হতদরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষিতে পুরো দেশ প্রায় লকডাউন। এ অবস্থায় ঘর থেকে বেরোতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এসব হতদরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন জেলার সরকারি কর্মকর্তারা।
একইভাবে স্বেচ্ছাসেবী ও জনপ্রতিধিদেরও সহায়তা নিচ্ছে প্রশাসন। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম: করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় বরাদ্দকৃত ১৭০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে।
শনিবার নগর ও জেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তারা হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
নগরের আগ্রাবাদ, অলংকার মোড়, জিইসি, ওয়াসার মোড়ে ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, দুই কেজি চিড়া, এক কেজি করে ডাল, চিনি, লবণ, তেল ও আধা কেজি নুডলস রয়েছে।
এদিকে নগরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় হতদরিদ্র পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনাররা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী বলেন, অস্বচ্ছল গরীব ১৭ হাজার পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথমদিন নগর ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে।

সিলেট: চাল-ডাল নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা। দরিদ্র এসব মানুষদের মধ্যে শনিবার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করছে জেলা প্রশাসন।
কোনো পূর্ব তালিকা অনুযায়ী নয়, যারা এখন সবচেয়ে সংকটে আছে তাদের কাছেই সহায়তা যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম বলেন, সরকার থেকে ১০০ টন চাল ও ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো ইউএনওদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। লোক-সমাগম না করে ইউএনও-এসিল্যান্ডরা দরিদ্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এগুলো পৌঁছে দেবে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে কারা সবচেয়ে সমস্যায় আছেন তা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে ইউএনও খোঁজ নেবেন। এরপর বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাছাই করে সহায়তা প্রধান করবেন।
খুলনা: মহানগরীসহ জেলার ৯ উপজেলায় ২৭২ টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া চাল ও টাকা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মহানগরীসহ জেলার প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন এর তদারকি করবে।
খুলনা জেলা ও ত্রাণ কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম জোয়ার্দার জানান, বরাদ্দের মধ্যে ৬২ টন চাল খুলনা মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের জন্য এবং বাকি ২০১০ টন চাল জেলার ৯ উপজেলার জন্য। গত ২৫ মার্চ থেকে উপজেলা প্রশাসনকে চাল ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহী: করোনায় যাতে অতি দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষরা দুর্ভোগে না পড়েন সেজন্য জেলা ও মহানগরে সরকারি উদ্যোগে ৪০ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারের মধ্যে ৪০৪ টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হবে। এজন্য প্রতিটি উপজেলায় ও মহানগরীতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় অতি দরিদ্রদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মহানগরীতে সিটি মেয়রের নেতৃত্বাধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ কমিটি এবং উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্ব স্ব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এ তালিকা তৈরি করছেন।
রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অতি দরিদ্রদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে ও খাদ্যদ্রব্য প্যাকেটিংয়ের কাজ চলছে। দুই একদিনের মধ্যেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করা শুরু হবে।
বগুড়া: বেকার দিনমজুর ও রিক্সা চালকসহ করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন ২৮ হাজার ১শ' পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী মন্ডল জানান, বগুড়া পৌর এলাকার জন্য ১০ টন আর উপজেলার পর্যায়ে পৌর এলাকার জন্য ৫ টন করে খাদ্য শষ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নগদ ১০ হাজার টাকা করেও দেওয়া হয়েছে গরীব পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য।

ময়মনসিংহ: দরিদ্র মানুষের জন্য ১০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান প্রকৃত অভাবী মানুষদের হাতে আমরা সাহায্য তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই কর্পোরেশনের সাহায্যে অভাবী রিক্সাচালক ও ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে শ্রমিকদের শনাক্ত করছি। একইভাবে আমরা স্বেচ্ছাসেবীর মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছি।
বরিশাল: করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বরিশালে ১৯৫ টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কর্মহীন দরিদ্র মানুষের মধ্যে এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় পাঠানো চাল নগরী ও ১০টি উপজেলার দরিদ্র পরিবারের মাঝে বৃহস্পতিবার থেকে বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি উপজেলায় ১৩০ জন কর্মহীন খেটে-খাওয়া পরিবারের মাঝে চাল ১০ কেজি, ২ কেজি ডাল, ৫ কেজি আলু এবং একটি সাবান বিতরণ করা হচ্ছে।