ওড়িশায় ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে মুর্শিদাবাদের শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
ভারতের ওড়িশা রাজ্যের সম্বলপুর শহরে গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্তের হামলায় পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার এক নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও দুই শ্রমিক আহত হন। এর আগে হামলাকারীরা তিন শ্রমিকের কাছে তাদের আধার কার্ড দেখতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওড়িশা পুলিশ দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডটি 'হঠাৎ উসকানি' থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তবে সম্বলপুরে ওই শ্রমিকদের নিয়োগকারী ঠিকাদার জানান, দুর্বৃত্তরা শ্রমিকদের 'বাংলাদেশি' বলে সম্বোধন করে এবং তাদের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড দেখতে চায়। শ্রমিকরা যখন আধার কার্ড দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই পেছন থেকে তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালানো হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এলাকার শ্রম ঠিকাদার হক সাহেব বলেন, ''২০ বছর বয়সী জুয়েল রানা এবং ২০-এর কোঠায় থাকা আরও দুই শ্রমিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে চা খেতে বাইরে গিয়েছিলেন। হঠাৎ চার-পাঁচজনের একটি দল এসে আমার শ্রমিকদের 'বাংলাদেশি' বলে ডাকতে শুরু করে। তারা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড দেখতে চায়। আমার শ্রমিকরা যখন আধার কার্ড আনতে যাচ্ছিলেন, তখন দুর্বৃত্তরা লাঠি দিয়ে তাদের পেটাতে শুরু করে। জুয়েলের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি মারা যান।''
হক সাহেব আরও জানান, তারা গত ১৩ বছর ধরে সম্বলপুর এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন এবং এর আগে কখনও এমন সহিংসতার শিকার হননি।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শহরের উত্তর রেঞ্জের পুলিশের আইজিপি হিমাংশু লাল বলেন, 'সম্বলপুরের আইন্থাপালি থানায় এই হত্যাকাণ্ডের মামলা করা হয়েছে এবং সব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী অধিকতর ফরেনসিক তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডটি আকস্মিক উসকানিজনিত ঘটনা। এটি কাউকে টার্গেট করে করা হামলা নয়।' হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য দুই শ্রমিকের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীমন্ত বারিক ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, 'শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সখ্য ছিল। তারা প্রায়ই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেন। মদ্যপ অবস্থায় স্থানীয়রা বিড়ি চাইলে তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। সেই আকস্মিক উসকানি থেকেই হামলার ঘটনা ঘটে। মাথায় আঘাতের কারণেই একজনের মৃত্যু হয়েছে।'
উল্লেখ্য, গত আগস্ট মাসে সম্বলপুরের পার্শ্ববর্তী ঝারসুগুডা জেলা পুলিশ অবৈধ অনুপ্রবেশের সন্দেহে ৪৪৪ জনকে আটক করেছিল। তবে পরে যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, তাদের অধিকাংশেই ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক।
