মধ্য আয়ের দেশের হিসেবেই থাকতে চায় শ্রীলঙ্কা, তবে চায় রেয়াতি ঋণ সুবিধা

মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা ধরে রাখতে চায় শ্রীলঙ্কা। তবে বিশ্বব্যাংকের কাছে দরিদ্র দেশের মতো রেয়াতি বা সহজ শর্তের ঋণ সুবিধা চায়। আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) একথা জানায় দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। এর মাধ্যমে দেশটির মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র এর আগে যে বিবৃতি দিয়েছেন– সেটির ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দ্বীপরাষ্ট্রটি বর্তমানে এর ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর আগে মন্ত্রিপরিষদের মুখপাত্র বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কাকে 'নিম্ন আয়ের দেশে' শ্রেণিভুক্ত করতে অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা।
তবে প্রেসিডেন্ট রণিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই মর্যাদা বদল করবে না দেশটি।
প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, 'শ্রীলঙ্কা মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে থাকবে। তবে আমরা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে ঋণ পাওয়ার মর্যাদার জন্য বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ করব'।
বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ-সংগঠন আইডিএ দরিদ্র দেশগুলোতে দারিদ্র্য নিরসনে স্বল্প বা বিনা সুদে ঋণ দেয়।
কলম্বোতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় এবিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য দেয়নি রয়টার্সকে। তবে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক শ্রীলঙ্কার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবে। দেশটি যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে ফিরতে পারে সেজন্য মূল অগ্রাধিকার দেওয়া হবে- দেনা পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক সংস্কারকে।
গত বছর শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনীতি ৮৯ বিলিয়ন ডলারের ছিল বলে সরকারি তথ্যে জানানো হয়। চলতি বছরে জিডিপি সংকোচন ৮.৭ শতাংশ হওয়ার অনুমান করা হচ্ছে, আর স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন যোগ হয়ে মোট অর্থনৈতিক কার্যক্রম হ্রাস পেয়ে হবে ৭৫ বিলিয়ন ডলারের। আর মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৩ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলারে।
এদিকে ২০২১ সালে মাথাপিছু আয় ১,০৮৫ মার্কিন ডলার নিচে থাকলেই তবেই কোনো দেশকে নিম্ন আয়ের শ্রেণিভুক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক।
গত মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সাথে ২৯০ কোটি ডলারের বেইলআউট ঋণ নিয়ে প্রাথমিক সমঝোতা হয় শ্রীলঙ্কার। তবে এই তহবিল ছাড়ের আগে দেশটির দেনা ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করে তুলতে হবে।
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে প্রধান খাতই হলো পর্যটন। কোভিড-১৯ মহামারি দেশের পর্যটন খাতে বড় ধরনের আঘাত হানার পর অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ে। সেইসঙ্গে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের চড়া দাম এবং কৃষিখাতে রাসায়নিক সার আমদানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা দেশটিতে কৃষি উৎপাদনকেও বিপর্যস্ত করে। ফলে বেড়ে যায় খাদ্যসহ সকল নিত্যপণ্যের দাম।
সরকারি রাজস্ব আহরণও কমে যায়। পর্যটন ও অন্যান্য খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন মারাত্মকভাবে কমতে থাকলে টান পড়ে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভেও। ফলে আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা হারায় দেশটি। এবং খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ সকল নিত্যপণ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করে।
- সূত্র: রয়টার্স