ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় ভারতের ‘ইন্ধন’ থাকার অভিযোগ পাকিস্তানের
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে একটি আদালতের বাইরে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় ১২ জন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। আহতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, কোনো প্রমাণ উপস্থাপন না করেই প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভবনের বাইরে ঘটা আত্মঘাতী হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, 'উভয় হামলাই এই অঞ্চলে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিকৃষ্টতম উদাহরণ। ভারতের এ ধরনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা জানানোর জন্য এখন বিশ্বের এগিয়ে আসার সময় হয়েছে।'
দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ মঙ্গলবার রাতে দাবি করেন, হামলাগুলো ভারতের ইন্ধনে আফগানিস্তান থেকে পরিচালনা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান এবং তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে, যা অক্টোবরে ধারাবাহিক সীমান্ত সংঘর্ষের পর নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: ইসলামাবাদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত ১২
বিস্ফোরণের সময় ইসলামাবাদে একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সঙ্গে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলছিল পাকিস্তান।
এ হামলাকে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক সহিংসতার বড় বৃদ্ধি হিসেবে দেখছে। ঘটনার সময় খাইবার পাখতুনখাওয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে এক ক্যাডেট কলেজে জঙ্গিদের হাতে জিম্মি থাকা শত শত শিক্ষার্থী উদ্ধারে সেনাবাহিনী ব্যস্ত ছিল। নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ ক্যাডেটকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকিদের মুক্ত করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার খাইবার পাখতুনখাওয়ার ডেরা ইসমাইল খানে আরেকটি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ১৪ জন নিরাপত্তা কর্মী আহত হন।
পাকিস্তানে এই হামলাগুলো এমন দিনে ঘটল, যার একদিন আগেই নয়াদিল্লিতে একটি গাড়ি বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছিল। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, 'ভারত এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা প্রত্যেক অপরাধীকে খুঁজে বের করবে'।
পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি বিচ্ছিন্ন অংশ জামা-উল-আহরার এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে আফগান তালেবানের আদর্শিক মিত্র টিটিপি ইসলামাবাদ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টিটিপির চালানো ধারাবাহিক হামলায় পাকিস্তানে শত শত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান বারবার আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে টিটিপিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে, যা কাবুল অস্বীকার করে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে টিটিপি, যার মধ্যে বেশ কয়েকটি মারাত্মক আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষও অন্তর্ভুক্ত।
তবে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকাংশেই শান্তিপূর্ণ ছিল। সেখানে সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা হয়েছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, যখন একটি গাড়ি একটি পুলিশ পোস্টে ধাক্কা দেয় এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। সেই হামলার দায় স্বীকার করেছিল টিটিপি।
