Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
May 31, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, MAY 31, 2025
দরিদ্রের ভরসা ছিল খেসারি ডালে, যেভাবে খেসারি শত্রু হলো!

ফিচার

প্রিয়দর্শিনী চ্যাটার্জি, স্ক্রল ইন
01 March, 2023, 01:15 pm
Last modified: 02 March, 2023, 11:53 am

Related News

  • পাঠ্যবই বদলেই মুছে ফেলা যাবে না ভারতের জটিল ইতিহাস—মুখোমুখি হওয়াটাই প্রয়োজন
  • আড়াই হাজার বছরের তক্ষশীলা: ইতিহাসের অতলে হারানো এক আধুনিক নগর
  • ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের মতো ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ নতুন কিছু নয়
  • জাহাঙ্গীরের টার্কির চিত্রকর্ম ও ভারতবর্ষে খাদ্যবস্তুর জটিল ইতিহাস
  • ইউক্রেনকে নিজ দেশের শান্তি আলোচনায় ডাকা হয়নি, ইতিহাসে এমন উদাহরণ অসংখ্য!

দরিদ্রের ভরসা ছিল খেসারি ডালে, যেভাবে খেসারি শত্রু হলো!

উত্তর এবং মধ্য ভারতবর্ষের গ্রামগুলোতে উনবিংশ শতাব্দীতে দেখা যায় এক ধরনের রোগ। হাজার হাজার লোক পঙ্গু হয়ে পড়ে, দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের পা। 'ল্যাথিরিজম' নামক এ রোগের ফলে তাদের চলনশক্তি হারিয়ে যায়। গ্রামের পর গ্রাম লোকদেরকে এসময় দেখা যেত পা কাঁপিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, কেউ কেউ বাঁশের ওপর ভর দিয়ে কষ্টে হেঁটে চলছে, আবার কেউ চলছে হামাগুড়ি দিয়ে। এই রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয় আপাতনিরীহদর্শন এক খাবারকে: খেসারি ডাল!
প্রিয়দর্শিনী চ্যাটার্জি, স্ক্রল ইন
01 March, 2023, 01:15 pm
Last modified: 02 March, 2023, 11:53 am
খেসারি ডাল/ ছবি- সংগৃহীত

জীবনধারণের জন্য উনবিংশ শতাব্দীর ভারতবর্ষ কোনো সহজ জায়গা ছিল না। কয়েক বছর পরপরই খরাসহ অন্য কারণে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো। লক্ষ লক্ষ লোক মারা যেত না খেয়ে বা রোগে, অথবা দুটোতেই।

উত্তর এবং মধ্য ভারতবর্ষের গ্রামগুলোতে এসময়টায় দেখা যায় আরেক ধরনের রোগ। হাজার হাজার লোক পঙ্গু হয়ে পড়ে, দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের পা। ল্যাথিরিজম নামক এ রোগের ফলে তাদের চলনশক্তি হারিয়ে যায়। গ্রামের পর গ্রাম লোকদেরকে এসময় দেখা যেত পা কাঁপিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, কেউ কেউ বাঁশের ওপর ভর দিয়ে কষ্টে হেঁটে চলছে, আবার কেউ চলছে হামাগুড়ি দিয়ে। 

এই রোগের কারণ হিসেবে ধরা হয় আপাতনিরীহদর্শন এক খাবারকে: খেসারি ডাল!

উনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ঔপনিবেশিক নথিতে উত্তর এবং মধ্য ভারতে ল্যাথিরিজম মহামারির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৮৭৪ সালে নেপলসের ডাক্তার আর্নল্ডো কান্তান ল্যাথিরিজম শব্দের প্রচলন ঘটান। 

এলাহাবাদে একবার ল্যাথিরিজমের মহামারি দেখা গেলে সিভিল সার্জন ড. জেমস আরভিং স্থানীয় লোকদের মধ্যে খেসারি ডাল খাওয়ার প্রবণতা দেখতে পান। এরপর এক জরিপ করা হয়, যেখানে এই রোগের কারণ হিসেবে ল্যাথিরাস স্যাটিভাস বৈজ্ঞানিক নামের এই ডালকেই দায়ী করা হয়।

আরভিং তার বর্ণনায় লেখেন, "হাজার হাজার লোক জানে এই বিশেষ শস্য তাদেরকে পঙ্গু বানিয়ে দিতে পারে। তারপরেও তারা এই খাবারই খেয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে এই বিষাক্ত খাবার থেকে দূরে রাখার জন্য কি কিছু করা যায়?"

নাৎসিদের অনুসন্ধান

খেসারি ডালের সাথে যে ল্যাথিরিজমের সম্পর্ক আছে তা কয়েক শতক ধরে প্রচলিত। ভারতের অনেকেই মনে করেন, প্রাচীন ভারতীয় যুগে লেখা 'সুশ্রূত সংহিতা'য় পা কাঁপা এবং সন্ধি আলাদা হয়ে যাওয়া 'কলায়খঞ্জ' নামে যে রোগের উল্লেখ করা হয়েছে, তা আদতে ল্যাথিরিজমই। অনেক গবেষকই আবার মনে করেন, কলায় বলতে খেসারিকেই বোঝানো হয়েছে।

ছবি- এএফপি

ল্যাথিরিজমের সাথে খেসারি ডালের যে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে তা প্রথম উল্লেখ করা হয় ষোড়শ শতাব্দীর সংস্কৃত ভাষায় লেখা 'ভাবপ্রকাশে'। সেখানে লেখা হয়, "খেসারি বা ত্রিপুতা শ্লেষ্মা ও পিত্ত দূর করে। তবে এর ফলে ব্যক্তি খোঁড়া হয়ে যায়, একইসাথে এটি স্নায়ুর ওপরেও খারাপ প্রভাব ফেলে।"

ল্যাথিরাস স্যাটিভাসে যে বিষাক্ততা রয়েছে তার একটি নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৪২ সালে, যখন নাৎসিরা ইউক্রেনের ভ্যাপনিয়ারকা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে থাকা রোমানিয়ান ইহুদিদের মূল খাবার হিসেবে খেসারি ডালকে যোগ করে।  সেসময় প্রায় ১,২০০ ইহুদির পা অচল হয়ে পড়ে। তবে এর ভেতরে থাকা কোন জিনিসটি মানুষকে পঙ্গু করে তোলে তা আবিষ্কার হয় আরও দুই দশক পর: বিটা-এন-অক্সালিল-অ্যামাইনো-এল-অ্যালানিন।

বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরাও নিশ্চিত হয়ে যান খেসারি ডাল দীর্ঘসময় ধরে বেশি পরিমাণে খেলে ল্যাথিরিজম হয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ভারতীয় সরকার ১৯৬১ সালে প্রিভেনশন অফ ফুড অ্যাডাল্টিরেশন অ্যাক্টের অধীনে খেসারি ডাল বিক্রি এবং মজুদ করাকে নিষিদ্ধ করে।

নিষিদ্ধ ঘোষণার পরপরই সারা ভারত জুড়ে খেসারি ডালের বিষাক্ততা জানানোর জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা হলেও আঞ্চলিক রাজ্যগুলোও নিজেদের রাজ্যতে বাড়তি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার শুরুটা হয় উত্তর প্রদেশকে দিয়ে। তবে পশুখাদ্যের জন্য খেসারি ডাল উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়।

প্রধান খাদ্য

কেন্দ্রীয় নিষেধাজ্ঞা সফল হয়। খেসারি ডাল খাওয়ার পরিমাণ এবং উৎপাদন দুটোই কমে আসে। ১৯০৭ সালে মধ্য প্রদেশের রেবা অঞ্চলের মহারাজা নিজ রাজ্যে ল্যাথিরিজমের ব্যাপক প্রকোপ দেখা যাওয়ার পর খেসারি ডালকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তখন রেবা অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে খেসারি ডাল এতটাই গভীরে প্রোথিত ছিল যে নিষেধাজ্ঞা তেমন প্রভাব রাখতে পারেনি।

খেসারি ডাল কতটা প্রচলিত ছিল তার একটা চিত্র পাওয়া যায় ১৯২২ সালে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গ্যাজেটে প্রকাশিত মেজর হিউ অ্যাক্টনের একটি প্রবন্ধে। প্রবন্ধের নাম 'অ্যান ইনভেস্টিগেশন ইনটু দ্য কজেশন অফ ল্যাথিরিজম ইন ম্যান'। কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের প্যাথোলজি ও ব্যাক্টেরিওলজির অধ্যাপক ছিলেন অ্যাক্টন। তার প্রবন্ধে মধ্য ভারতে কীভাবে খেসারি ডালকে খাওয়া হয় তার একটি বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি। খেসারি ডাল খাওয়ার একটি ধরন, একে গুঁড়ো করে ছাতু বানিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে লবণ আর মরিচের সাথে ভর্তা করে খাওয়া। আরেকটি ধরন হলো, একে দুই ভাগ করে রোদে শুঁকিয়ে মশলা আর পিঁয়াজের সাথে স্যুপের মতো রান্না করে খাওয়া। খেসারি ডাল খাওয়ার তৃতীয় আরেকটি ধরনের কথা উল্লেখ করেন তিনি: খেসারি ডালকে গুঁড়ো করে পেস্ট বানিয়ে পিঁয়াজুর মতো তেলে ভেজে খাওয়া।

লৌকিক শব্দকোষের লেখক কামিনীকুমার রায় লিখেছেন কীভাবে বাংলার একজন গরীব গৃহস্থ মহিলা কেবল খেসারি ডাল দিয়েই পুরো এক বেলার খাবার রান্না করে ফেলতেন। খেসারির ডাল দিয়ে খিচুড়ির সাথে সাথে খেসারি আর তেঁতুলের ঝোলের তরকারি, খেসারি ভর্তা, পেঁয়াজুর মতো খেসারির ডাল দিয়ে বানানো ভাজি পর্যন্ত অনেক কিছুই বানানো হতো।

খেসারি গাছ/ ছবি- সংগৃহীত

অষ্টাদশ শতাব্দীতে মরিশাসের ভারতীয় অভিবাসী শ্রমিকদেরও প্রধান খাবার ছিল খেসারি ডাল। সেখানকার ভোজপুরি শ্রমিকদের একটি গানেই উল্লেখ রয়েছে খেসারি ডালের কথা।

আঙ্গাজে রাহাল ভাইয়া, আঙ্গাজে রাহাল ভাইয়া!
এক মাহিনভা ম্যায় পাঁচ গো রুপাইয়া হো
খায়কে মোটা চৌর, রাহাল খুবে লাল
কোকো কে তেল অর খেসারি কা ডাল!

দাস হয়ে থাকবো, ভাই। দাস হয়ে থাকবো, ভাই!
এক মাসে থাকে পাঁচ রুপি
খাবো মোটা চালের ভাত আর থাকবো খুশি
নারকেল তেল আর খেসারির ডাল!

চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক

"খেসারি হলো দরিদ্রদের ডাল। যাদের হাতে কম পয়সা আছে তাদের আমিষের চাহিদা মেটে এই ডাল দিয়ে। কেবল দামেই কম নয়, এটি রান্না করতেও কম তেল লাগে," বলে জানান বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান ড. বিজয়নাথ মিশরা। তিনি এমন কিছু বিজ্ঞানীদের একজন, যারা খেসারি ডাল নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেন। তার মতে, "যদি স্বাভাবিকভাবে খেসারি ডাল খাওয়া হয় এবং ডাল ছাড়াও অন্যান্য খাবার খাওয়া হয়, তখন নিউরোল্যাথিরিজমের কোনো অস্তিত্ব দেখা যায় না।"

উত্তর প্রদেশের গাজীপুর অঞ্চলে ৯ হাজার মানুষের ওপর খেসারি ডালের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে একটি গবেষণা চালান মিশরা। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগেরই খাবারের একটি বড় অংশ ছিল খেসারি ডাল। তারপরেও তাদের মধ্যে খোঁড়া বা পা কাঁপার প্রবণতা দেখা যায়নি, কেবল স্ট্রোক করার পর প্যারালাইসিসে ভোগা তিনজন ছাড়া। মিশরা জানান, "কেবল খেসারি খেলেই ল্যাথিরিজম হয়ে যাবে, এমন নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে চোখে পড়ে কেবল খরাসহ অন্যান্য দুর্যোগের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা যাওয়া অঞ্চলেই ল্যাথিরিজমের প্রকোপ হয়েছে।"

মিশরা কী বোঝাতে চেয়েছেন তা সহজেই বোঝা যায়। খেসারি অনেকটা ঘাসের মতোই, যেকোন জলবায়ুতে টিকে থাকা এই ফসল জন্মায়ও প্রচুর, সাথে খরচ আর শ্রমও প্রয়োজন হয় কম। ফলে যখন খরা মৌসুম চলতো, তখন অল্প পানিতেই জন্মানোর সুবিধা পেতে কৃষকরা ব্যাপক পরিমাণে খেসারি উৎপাদন করতো। খরচ কম হওয়ায় এটা তাদের অন্যতম প্রধান খাবারও ছিল।

খেসারি দরিদ্র কৃষকদের প্রধান খাবার হয়ে ওঠার পেছনে আরেকটি প্রধান কারণ জমিবিহীন কৃষিশ্রমিক এবং তাদেরকে শোষণ করার জন্য তৈরি চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে ভারতের স্বাধীনতার পরও বহু দশক ধরে জমিদাররা গরীব কৃষিশ্রমিকদেরকে শোষণ করে গিয়েছে। মজুরি হিসেবে তাদেরকে টাকা না দিয়ে দিয়েছে উৎপাদিত শস্য। আর এর বেশিরভাগই ছিল সস্তা সহজলভ্য খেসারি। অনেকসময় গজরা বা বিরা নামের শস্যও মজুরি হিসেবে দেওয়া হতো, যেটা গম, ছানা আর খেসারির মিশ্রণ।

ছবি- রয়টার্স

এর অর্থ হলো, কৃষকদেরকে বাধ্য হয়েই খেসারির ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হতো, কারণ খেসারি বিক্রি করে অন্য খাবার কেনার মতো সামর্থ্য তাদের ছিল না। স্বাভাবিক সময়ে গজরা থেকে খেসারিকে আলাদা করে ডাল হিসেবে খেলেও দুর্ভিক্ষের সময় তারা খেসারিটুকু রেখে বাকি সব শস্য বিক্রি করে দিত।

কেবল দরিদ্ররাই এই চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে নাম লেখাতো না, হিন্দুদের বর্ণপ্রথার একেবারে নিচের সারির শূদ্ররাও ছিল এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।

অ্যাক্টন তার নিবন্ধে লেখেন, "যারা এই ল্যাথিরিজমে আক্রান্ত এদের মধ্যে দুই ব্রাহ্মণ ভিক্ষু ছাড়া সবাই 'তেলি, কাচি, কোল'-এর মতো শূদ্রদের অন্তর্ভুক্ত। আর এদের সবাই কৃষিজীবি শ্রমিক।"

যখন এই শ্রমিকরা ল্যাথিরিজমে আক্রান্ত হতেন এবং আর কৃষিজমিতে কাজ করতে পারতেন না, তখনই তাদেরকে কাজ থেকে ছাঁটাই করা হতো। তখন তাদের হাতে করার মতো কাজ ছিল কেবল পাথর ভাঙা অথবা ভিক্ষা করা। অ্যাক্টন লেখেন, "এই শ্রমিকরা এরপর কাজ হারিয়ে পাটনা, বেনারস, বোম্বে কিংবা কলকাতার মতো বড় বড় শহরে গিয়ে ভিক্ষা শুরু করতো। এসব শহরের ভিক্ষুকদের বড় অংশ ছিল এই ল্যাথিরিজমে আক্রান্ত খেসারি খাওয়া শ্রমিকরা।"

ল্যাথিরিজমে আক্রান্তদের বড় অংশ পুরুষ হওয়ার মূল কারণ পিতৃতন্ত্র। পুরুষদের মতো নারীরা এত বেশি ল্যাথিরিজমে আক্রান্ত না হওয়ার মূল কারণ দুর্ভিক্ষের সময় পুরুষরা খাবারের বড় অংশ নিজেরা খেয়ে ফেলত। নারীরা কম খাবার খাওয়ায় তুলনামূলক নিরাপদ অবস্থানে ছিল।

এটা এমন না যে, পুরুষ বা নারীরা খেসারির পরিণতি সম্পর্কে জানতো না। এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বহু আগে থেকেই খেসারি খাওয়ার পরিণতি সমাজে প্রচলিত ছিল।

আইন-ই-আকবরীতে এর উল্লেখ রয়েছে, উল্লেখ রয়েছে ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হওয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম্যাককম্বি ইয়াং-এর রেকর্ডেও। কিন্তু খেসারি ছাড়া অন্য কোনো সস্তা খাবার না খাওয়ায় দরিদ্ররা এটি খেতে বাধ্য হয়েছিল। না খেয়ে মারা যাওয়া কিংবা খেয়ে পঙ্গুত্ব বরণ; দরিদ্র কৃষকরা বেছে নিয়েছিল পরেরটিকেই।

জরিপের অভাব

মিশরার মতে খেসারির অনেক বিষয় পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। খেসারি নিষিদ্ধের ৫৫ বছর পর ২০১৬ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ ভারতীয় সরকারকে খেসারির ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।

মিশরা জানান, "খেসারির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা খুব তাড়াহুড়ো করে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে দরিদ্র খেসারি চাষীরা খুবই কম দামে তাদের খেসারি বিক্রি করতে বাধ্য হয় এবং শস্যের বাণিজ্য করা ব্যবসায়ীরা এগুলোকে অন্যান্য ডাল এবং বেসনের মতো তুলনামূলক দামি খাদ্যে ভেজাল হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।"

২০১৮ সালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ খেসারি ডালের নতুন তিনটি প্রজাতি বের করে যেগুলোকে সাধারণভাবে চাষ করা যাবে বলে উল্লেখ করে। মিশরা জানান, "এই নতুন প্রজাতির খেসারিগুলতে খুব কম পরিমাণ বিষ রয়েছে, যেগুলো খাওয়া নিরাপদ।"

তবে সবাই মিশরার মতো আশাবাদী নন। অনেক গবেষকই মনে করেন, ২০১৬ সালে খেসারির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ বিপজ্জনক। যদি তা উঠিয়ে নেওয়া হয়, তবে বাজারে পণ্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে দরিদ্র কৃষকরা ঐ খেসারি ডালের মধ্যেই ফিরে যাবে।

লক্ষ্ণৌয়ের ইন্ডিয়ান ইনিস্টিউট অফ টক্সিকোলজিকাল রিসার্চের সাবেক ডিরেক্টর অলক ধাওয়ান বলেন, "এটা সত্যি যে ল্যাথিরাস একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপর খাওয়া মানে পঙ্গুত্ব বরণ করে নেওয়া। এবং আমরা যদি এই খাবার আবারো অনুমোদন করি এবং দরিদ্র গ্রামবাসীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেই, তাহলে তাদেরকে বোঝানো খুবই কঠিন হবে যে, এগুলোকে ৫০ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিৎ নয়।"

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে ল্যাথিরিজমের চিত্র  

জার্মানির কারগার পাবলিকেশন্সের মেডিকেল জার্নাল 'নিউরোএপিডেমিওলজি'তে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে বাংলাদেশে ল্যাথিরিজম মহামারির চিত্র পাওয়া যায়। ল্যাথিরিজম নিয়ে ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এক জরিপ চালানো হয় বাংলাদেশে।

জরিপে দেখা যায়, সেসময় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় দুটি জেলায় ৬ লাখ ২৯ হাজার ৭৫২ জনের মধ্যে ২৫৬৭ জনের স্নায়বিক সমস্যা রয়েছে। এই ২৫৬৭ জনের মধ্যে ৮৮২ জনই ছিলেন ল্যাথিরিজমে আক্রান্ত।

সেসময় জানা যায়, অল্পবয়সী পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল বেশি। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ১২.৯% ছিলেন নারী। 

হয়তো ভবিষ্যতে আরও উন্নত গবেষণা এই বিতর্কের অবসান ঘটাবে। ততদিন পর্যন্ত, খেসারির এই গল্প ধনীর হাতে দরিদ্রদের চরমতম শোষণের ইতিহাস হিসেবেই টিকে থাকুক।

Related Topics

টপ নিউজ

ডাল / খেসারি / ভারতবর্ষ / ইতিহাস / উপনিবেশিক ভারত

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ট্রাম্প প্রশাসনে থাকাকালীন মাদকে বুঁদ ছিলেন ইলন মাস্ক, প্রতিদিন লাগত ২০ বড়ি কিটামিন
  • ২০৪০ সালের আগেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফোনের সব ছবি
  • উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকায় নির্মিত কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ
  • ট্রাম্প প্রশাসনকে ৫ লাখ অভিবাসীর বৈধ মর্যাদা বাতিলের অনুমতি দিল মার্কিন আদালত
  • ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা ট্রাম্পের
  • আয়া সোফিয়া: সাম্রাজ্যের পতনের পরও যেভাবে টিকে আছে ১৬০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা, কী এর রহস্য

Related News

  • পাঠ্যবই বদলেই মুছে ফেলা যাবে না ভারতের জটিল ইতিহাস—মুখোমুখি হওয়াটাই প্রয়োজন
  • আড়াই হাজার বছরের তক্ষশীলা: ইতিহাসের অতলে হারানো এক আধুনিক নগর
  • ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের মতো ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ নতুন কিছু নয়
  • জাহাঙ্গীরের টার্কির চিত্রকর্ম ও ভারতবর্ষে খাদ্যবস্তুর জটিল ইতিহাস
  • ইউক্রেনকে নিজ দেশের শান্তি আলোচনায় ডাকা হয়নি, ইতিহাসে এমন উদাহরণ অসংখ্য!

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প প্রশাসনে থাকাকালীন মাদকে বুঁদ ছিলেন ইলন মাস্ক, প্রতিদিন লাগত ২০ বড়ি কিটামিন

2
আন্তর্জাতিক

২০৪০ সালের আগেই হারিয়ে যেতে পারে আপনার ফোনের সব ছবি

3
বাংলাদেশ

উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকায় নির্মিত কুয়াকাটা মেরিন ড্রাইভ

4
আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প প্রশাসনকে ৫ লাখ অভিবাসীর বৈধ মর্যাদা বাতিলের অনুমতি দিল মার্কিন আদালত

5
আন্তর্জাতিক

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা ট্রাম্পের

6
আন্তর্জাতিক

আয়া সোফিয়া: সাম্রাজ্যের পতনের পরও যেভাবে টিকে আছে ১৬০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা, কী এর রহস্য

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net