বায়ু দূষণ ঠেকাতে দিল্লির কৃত্রিম বৃষ্টির পরীক্ষা ব্যর্থ হলো কেন?
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ বায়ু দূষণ থেকে মুক্তি পেতে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর একটি বড় ধরনের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। আকাশে মেঘ থাকলেও তাতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না থাকায় 'ক্লাউড সিডিং' নামের এই প্রযুক্তি কাজে আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
৫৩ বছর পর দেশটিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গেল ২৮ অক্টোবর চালানো এই পরীক্ষাটি সফল না হওয়ায় শহরটির বিষাক্ত ধোঁয়া কাটানোর আশা আপাতত পূরণ হচ্ছে না।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) কানপুর এবং দিল্লি সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই পরীক্ষা চালানো হয়।
গত দুই সপ্তাহ ধরে দিল্লির বায়ুর মান সূচক (একিউআই) স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে একটি বিমান থেকে আকাশে সিলভার আয়োডাইড ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের কণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা মেঘকে ঘনীভূত করে বৃষ্টি ঝরাতে সাহায্য করে। কিন্তু পর্যাপ্ত আর্দ্রতার অভাবে এই প্রক্রিয়া সফল হয়নি।
তবে আইআইটি কানপুরের পরিচালক মণীন্দ্র আগরওয়াল জানান, বৃষ্টি না হলেও এই পরীক্ষার ফলে বাতাসে ভাসমান দূষণ কণার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা জানিয়েছেন, আগামীতে মেঘে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়লে আবারও এই পরীক্ষা চালানো হতে পারে।
তবে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি নতুন নয়। এর আগে দিল্লিতে ১৯৫৭ এবং ১৯৭২ সালে খরা মোকাবিলার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভারতে দেশীয় প্রযুক্তিতে এটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা।
এই প্রযুক্তির সাফল্য মূলত নির্ভর করে মেঘে সঠিক পরিমাণে আর্দ্রতা থাকার ওপর। মেঘের মধ্যে লবণের মতো কণা ছড়িয়ে দিলে তা জলকণাকে আকর্ষণ করে এবং ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হিসেবে ঝরে পড়ে। দিল্লির আকাশে মেঘ থাকলেও তা ছিল শুষ্ক, বৃষ্টি ঝরানোর জন্য অনুকূল ছিল না।
এছাড়াও ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং এর সাফল্যের হারও খুব কম। জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অবিনাশ মোহান্তি বলেন, 'এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ুর মান কতটা উন্নত করা সম্ভব, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। তাছাড়া প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বদলানোর চেষ্টার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা-ও অজানা।'
এর আগে, চীন অলিম্পিকের আগে বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতার দাবি করেছিল। অন্যদিকে, গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে বন্যার পর এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
