নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগের দিন গিনি-বিসাউয়ে ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী
বুধবার ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছে গিনি-বিসাউয়ের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের একটি দল। দেশটিতে এমন অভ্যুত্থানের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এই ঘোষণা এসেছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশের এক দিন আগে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে মুখপাত্র দিনিজ এন'চামা এক বিবৃতিতে জানান, তারা প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে অপসারণ করেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন, সীমান্ত বন্ধ করেছেন এবং কারফিউ জারি করবেন।
এর অল্প কিছুক্ষণ পর এমবালো ফ্রান্স ২৪–কে বলেন, 'আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।'
সামরিক কর্মকর্তারা তাদের বিবৃতিতে বলেন, তারা 'শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উচ্চ সামরিক কমান্ড' নামে একটি সংস্থা গঠন করেছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সংস্থাটি পশ্চিম আফ্রিকান দেশটি পরিচালনা করবে।
তবে কর্মকর্তারা এমবালোকে আটক করেছেন কি না, এবং তার অবস্থানও সম্পর্কে কোনো তথ্য জানাননি।
এটি গিনি-বিসাউয়ে অস্থিরতার সর্বশেষ ঘটনা। দেশটি সেনেগাল ও গিনির মাঝখানে অবস্থিত। ছোট এই উপকূলীয় দেশটি ইউরোপগামী কোকেন পাচারের একটি কুখ্যাত কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
তবে গিনি-বিসাউয়ের সকল শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন সেনাবাহিনীর ছিল কিনা, নাকি প্রায় দুই মিলিয়ন জনসংখ্যার পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে ছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, 'কিছু জাতীয় রাজনীতিবিদ' এবং 'দেশ-বিদেশের পরিচিত মাদক সম্রাটদের' সাজানো এক অস্থিতিশীলতার পরিকল্পনার জবাবে তারা ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। বিবৃতিতে আরও অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনের ফলাফলকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঘোষণার আগে গুলির শব্দ শোনা গেছে
অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেওয়ার ঠিক আগেই নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গুলিবর্ষণ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে এবং গ্রিনিচ মান সময় দুপুর ২টা ( পূর্বাঞ্চলীয় সময় অনুসারে সকাল ৯টা) নাগাদ থেমে যায় বলে জানিয়েছেন রয়টার্সের এক সাংবাদিক।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিসাউয়ের এক গাড়িচালক সেসময়ের আতঙ্কের দৃশ্যের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, 'মানুষ চারদিকে দৌড়াচ্ছে।'
তবে এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গত রোববারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করার কথা ছিল নির্বাচন কমিশনের। এই নির্বাচনে এমবালো লড়াই করছিলেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফের্নান্দো দিয়াসের বিরুদ্ধে।
প্রথম দফা ভোটের পর উভয় পক্ষই বিজয়ের দাবি করেছিল।
গিনি-বিসাউয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়া গত তিন দশকে কোনো প্রেসিডেন্টের পক্ষে সম্ভব হয়নি; এমবালো সেই রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।
এমবালোর মুখপাত্র আন্তোনিও ইয়ায়া সেইদি রয়টার্সকে বলেন, অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা নির্বাচনের ফলাফলের ঘোষণা ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনের ওপর হামলা চালিয়েছে।
তিনি দাবি করেন, হামলাকারীরা দিয়াসের সঙ্গে যুক্ত, যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ তিনি দেননি। এদিকে, মন্তব্যের অনুরোধে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেননি দিয়াসের মুখপাত্র।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী দোমিঙ্গোস সিমোয়েস পেরেইরা ২০১৯ সালের বিতর্কিত রানঅফে এমবালোর কাছে হেরে যান। তিনি এ নির্বাচনে দিয়াসকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে দিয়াসের কোনো সম্পর্ক নেই।
পেরেইরা বলেন, দিয়াস নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন, তখনই কিছু লোক ঘরে ঢুকে জানান যে শহরের কেন্দ্রস্থলে গুলির ঘটনা ঘটেছে। পেরেইরা জানান, তিনি নিজেও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দিয়াস নিরাপদে আছেন এবং বিসাউতেই অবস্থান করছেন বলে জানান পেরেইরা।
অভ্যুত্থানের ইতিহাস
১৯৭৪ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকে ২০২০ সালে এমবালো দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত গিনি-বিসাউ অন্তত নয়টি অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থানচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছে।
এমবালো বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অন্তত তিনটি অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে। তবে তার সমালোচকরা অভিযোগ করেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে দমন-পীড়ন চালাতে সংকট তৈরি করতেন ও অতিরঞ্জিত করে দেখাতেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুলির শব্দ শোনা যায়, যা এমবালোর সরকার এক অভ্যুত্থানচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় এমবালো সংসদ ভেঙে দেন, এবং তখন থেকে দেশটিতে কার্যকর কোনো আইনসভা নেই।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনা ঘটে অক্টোবরের শেষ দিকে, যখন কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সন্দেহে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববারের ভোটের আগে পরিস্থিতিও ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। বিরোধীরা দাবি করেন, এমবালো ইতিমধ্যেই তার মেয়াদ অতিগ্রহণ করেছেন।
এমবালোর শাসনামলের সময় কোকেন পাচারের ব্যবসা যেন আরও প্রসারিত হয়েছে। ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের আগস্ট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটি এখন আগের চেয়ে বেশি লাভজনক হতে পারে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিচার বিভাগীয় পুলিশ জানিয়েছে যে ভেনেজুয়েলা থেকে বিসাউয়ে অবতরণ করা একটি বিমান থেকে তারা ২.৬৩ টন কোকেন জব্দ করেছে।
