল আটকে গেল মার্কিন সিনেটে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর পালটা জবাব হিসেবে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের একটি বিল পাস করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে এ বিল পাস হলেও আটকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটে বিলটি ৫৪-৪৫ ভোটে অনুমোদন পেলেও চূড়ান্ত পাসের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের বাধা অতিক্রম করতে পারেনি।
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে নিষেধাজ্ঞা বিল পাসের পক্ষে ভোট দেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। 'অবৈধ আদালত প্রতিক্রিয়া' আইন নামে এ বিল পাস হয়। তবে, সিনেটে বিলটি আটকে যাওয়ায় সেটি আইনে পরিণত হওয়া আপাতত অনিশ্চিত।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ, ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এবং আইসিসির বর্তমান ও সাবেক পরিচালনা পর্ষদের প্রেসিডেন্টরা বিলটির বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়বিচারের জন্য 'বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত' স্থাপন করবে।
তবে অনেক ডেমোক্র্যাট এই বিলের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, তারা আইসিসিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযুক্ত করেছেন, কারণ আদালত নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে, আইসিসি হামাস কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করেছে, যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার জন্য দায়ী।
ভোটের আগে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা চাক শুমার বলেন, 'আমি মূলত এই নিষেধাজ্ঞা বিলকে সমর্থন করি এবং এটিকে আইন হিসেবে দেখতে চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'যদিও আমি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির পক্ষপাতিত্বের বিরোধিতা করি এবং এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপকভাবে সংস্কার করতে চাই, তবে বর্তমান বিলটি খারাপভাবে খসড়া করা হয়েছে এবং এতে গুরুতর সমস্যা রয়েছে।' শুমার যুক্তি দেন যে, এই বিল মিত্র দেশগুলো ও আইসিসির সঙ্গে কাজ করা ব্যবসাগুলোর ক্ষতি করতে পারে।
তিনি রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানান বিলের ভাষা সংশোধনের জন্য নতুন করে আলোচনায় বসতে।
সিনেটে বিলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ও রিপাবলিকান সিনেটর জন থুন বলেন, 'একজন ঘনিষ্ঠ মিত্রকে লক্ষ্যবস্তু বানানো আমাদের সবার জন্য উদ্বেগজনক হওয়া উচিত।'
তিনি সতর্ক করে বলেন, 'আজ আইসিসি ইসরায়েলিদের লক্ষ্যবস্তু করছে, কিন্তু এটি সহজেই আগামীতে আমেরিকানদের দিকেও নজর দিতে পারে।'
এদিকে, ডেমোক্র্যাট দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে সিনেটর জন ফেটারম্যান বিলটির পক্ষে ভোট দেন। এর জন্য তাকে প্রশংসা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ইসরায়েলপন্থী লবিগোষ্ঠী আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি।
এর আগে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রত্যাহার করেন। গত সপ্তাহে পুনরায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প আবারও সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছেন।