জান্তার দাবি, সু চি ‘সুস্থ আছেন’; ‘তবে সেনাবাহিনী কোনো প্রমাণ দেখায়নি’, দাবি ছেলের
মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সান সু চির শারীরিক অবস্থা নিয়ে ছেলে কিম অ্যারিসের আশঙ্কা প্রকাশের এক দিন পরই দেশটির জান্তা সরকারের দাবি, সু চি সুস্থ আছেন।
এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিম অ্যারিস বলেছিলেন, মায়ের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তার কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'আমার মা মারা গেলেও আমি হয়তো জানব না।'
মঙ্গলবার জান্তা নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম 'মিয়ানমার ডিজিটাল নিউজ'-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'অং সান সু চি সুস্থ আছেন।' তবে ওই বিবৃতিতে তার বর্তমান অবস্থার কোনো ছবি বা বিস্তারিত প্রমাণ দেওয়া হয়নি।
জান্তার বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় বুধবার কিম অ্যারিস রয়টার্সকে বলেন, 'সেনাবাহিনী দাবি করছে মা সুস্থ আছেন, অথচ তারা এর কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না। কোনো সাম্প্রতিক ছবি নেই, মেডিক্যাল রিপোর্ট নেই, এমনকি পরিবার, ডাক্তার বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।'
তিনি বলেন, 'মা যদি সত্যিই সুস্থ থাকেন, তবে তারা সেটা প্রমাণ করুক।'
এর আগে গত অক্টোবরে 'এশিয়া টাইমস'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিম বলেছিলেন, তার ধারণা ৮০ বছর বয়সী সু চিকে বর্তমানে রাজধানী নেপিদোর কারাগারে সলিটারি কনফাইন্সমেন্ট রাখা হয়েছে। এমনকি অন্য বন্দীদেরও তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। তিনি অভিযোগ করেন, জান্তা সরকার প্রায়ই তার মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে গুজব ছড়ায়—কখনো বলে তিনি গৃহবন্দী, কখনো বলে স্ট্রোক করেছেন, এমনকি তিনি মারা গেছেন বলেও রটানো হয়।
শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই বন্দী। তার নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী, এর পর থেকেই মিয়ানমার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাতে জর্জরিত।
বর্তমানে সু চি উসকানি, দুর্নীতি ও নির্বাচনী জালিয়াতিসহ বিভিন্ন মামলায় ২৭ বছরের সাজা ভোগ করছেন। তবে সু চি এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
টোকিওতে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে কিম অ্যারিস আশা প্রকাশ করেন, আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনী যে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে, তা হয়তো তার মায়ের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। তার ধারণা, নির্বাচনের আগে সমালোচকদের শান্ত করতে জান্তা সরকার সু চিকে মুক্তি দিতে পারে অথবা অন্তত কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী করতে পারে।
অবশ্য পশ্চিমা অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা জান্তা সরকারের অধীনে হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে 'প্রহসন' এবং সামরিক শাসন বৈধ করার চেষ্টা বলে অভিহিত করেছে।
মিয়ানমারে ২০২০ সালের পর এই প্রথম সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তবে জান্তা সরকারের অভিযোগ, সু চির ছেলে কিম অ্যারিস এই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নির্বাচনেই সু চির দলের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ এনে ক্ষমতা দখল করেছিল সেনাবাহিনী।
বিবৃতিতে জান্তা সরকার বলেছে, 'এসব (অ্যারিসের বক্তব্য) কেবলই মনগড়া কথাবার্তা। অদূর ভবিষ্যতে মিয়ানমারে অবাধ ও সুষ্ঠু বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পনা করে এখন এসব কথা ছড়ানো হচ্ছে।'
এদিকে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল সু চির 'ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি'কে (এনএলডি) আগেই বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া জান্তাবিরোধী আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলও আসন্ন এই নির্বাচন বর্জন করেছে।
