স্যান ডিয়েগোর ২০ বছর বয়সী ‘এশিয়ান স্টিফেন হকিং’!

ছয় মাস বয়সে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি রোগে আক্রান্ত হন বেন লু। এর পর স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ানো বা চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে সে। জীবনযাপনের জন্য এখন সে পুরোপুরি তার মা জেনির ওপর নির্ভরশীল। দিনের বেশিরভাগ সময় তার হুইলচেয়ারে বসেই কাটে। তবে এতে দমে যায়নি বেন। তার বয়স এখন ২০। এই বয়সেই নিজের মেধা দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে চীনের এই তরুণ। তার প্রতিভার জন্য অনেকেই তাকে নাম দিয়েছে এশিয়ান স্টিফেন হকিং।
স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি একটি বিরল রোগ। এ রোগে সাধারণত মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্র ও পেশিগুলো আক্রান্ত হয়। এ রোগের কারণেই বেন স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না।
বেনের মা জেনি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তবে ছেলের কারণে তিনি চাকরিটি ছেড়ে দেন। ছেলের দেখাশোনার জন্য দিনের প্রায় ১৬ ঘণ্টা সময়ই ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে।
গণিত ও পদার্থের প্রতি প্রবল আগ্রহ বেনের। সে ভবিষ্যতে নিজেকে একজন গণিতবিদ ও পদার্থবিদ হিসেবে দেখতে চায়।
বেন বলে, 'আমি গণিত এবং পদার্থবিদ্যার সৌন্দর্যের মাধ্যমে মানসিকভাবে আমার শারীরিক সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠছি।'
প্রতিবার থেরাপি করানোর সময় নিজের মনকে আরো দৃঢ় করে বেন। যখন তার থেরাপি চলে তখন সে ল্যাপটপে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিষয়ে জানার চেষ্টা করে।
সে নিজেকে একজন রোগী হিসেবে বলার চেয়ে গণিতবিদ ও দার্শনিক হিসেবে ভাবতেই বেশি পছন্দ করে।
শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা এম.আই.টি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জনে বেনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তার মনে রাখার ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। আশ্চর্যের বিষয় হলো, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই ক্যালকুলাস পড়ে ফেলেছে বেন। ১১ বছর বয়সের মধ্যেই সে চীনের আলীবাবা ওয়ার্ল্ড ম্যাথ টিম কম্পিটিশনে ৫০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে স্বর্ণপদকও জিতেছে এশিয়ার হকিংখ্যাত বেন।
হাইস্কুলে পড়া অবস্থায় বেন ম্যাথ এসএটি পরীক্ষায় ৮০০ নম্বর অর্জন করে। এর মধ্য দিয়ে সে এম.আই.টি. পরীক্ষায় বসার সুযোগ লাভ করে।

বেন বলছিল, 'যেহেতু আমার শরীর পুরোপুরি কাজ করে না, তাই আমি আমার সমস্ত শক্তি আমার মস্তিষ্কের পেছনে ব্যয় করি।'
বেনের এই অপ্রতিরোধ্য লড়াইয়ে চীনের মানুষও মুগ্ধ। বেনের গল্প নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছে। বেনের ধারণা, তার এই ছবি ৫০ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ হয়েছে।
ছেলের প্রতি মানুষের এমন আগ্রহ দেখে বেনের মা জেনিও বিস্মিত। তিনি জানান, যখন বেনকে নিয়ে তিনি বাইরে যান, তখন মানুষজন বেনকে দেখে চিনতে পারে।
পুরস্কারজয়ী বেন বলেছে, 'কিছু লোক বলে যে তোমার এমনভাবে বাঁচা উচিত যেন মনে হয় এটাই তোমার শেষ দিন। কিন্তু আমি সেরকমটা ভাবি না। এমনটা ভাবলে আপনি অনেক দূরদর্শী পরিকল্পনা করতে পারবেন না।
বেন এমন একটি ব্যবস্থা বা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে চান যা তাকে সত্যিকারের এশিয়ান স্টিফেন হকিংয়ের খেতাব এনে দেবে। এছাড়াও সে এমন কিছু আবিষ্কার করতে চায়, যার মাধ্যমে সে নিজের খাবার নিজেই খেতে পারে এবং তার মায়ের কিছুটা সময় বাঁচাতে পারে।
ভবিষ্যতের লক্ষ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বেন জানায়, সে মহাবিশ্বের গোপনীয়তা বুঝতে চায়। সে মনে করে বিজ্ঞান ও গণিত মহাবিশ্বের রহস্য বের করার জন্য ভাল হাতিয়ার।
বেন বর্তমানে মায়ের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো শহরে বসবাস করছে। আগামী বছর তার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হবে।