Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
September 02, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, SEPTEMBER 02, 2025
মৃত্যুর মিছিল

ইজেল

শওকত হোসেন
21 August, 2020, 09:40 pm
Last modified: 22 August, 2020, 02:08 pm

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

মৃত্যুর মিছিল

ধারাবাহিক স্পাই থ্রিলার: তারিকের শেষ গোপন মিশন, কিন্তু বিশ্বাসঘাকতা কঠিন বিপদে নিয়ে ফেলল তাকে। বেঁচে ফিরতে হলে জীবন বাজি রাখা ছাড়া কোনো উপায় নাই। কিন্তু চারিদিকে শত্রু কাকে বিশ্বাস করবে...
শওকত হোসেন
21 August, 2020, 09:40 pm
Last modified: 22 August, 2020, 02:08 pm

২৫

বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য পরিসেবার সংযোগ পাওয়ার পর ওর সামান্য মালসামান বাড়িতে এনে তুলল তারিক। ওর অবসর গ্রহণের মামুলি কাগজপত্র বয়ে আনা পুরু খামটা বের করে ওটা থেকে ডাক্তারের নাম-ঠিকানাঅলা খামটা এবার খুলল ও। 

খামের ভেতর ওকে ডাক্তারের সাথে দেখা করার নির্দেশ দেয়া সরকারী কাগজপত্র রয়েছে। কাঁধ ঝাঁকাল ও, শেষে শূন্য বাড়িতে বসে উল্টাপাল্টা ভাবনায় সময় কাটানোর চেয়ে বরং লোকটার সাথে কথা বলাই ভালো ভেবে ফোন করল। পরদিন সকালে সাক্ষতের সময় স্থির হলো। 

ডাক্তারের নাম রন লঙলি।  রাজ্যের সবচেয় বড় শহর ম্যানচেস্টারে কাজ করে; লেক মেরি থেকে আনুমানিক এক ঘণ্টার রাস্তা। খরস্রোতা মেরিম্যাক নদীর তীর বরাবর দাঁড়ানো মেরামত করা ইটের দালানগুলোর একটায় তার অফিস। বহু বছর ফ্রেঞ্চ-কানাডিয়ানরা জুতো, কাপড় আর চামড়ার কারখানায় ঘাম ঝরিয়েছে এখানে,  পরে জর্জিয়া এবং আলাবামার ওদের দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়রা তাদের হাত থেকে কাজ ছিনিয়ে নেয়। সেই মানুষগুলোরই ঘামের গন্ধ যেন নাকে লাগছে বলে মনে হলো ওর।

প্রথম দেখায় রন লঙলি সম্পর্কে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারল না ও। নিজেকে ডিপার্টমেন্ট অভ ডিফেন্স কন্ট্রাক্টর হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া কাগজপত্র দেখাল সে। নিজের গোপনীয়তার মাত্রাও জানাল। তারপর স্বাভাবিক ইনস্যুরেন্সের আগডুমবাগডুম কাগজে সইসাবুদ দেয়া হলে আসল কথায় এলো ওরা। ওর চেয়ে বয়সে দশ বছরের ছোট হবে লোকটা, ঠোঁটের উপর গোফ আছে, মুখে আমোদিত হাসি, তবে চাঁদিতে চুল নেই। জিন্স আর হালকা নীল শার্ট এবং টাই পড়েছে, টাইটা দেখে মনে হবে বুঝি ছয় টিউব রংয়ের গামলায় চোবানো হয়েছে। 

'বেশ, বলল সে, 'তো এই হলো ব্যাপার।'

'হ্যাঁ,' বলল তারিক। 'বিশ্বাস করবে, তুমি কি সাইকোলজিস্ট নাকি সাইকায়াট্রিস্ট সেটাই বেমালুম ভুলে গেছি।'

একথায় শব্দ করে হেসে উঠল সে, হাত নাচাল। 'তেমন তফাৎ নেই। তা কি নিয়ে আলাপ করতে চাও তুমি?'

'কি নিয়ে আলাপ করব?'

কাঁধ ঝাঁকাল সে। এরকম ঝাঁকুনি আরও দেখতে হবে ওকে। 

'সত্যি,' কণ্ঠের চ্যালেঞ্জ লুকোনোর চেষ্টা না করেই বলল ও। 'তাহলে এটা দিয়ে শুরু করা যাক, ডক। এখানে কি করছি আমি সেটাই জানতে চাইছি। এমনিতে বিদায়ের সময় আমার সই করা চুক্তি আর ওই চুক্তির পেছনের ঘটনাগুলোই কারণ বলে জানি। তোমার এখানে হাজিরা না দিলে মাস শেষে চেক আসবে না আর ক্ষমা রদ হযে যেতে পারে, তাই।'

'বেশ সোজাসাপ্টাই বলেছ,' বলল সে। 'তবে কথাটা ঠিক।'

খেই ধরল ও। 'কিন্তু এরচেয়ে বেশি কিছু আছে নাকি? আরেকটা কথাও ভাবছি, সেটা হলো তোমার কাগজপত্র কিন্তু নিখুঁত। আমি কেমন আছি না আছি তার কোনো রিপোর্ট কি দক্ষিণে পাঠাতে হবে তোমাকে? কোনো ধরনের ডেডলাইন বা চাপের মুখে কাজ করছ?

পেটের উপর হাত ফেলে রেখেছে সে। মুখে হাসি অটুট। 'নাহ।'

'মোটেও না?'

'মোটেও না,' বলল সে। 'তুমি এখানে এসে পঞ্চাশ মিনিট টানা বেসবল নিয়ে আলাপ করলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।'

সরাসরি লোকটার চোখের দিকে তাকাল তারিক। অবসর নেয়ার পর ওর চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন দেখা দেয়ার কারণে হতে পারে, তবে, লোকটার হাবভাবের একটা কিছু ওর প্রতি বিশ্বাস জন্মাতে সাহায্য করল। অনেকদিন আগেই চিনতে শিখেছে ও। এবার ওর কাঁধ ঝাঁকানোর পালা। 'আসলে আমার মনে কি ভাবনা চলছে, জানো?'

'না, তবে জানতে চাইব।'

'আমার নতুন বাড়ি,' বলল ও। 'দারুণ। একটা বিরাট লেকের ধারে, ধারেকাছে পড়শী নেই। রাতে ডকে বসে আকাশের তারা দেখতে পারি, অনেকদিন যা দেখা হয়নি। তবে কিনা রাতে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে।'

'কেন শুনি?' জানতে চাইল সে। এই লাইনের ডাক্তাররা সাধারণত বেশুমার নোট টুকে রাখে, কেন কে জানে, তবে এই লোক তাদের মতো নয়, মনে মনে তাই খুশি হলো ও। 

'অস্ত্র।'

'অস্ত্র?'

মাথা দোলাল তারিক। 'হ্যাঁ, অস্ত্রের কথা মনে পড়ে।' লম্বা শ্বাস নিল ও। 'দেখ, তুমি আমার ফাইল দেখেছ, আমাকে কোথায় কোথায় পাঠানো হয়েছে, আঙ্কল স্যাম কি ধরনের কাজ করতে বলেছে, জানো তুমি। আমাকে এখানে নিয়ে আসা সাম্প্র্রতিক ঘটনার কথাও জানা আছে তোমার। এতগুলো বছর আমার সাথে কিংবা বিছানার নিচে কি ক্লোজিটের ভেতর পিস্তল, রাইফেল কিংবা ভারী কোনো অস্ত্র রেখে এসেছি। ওগুলো আমাকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে সাহায্য করত। কিন্তু ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করার পর থেকে, বেশ, এখন আর ওগুলো আমার কাছে নেই। সরকারের সাথে পৌঁছানো রফা মোতাবেক নতুন করে সব শুরু করতে হয়েছে আমাকে। তো এখন আর অস্ত্রশস্ত্র নেই।'

'এতে তোমার কেমন লাগছে?' সুরে বন্ধুসুলভ হলেও আদতে ডাক্তারসুলভ প্রশ্ন, বুঝতে পারল ও। বারের স্টুলে বসে তোলা মামুলি প্রশ্ন নয়। 

হাত কচলাল তারিক। 'ওসব না থাকায় আমি খুশি। সত্যি আমার স্বভাব বদলাচ্ছে মনে হচ্ছে। কিন্তু, ধেত্তেরি...'

'কি?'

হাসল ও।  'রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারলে ভালো লাগত।'

২৬

বাড়ি ফেরার পথে ডাক্তারকে বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবল ও, সব নির্জলা মিথ্যা, আপনমনে বলে উঠল। 

আসল কথা, সত্যি অস্ত্র আছে ওর কাছে। 

বেসমেন্টে ভারী কম্বিনেশন লকঅলা স্ট্রংরুমে তুলে রেখেছে ওসব, ব্যস। নিমেষে হাতের কাছে পাওয়া যাবে না ওগুলো, তবে নিশ্চিতভাবে একটাও হাতছাড়া করেনি ও।  
কিঞ্চিৎ হলেও অগ্রগতি বলতে হবে। সেভাবেই দেখতে হবে একে। তবে ঘুমের সমস্যার কথা বলার সময় ডাক্তারের কাছে মিছে কথা বলেনি ও। ওই অংশটুকু সর্বাংশে সত্যি।

কিন্তু গাড়ি হাঁকিয়ে খোয়া বিছানো রাস্তা ধরে নিজের বাড়ির দিকে এগোনোর সময় অন্য একটা মিথ্যা কথা মনের ভেতর খুঁতখুঁত করতে লাগল। ওর গাড়ির আওয়াজে ভয়ে পেয়ে নুড়ি পাথরের উপর দিয়ে ছুটে পালাল একটা তক্ষক। নতুন বাড়িতে থাকার আরেকটা সমস্যা আছে। তবে সেটা এতই তুচ্ছ, মুখে আনতে বিব্রত বোধ করে ও। 
সেটা হলো গোলমালের শব্দ।

পরিষ্কার হাওয়া, টলটলে পানির লেক, পাহাড় আর বনভূমির গ্রামীণ একটা স্বর্গে আছে ও। প্রতিবার পুরোনো রাজ্যের স্বপ্ন, পুরোনো ক্ষত এবং কানের কাছে আলীয়ার ফিসফিস কথা শুনে বিছানা ছাড়ার মুহূর্তে এই দৃশ্য দুমড়েমুচড়ে দেয় ওর মনটাকে। দীর্ঘ দিনগুলো হাজারো কাজে বস্ততার ভেতর কেটে যায়, তাই ওসব ভাববার ফুরসত মেলে না। বুড়ো ঝোপঝাড় ছাঁটা, শুকনো ডালপালা কাটা, আগামী বসন্তের কথা ভেবে চারা লাগানো। ওর ক্ষুদে সৈকত ঝরাপাতা আর অন্যান্য আবর্জনা মুক্ত করা। পাখির ফিডারে পানি ভরা। পোর্চ কিংবা ডকে বসে কেটে যায় দীর্ঘ সন্ধ্যাগুলো। ইতিহাস বই পড়ে, যদিও ওসবে দাঁত ফোটাতে কষ্টই হয়। 

তবে এক রাতে ঝলসানো মাংস আর লাল আলু দিয়ে ডিনার সেরে - রান্না করতে ভালোই লাগছে দেখে রীতিমতো অবাক মেনেছিল ও - ডকে সেই ১৯৫০-র দশকের ওয়েব লন চেয়ারে বসে আছে ও। ওর কোলে অ্যাপোলো কর্মসূচির ইতিহাসের উপর একটা বই পড়ে আছে। গোধূলি বেলা। লেক মেরির কিনারা বরাবর ক্ষুদে বসতবাড়িগুলোয় এক এক করে বাতি জ্বলে উঠেছে। প্রতিরাতেই বাতির সংখ্যা কমে আসছে। গ্রীষ্মে বেড়াতে আসা বেশিরভাগ লোক তল্পিতল্পা গুটিয়ে যার যার শহরতলী কিংবা অন্য কোনো জীবনে ফিরে যাবে বলে বিদায় হয়ে যাচ্ছে, লেকের চেয়ে ওই জীবনই ওদের চোখে  বেশি ভালো ঠেকে।  

হাতে ধরা পানীয়র গ্লাস, বই এবং মৃদুমন্দ হাওয়া উপভোগ করছে ও। তবে কেন যেন বারবার মনোযোগ টুটে যাচ্ছে। তিনটা হাই-পাওয়ার্ড স্পিডবোট ভীষণ জোরে ছুটে বেড়াচ্ছে, পানির ফোয়ারা ছিটিয়ে ভীষণ শোরগোল তুলছে। ইনার টিউবের লোকজনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ওগুলো। ওরা ফুর্তি করছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু তাতে বইয়ের পাতায় মন বসাতে কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর স্তিমিত হয়ে এলো এঞ্জিনের আওয়াজ। ওরা নিজেদের ডকে ফিরে যাচ্ছে, আন্দাজ করল ও। কিন্তু একসাথে ভাসতে ভাসতে রশি বদল করল নৌকাগুলো। অচিরেই বড়সড় একটা ভেলা বানিয়ে ফেলল ওরা। গোটা দুই গ্রিল বসাল ওটার উপর। আরো চেঁচামেচি, হৈহুল্লোড় কানে এলো। সাউন্ড সিস্টেম চালাল ওরা। রক মিউজিকের ভারী গমগমে আওয়াজ চারপাশের পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনি তুলল। 

বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে, এখন আর পড়ার উপায় নেই। গ্লাসের পানীয়র প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে ও। বুকের উপর আড়াআড়িভাবে হাত ভাঁজ করে জোরে দম নেয়ার চেষ্টা করল ও। হট্টগোল আরো চড়ে উঠেছে। হাল ছেড়ে নতুন বাড়িতে ফিরে এলো ও। জোরালো দুমমাদুম আওয়াজ পিছু নিলো ওর। ওর কাছে নৌকা থাকলে - আগামী বছরই কিনে নেবে একটা হয়তো - ওদের কাছে গিয়ে জিনিসটা বন্ধ করতে বলা যেত। কিন্তু তার মানে হতো লোকজনের সাথে কথা বলা। সেটা চায় না ও। 

তার বদলে দোতলায় নিজের শোবার ঘরে এসে দরজা জানালা আটকে দিল। কিন্তু সেই আওয়াজ ঘরের কড়িবর্গা যেন কাঁপিয়ে তুলতে লাগল। ছাদের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইল ও। মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে বেসমেন্টের জিনিসগুলোর কথা না ভাববার চেষ্টা করল।

২৭

সেরাতেই আরো পরে পানি খেতে ঘুম থেকে জেগে উঠল ও। তখনও চিল্লাচিল্লি আর গানের চড়া আওয়াজ চলছে। পেছনের বারান্দায় এসে লেকের ওদিকে নড়াচড়া চোখে পড়ল, হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। ডকের কাছে একটা গাছের ডালে সাবেক মালিক স্পট লাইট লাগিয়েছিল। ওটা তেমন একটা ব্যবহার করে না ও। কিন্তু এখন আগে বেড়ে পোর্চে লাগানো সুইচ টিপে দিল। কেউ একজন চিৎকার করে উঠল, তীক্ষè চিৎকারও শোনা গেল। একসাথে বাঁধা দুটো পাওয়ারবোট ভাসতে ভাসতে ওর বাড়ির তীরের দিকে এসে পড়েছে। ভয়ানক দর্শন কালো গোঁফঅলা এক পেশীবহুল লোকের গায়ে পড়েছে আলোটা। পাওয়ার বোটের স্টার্নে দাঁড়িয়ে লেকের জলে পেশাব করছে সে। তার নারীপুরুষ আধা ডজন সঙ্গী ওকে উদ্দেশ করে চেঁচামেচি জুড়েছে। চলতে শুরু করল নৌকাটা। দুজন পুরুষ আর একটা মেয়ে টলমল পায়ে নৌকার একপাশে এসে বাদিং স্যুট নামিয়ে নিতম্ব দেখাল। আরো জনা দুই একটা আঙুল উঁচিয়ে অশ্লীল ইঙ্গিত করল। তারপর গতি বাড়িয়ে বিদায় নেয়ার সময় অসংখ্য বিয়রের বোতল আর ক্যান বৃষ্টির মতো ছুঁড়ে ফেলতে শুরু করল। 

পরের একটা ঘণ্টা স্রেফ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় কাটিয়ে দিল ও।  

পরদিন দুটো ফোন করল ও। একটা টাউন হলে, অন্যটা নানসেনের পুলিস ডিপার্টমেন্টে। ভদ্র ভাষায় কিছু খোঁজখবর নিল, দুই অফিস থেকেই ভদ্রজনোচিত জবাব মিলল। নৌকা নিয়ে তীরের নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব পর্যন্ত আসার ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই। একসাথে নোঙর ফেলার বেলায়ও কোনো আইন নেই। নানসেন বেশ ছোট শহর হওয়ায় শোরগোলের বিরুদ্ধেও কোনো আইন নেই। 

আহা, নিজের বাড়ি বটে, ভাবল ও। 

২৮

এবার রনের সাথে দেখা করতে গেলে দেখা গেল বো-টাই পরে আছে সে। কাজের কথা শুরুর আগে কিছুক্ষণ নেকটাইয়ের ফ্যাশন নিয়ে আবোলতাবোল কথাবার্তা চালাল ওরা। আগের সেশনে প্রায় পঞ্চাশ মিনিট গভর্নরকে জড়িয়ে চলমান রাজনৈতিক কেলেঙ্কারী নিয়ে কথা বলেছে ওরা। কিন্তু এবার ডাক্তার জানতে চাইল, 'এখনও ঘুমের সমস্যা হচ্ছে?'

হাসতে পেরে গর্ব বোধ করল তারিক। 'না, মোটেই না।'

'সত্যি?'

'সত্যি,' বলল ও। 

'তা কি কারণ তার?'

'এখন শরৎ কাল যে,' বলল ও। 'ট্যুরিস্টরা ঘরে ফিরে যাওয়ায় লেক তীরের বেশিরভাগ কটেজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর নৌকা নিয়ে বের হচ্ছে না কেউ। রাতে সবকিছু এমন সুনসান নীরব হয়ে থাকে যে ঘরের ক্যাঁচকোঁচ শব্দও শুনতে পাই।'

'বেশ ভালো, সত্যি ভালো,' বলল রন। হেসে প্রসঙ্গ পাল্টাল ও। আধঘণ্টা পর নানসেনে নিজের বাড়ির পথ ধরল ও। মাত্র বলে আসা ডাহা মিথ্যা কথাগুলো নিয়ে ভাবছে। আসলে ঠিক মিথ্যা নয়, বরং এক ধরনের ভুল।

অচেনা লোকের ফোন করে কথা না বলে রেখে দেয়ার কথা রনকে বলেনি ও। কিংবা কদিন পরপর ওর দরজায় ফেলে যাওয়া আবর্জনার কথা। কিংবা সপ্তাহ খানেক আগে কেনাকাটা করতে গেলে কে বা কারা ওর বাড়ির একটা জানালা দিয়ে বুলেট পাঠিয়েছিল, সেটাও বলেনি। শিকার করতে গিয়ে ভুলে ঘটে যেতে পারে। যদিও শিকারের মৌসুম এখনও শুরুই হয়নি, তবে জানে এই শহরের কিছু শ্রমিকের বেলায় রাজ্য কখন শিকারের অনুমতি দিচ্ছে তাতে থোড়াই এসে যায়। 

শ্রেফ ড্রাইভওয়ে সাফ করে নিয়েছে ও। বেনামী ফোনগুলো অগ্রাহ্য করার চেষ্টা করেছে। শিকারীদের গা ঢাকা দেয়ার সম্ভাব্য জায়গা নিকেশ করতে ঝোপঝাড় ছেঁটেছে। 

এতকিছুর পরেও এখানে থাকতে ভালো লাগছে। পায়ের উপর কম্বল জড়িয়ে ডকে বসে থাকতে পারে, দূরের সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখে, লালচে-গোলাপি আভা তখন গাছপালার হলদে, কমলা এবং লাল ডালপালা রাঙিয়ে তোলে। স্লেট-ধূসর লেকের পানি, অভিবাসী পাখিদের কথা মনে পড়লেও পাতা আর ওর বাড়ির লাকড়ির দূরাগত ধোঁয়ার গন্ধ ঠিকমতো মানিয়ে গেছে বলেই মনে হয়। 

অবসরের অপেক্ষায় থাকার বছর, মাস এবং সপ্তাহগুলোয় এমন কিছুই চেয়েছিল ও, এটাই ওর আকাঙ্ক্ষিত ছিল। 

এমনি মুহূর্তগুলোয় বেসমেন্টের জিনিসগুলোর কথা মাথায় না রাখা সহজ হয়ে যায়। 

২৯

আবহাওয়া আরো কিছুটা শীতল হয়ে আসার পর কয়েক দিন অন্তর সকালের নাশতা সারতে নানসেন শহরে যাতায়াত শুরু করল ও। নিউ হ্যাম্পশায়ারের যেকোনো ছোটখাটো শহরের উপর কোনো প্রেজেন্টেশন হলে নানসেন শহরটাকে অনায়াসেই এক নম্বর প্রদর্শনী হিসাবে চালিয়ে দেয়া সম্ভব। ছোট আকারের মোড় - মাঝখানে গৃহযুদ্ধের একটা ভাস্কর্য - ঘিরে একটা ব্যাংক, একটা রিয়েল এস্টেট অফিস, একটা হার্ডঅয়্যার স্টোর, দুটো সার্ভিস স্টেশন, একটা জেনারেল স্টোর আর গ্রেচেন'স কিচেন নামে একটা রেস্তরাঁ, ব্যস এই হলো শহর। 

দুপুরের খাবার আর কালেভদ্রে রাতের খাবারের জন্যে গ্রেচেন'স-এ যায় ও। তবে নাশতার জন্যে যেতেও ভালো লাগে, কারণ অলস সকালে বেশ কিছু পত্রিকা পড়ার সুযোগ মেলে। কাউন্টারে বসা বুড়োদের মুখে দেশ, জাতি, দীন-দুনিয়ার অধঃপতন নিয়ে আহাজারি শোনে। ব্যস্তসমস্ত শ্রমিকদের তাড়াহুড়ো করে এসে আটঘণ্টার দুর্দশা শুরুর আগে নাকে মুখে চারটে গুজে দিতে দেখতেও ভালোই লাগে। সাধারণত কোণের বুদেই বসে ও। স্যান্ডি নামে এক ওয়েট্রেস ওকে নিয়ে কিছুটা কৌতূহলী হয়ে উঠছে, টের পেয়েছে ও। 

বয়সে ওর চেয়ে বছর বিশেক ছোট হবে মেয়েটা। রেগুলেশন গোলাপি ইউনিফর্ম ওর প্রীতিকর  দেহ সৌষ্ঠবের শরীরের সাথে খাপে-খাপে বসে গেছে। ঘন কালো চুল মাথায়,  ঠোঁটে সবসময় চওড়া হাসি ফুটে থাকে। ওর তরফ থেকে টানা দুই সপ্তাহের দুষ্টামি আর ওর হাত থেকে দরাজ বখশিসের সুবাদে শেষমেশ ওকে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিল ও। মেয়েটা রাজি হলে পিকআপ ট্রাকে গলা ছেড়ে হাসল ও। সত্যিকারের একটা ডেট হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রিয় আলীয়ার কথা মনে পড়তেই হাসি বিদায় নিল। ট্রাক চালু করল ও। 

ওর বোঝা উচিত। কেউ বুঝলে সেটা আলীয়া।

ওকে সতর্ক থাকতে বলে দেবে ও, কিন্তু স্বভাবের কারণেই ওকে অগ্রাহ্য করল ও। 

৩০

প্রথম ডেট ছিল মন্টেকামের ওদিকে গোটা দুই শহরে ডিনার, দ্বিতীয়টা ম্যানচেস্টারের বাইরে ডিনার এবং সিনেমা দেখা, এবং তৃতীয় দফায় ওর বাড়িতে রান্না করা খাবারে ডিনার। লিভিং রুমে পছন্দমতো ছবি দেখে শেষ হওয়ার কথা ছিল সেটার, কিন্তু কিভাবে যেন শেষে শোবার ঘরে হাজির হলো ওরা। এই অবসরে স্যান্ডির আগাগোড়া নানসেনে থাকার কথা জানতে পেল ও। দুটো অল্প বয়সী ছেলে আছে ওর, স্বামীর সাথে তালাক হয়ে গেছে, আবার পড়াশোনা শুরু করতে টাকা জমাচ্ছে, ভবিষ্যতে আইনি বিষয়ে লোকজনকে সাহায্য করতে চায়। 'আমি আজীবন মাছ কাটাকুটি করে বিলির প্রত্যেক সপ্তাহয় ভরণপোষণের চেক পাঠানোর কথা মনে করার জন্যে অপেক্ষা করব ভাবলে বোকামী করবে,' বলল সে। 

শোবার ঘরের বিরতি শেষে - অন্তত ওর তরফে তীব্রতার কারণে বেশ বিস্মিত হয়েছে ওÑআবার পেছনের বারান্দায় বেরিয়ে এলো ওরা। স্যান্ডির সিগারেট খাওয়ার সুবিধার জন্যে একটা জানালা খুলে দিল ও। নিজের ঘরে কাউকে সিগারেট খেতে দিতে রাজি নয়। ঘরের ভেতরটা উষ্ণ, শর্টস পরে আছে ও; শরীরে একটা তোয়ালে জড়িয়ে নিয়েছে স্যান্ডি। একটা ইজি চেয়ার  পেতে নিল তারিক। ওর কোলে পা রেখে কাছের একটা কাউচে বসল স্যান্ডি। 

ওদের দুজনের হাতেই পানীয়র গ্লাস। উষ্ণ, আরামপ্রদ, তরতাজা লাগছে ওর। সিগারেটে টান দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে ওর দিকে আড়চোখে চাইছে স্যান্ডি। বাতি না জ্বেলে গোটা দুই মোমবাতি জ্বালিয়েছে ও। আবছা আলোয় ওর ডান কাঁধে ইউনিকর্নের একটা ছোট্ট ট্যাট্টু দেখতে পাচ্ছে ও। 

ওর দিকে ফিরে স্যান্ডি জানতে চাইল, 'সরকারী কাজ করার সময় কি করতে তুমি?'

'প্রচুর ঘোরাফেরা আর আজেবাজে খাবার গিলতাম।'

'না, আসলে,' বলল সে। 'সোজাসাপ্টা উত্তর চাই আমি।'

বেশ, ভাবল ও, বিশেষ কিছু চুক্তি না ভেঙে যতটা পারা যায় সোজাসাপ্টা জবাবই দিচ্ছি। 'অনেক সময় বিদেশী সেনাবাহিনীর উপদেষ্টা ছিলাম। অনেক সময় ওদের বিশেষ কোনো অস্ত্র চালানোর কায়দা শিখতে সাহায্য দরকার হতো, কিংবা কোনো কৌশল শিখতে ট্রেনিং লাগত। এটাই ছিল আমার কাজ। অন্যান্য সময় সরাসরি ডিপার্টমেন্ট অভ ডিফেন্সের হয়ে কাজ করেছি, তখন যখন যে হুকুম হয়েছে সেইমতো কাজ করেছি।'

'ভালো ছিলে?'

বড্ড বেশি। 'ঠিকমতোই কাজ সেরেছি।'

'তোমার গায়ে বেশ কিছু ক্ষতচিহ্ন দেখলাম।'

সার্বিয়ার সেই দীর্ঘ এবং আপাত অন্তহীন রাত। 'তা আছে।'

কাঁধ ঝাঁকাল সে। অলস টান দিল সিগারেটে। 'এরচেয়ে খারাপ অবস্থাও দেখেছি।'

কথার ধারা কোনদিকে যাচ্ছে বুঝতে পারল না ও। 'তুমি কখন চলে যাবে?' প্রশ্ন করলে আরো অনিশ্চিত বোধ করল ও। 

বিভ্রান্ত হয়ে বলল, 'আজ রাতের কথা বলছ?'

'না,' বলল সে। 'বলতে চাইছি কবে নানসেন ছেড়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছ?' 

ঘেরাও করা উষ্ণ বারান্দার চারদিকে নজর চালিয়ে তারিক বলল, 'এটাই আমার ঘর।'

যেন পড়া ভুলে যাওয়া ছাত্রকে শুধরে দিচ্ছে শিক্ষক, এমনি ভঙ্গিতে মেয়েটা বলল, 'না, এটা তোমার ঘর নয়। গেরিশ পরিবার এই বাড়িটা বানিয়েছিল। এটা সবসময়ই গেরিশদের বাড়ি থাকবে। তুমি এখানে থাকছ কিনা তাতে কিছু এসে যায় না। দূর থেকে এসেছ তুমি, এটা তোমার বাড়ি নয়।'

হাসার চেষ্টা কলল ও। যদিও মেজাজ খিঁচড়ে যেতে চাইছে। 'বেশ, তোমার সাথে ঠিক একমত হতে পারছি না, স্যান্ডি।'

একটা মুহূর্ত কিছুই বলল না সে। সিগারেট থেকে কু-লী পাকিয়ে ভেসে যাওয়া ধোঁয়া জরিপর করতে লাগল। অবশেষে বলল, 'শহরের কিছু লোক তোমাকে পছন্দ করছে না। ওদের ধারণা উদ্ধত ধরনের মানুষ তুমি, অন্য কোথাও থাকার কথা যার, এখানে যাকে মানায় না।'

হঠাৎ যেন পোর্চটা শীতল হয়ে এসেছে বলে মনে হলো। 'কি ধরনের লোকজন?'

'গার ভাইরা। জেরি টম্পকিন্স। কিট ব্রডেরিক। আরও কয়েকজন আছে। শহরের লোকজন। ওরা বিশেষ করে তোমাকে পছন্দ করে না।'

'আমি পরোয়া করি না,' পাল্টা জবাব দিল ও।

সিগারেটের গোড়া নেভানোর সময় মৃদু কাঁধ ঝাঁকাল ও। 'করবে।'

  • [চলবে]

Related Topics

টপ নিউজ

স্পাই থ্রিলার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ায় বরখাস্ত হলেন সহকারী কর কমিশনার
  • প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুর্ভোগ এড়াতে র‌্যালির পরিবর্তে খাল-নর্দমা পরিষ্কার করবে বিএনপি
  • কারাগার থেকেই ভার্চুয়ালি হাজিরা দিলেন পলক, সালমান, আনিসুল, দীপু মনিসহ ২৪ আসামি
  • ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের জামিন আবেদন প্রত্যাহার করলেন আইনজীবী
  • ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করলেন হাইকোর্ট
  • ডাকসু নির্বাচন হতে বাধা নেই, হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত

Related News

  • ‘দ্য ম্যান ফ্রম আংকল’-এর হার্টথ্রব স্পাই ডেভিড ম্যাককালাম মারা গেছেন
  • গুপ্তচর থেকে রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার লেখক জন লে কারের বিদায়
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল
  • মৃত্যুর মিছিল

Most Read

1
বাংলাদেশ

৩৮ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ায় বরখাস্ত হলেন সহকারী কর কমিশনার

2
বাংলাদেশ

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুর্ভোগ এড়াতে র‌্যালির পরিবর্তে খাল-নর্দমা পরিষ্কার করবে বিএনপি

3
বাংলাদেশ

কারাগার থেকেই ভার্চুয়ালি হাজিরা দিলেন পলক, সালমান, আনিসুল, দীপু মনিসহ ২৪ আসামি

4
বাংলাদেশ

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের জামিন আবেদন প্রত্যাহার করলেন আইনজীবী

5
বাংলাদেশ

৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করলেন হাইকোর্ট

6
বাংলাদেশ

ডাকসু নির্বাচন হতে বাধা নেই, হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net