নিউইয়র্কে বিজয় ভাষণে ‘আন্টিদের’ ধন্যবাদ দিলেন মামদানি, তুলে ধরলেন দক্ষিণ এশীয় পারিবারিক সংস্কৃতি
এই সপ্তাহে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির লড়াকু 'ধুম মাচালে' ভাষণের একটি অংশ বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিবেদক। তার কাছে, নির্বাচনে তার পক্ষে প্রচারণা চালানো 'আন্টিদের'—অর্থাৎ মধ্যবয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত নারীদের—ধন্যবাদ জানানোর বিষয়টি ভালো লেগেছে। এ মধ্যবয়সী নারীরা তার সম্পর্কে কেউ না হলেও এ 'আন্টি' সম্বোধনটি ভারত উপমহাদেশের সব জায়গার মানুষই বুঝতে পারবে। তবে তার এই কাজটি ছিল বেশ সাহসী, কারণ এর আগে কয়েকজন আন্টির কারণে মামদানিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় উঠেছিল।
৯/১১-এর পর নিউইয়র্কের সাবওয়ে ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া এক হিজাব পরিহিত আত্মীয় সম্পর্কে তার বক্তব্যের 'ব্যাখ্যা' দিতে গিয়ে, মামদানি ইংরেজি 'আন্ট' শব্দটির ব্যাপক দেশি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছিলেন।
এর ফলে এখন আরও অনেক আমেরিকানরা হয়তো বুঝতে পারবেন যে, উপমহাদেশে 'আন্ট' বা 'আন্টি' শব্দটি কতটা ব্যাপকভাবে, এমনকি ঢালাওভাবে ব্যবহৃত হয়, যা রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত পশ্চিমা সংজ্ঞার সংকীর্ণ গণ্ডিকে বহুদূরে ছাড়িয়ে গেছে। উচ্চারণের বিশেষ ঢঙের কারণে 'আন্টি' শব্দটি এমনকি একটি বহুমাত্রিক বিশেষণেও পরিণত হয়েছে।
মামদানি তার বাবার "দূর সম্পর্কের বোন" জেহরা ফুহিকে 'আন্টি' বলাটা যুক্তরাষ্ট্রে অ-দক্ষিণ এশীয়দের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছিল, কিন্তু সব জায়গার দেশিরাই একমত হবে যে তিনি নিশ্চিতভাবেই তার আন্টি ছিলেন, 'ওয়ান্স রিমুভড' ধরনের কোনো কাজিন নন। কোথা থেকে বিচ্ছিন্ন, স্যারজি? পরিবার থেকে? সমাজ থেকে? এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে পারিবারিক সম্পর্কের পশ্চিমা শ্রেণিবিভাগ আমাদের বেশিরভাগের কাছে অস্পষ্ট এবং একেবারেই অযৌক্তিক মনে হয়। এক প্রজন্মের কাজিনরা কীভাবে অন্য সব প্রজন্মের জন্যও কাজিন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে?
এই বিভ্রান্তির মূলে রয়েছে পশ্চিমে "আন্টি" শব্দটির সংকীর্ণ সংজ্ঞা এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দেশি সংস্কৃতিতে সম্পর্কগুলো বেশ লম্বা হয়। বেশিরভাগ ইংরেজি অভিধানে বলা হয়, আন্টি হলেন কেবল 'কারও বাবা বা মায়ের বোন, অথবা তার চাচা/মামা বা ফুফু/মাসির স্ত্রী'। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষেরা দৃঢ়ভাবে বলবে যে, এটি এমন একটি সংজ্ঞা যা সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত, কারণ এটি বর্ধিত দেশি পরিবার এবং সামাজিক পরিমণ্ডলের একই প্রজন্মের সকল নারী সদস্যকে এর আওতার বাইরে রাখে।
সকল দক্ষিণ এশীয়রাই একমত হবেন যে, সবচেয়ে প্রবীণ প্রজন্মকে দাদা-দাদি বা নানা-নানি অথবা 'গ্র্যান্ড আঙ্কেল' ও 'গ্র্যান্ড আন্টি' হিসেবে সম্বোধন করা হয়, যদিও এই শেষের শব্দ দুটিকে আমরা ছাড়া আর কেউ ইংরেজি পরিভাষা হিসেবে গণ্য করে না। আমাদের দাদা-দাদি বা নানা-নানির ভাইবোন এবং কাজিনরা—তারা যত কাছের বা দূরেরই হোক—সবাই 'গ্র্যান্ড আঙ্কেল' ও 'গ্র্যান্ড আন্টি' হিসেবে পরিচিত। তারা আমাদের বাবা-মায়ের কাজিন নন, তা তারা যতবারই 'রিমুভড' হোক না কেন। একই সম্মান প্রবীণ প্রজন্মের সকল অনাত্মীয়দের প্রতিও সর্বদা প্রদর্শন করা হয়।
একইভাবে, বাবা-মায়ের কাজিনরা (তারা যত কাছের বা দূরেরই হোক না কেন) পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আন্টি এবং আঙ্কেল হিসেবে পরিচিত হন, মা বা বাবার বংশের পরিচয়ে চিহ্নিত হন; তারা 'রিমুভড' কাজিন হিসেবে পরিচিত নন। এবং যেহেতু উপমহাদেশের কোনো ভাষাতেই 'কাজিন'র কোনো নিজস্ব শব্দ নেই, আমরা সবাই ভাই অথবা বোন, এবং ইংরেজিতে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি হাইফেন যুক্ত করা হয়। সুতরাং, শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতিতেই আন্টি এবং আঙ্কেলদের পাশাপাশি 'কাজিন-ব্রাদার' এবং 'কাজিন-সিস্টার'-এর অস্তিত্ব রয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই সুনির্দিষ্ট পরিচয় রয়েছে।
তবে, ইংরেজি 'আন্টি' শব্দটির ব্যাপক ও অনির্দিষ্ট সাধারণ ব্যবহার ভারতে বসবাসকারীদের জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে উঠেছে। এটি কেবল যে কোনো বয়স্ক মহিলার (আত্মীয় না হলেও) প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠতাকে সম্মান জানাতে প্রত্যয় হিসাবে ('প্রিয়া আন্টি' হিসেবে, ব্রিটিশ বা আমেরিকান 'আন্টি প্রিয়া'-এর বিপরীতে) অবাধে ব্যবহৃত হয় তা-ই নয়, এটি একটি নির্দিষ্ট নারী গোষ্ঠীর প্রতীকেও পরিণত হয়েছে, যা মামদানি পরিষ্কারভাবে গ্রহণ করেছেন, যদিও ভারতের প্রায়শই ব্যবহৃত সামাজিক অর্থগুলো এখানে নেই।
মামদানির বিজয় ভাষণ নিউইয়র্কের শব্দভান্ডারে 'আন্টি' শব্দটিকে একটি নতুন শব্দ হিসেবে যুক্ত করতে পারে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের উত্থানের কারণে আমেরিকানদের দক্ষিণ এশীয় পারিবারিক ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার প্রয়োজন রয়েছে। মামদানির তার বাবার কাজিনকে আন্টি বলা বা বয়স্ক ভোটারদের আন্টি সম্বোধন করা সেখানকার অ-দক্ষিণ এশীয়দের আর বিভ্রান্তিতে ফেলা উচিত নয়। যদি কোনো একটি বিষয়ে মামদানি, উষা ভ্যান্স, বিবেক রামাস্বামী, কাশ প্যাটেল এবং নিকি হ্যালি একমত হন, তবে তা হবে আন্ট ও আন্টিদের বিষয়ে।
