পোকরোভস্ককে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার দাবি মস্কোর; ইউক্রেন বলছে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে
রাশিয়া পোকরোভস্ক চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার দাবি করলেও গত শনিবার ইউক্রেনের সেনা প্রধান বলেছেন, তার সৈন্যরা এখনো পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর পোকরোভস্কে প্রতিরোধ বজায় রেখেছে।
রাশিয়া ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে পোকরোভস্ক দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। শহরটি 'দোনেৎস্কের প্রবেশদ্বার' হিসেবে পরিচিত। পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অভিযানের অংশ হিসেবেই রাশিয়ার এই দখলচেষ্টা চলছে—যে অঞ্চলকে তারা ইতোমধ্যে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে।
যুদ্ধের আগে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল পোকরোভস্কে, কিন্তু এখন শহরটি প্রায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস ও জনশূন্য হয়ে গেছে।
পোকরোভস্ক দখল করতে পারলে, তা হবে ইউক্রেনের ভেতরে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ভুখণ্ড দখল সংক্রান্ত সাফল্য—যেহেতু ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মস্কো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহর আভদিভকা দখল করেছিল।
এর পর থেকে রাশিয়া প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার (৬০০ মাইল) দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনে তীব্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি অর্জন করে চলেছে। এই সংঘাতে দুই পক্ষেরই কয়েক হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
কিয়েভের দাবি, এই ব্যয়বহুল লড়াই মূলত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে এবং তাদের ভূখণ্ডগত ক্ষতি সীমিত। তবে মস্কোর দাবি, তারা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করছে।
'আমরা পোকরোভস্ক ধরে রেখেছি,' সেনাপ্রধানের ঘোষণা
'আমরা পোকরোভস্ক ধরে রেখেছি,' ফেসবুকে এ কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্দর সিরস্কি। তিনি আরও বলেন, 'পোকরোভস্ক থেকে শত্রু বাহিনীকে ধ্বংস ও উৎখাত করার জন্য একটি সর্বাত্মক অভিযান চলছে।'
রুশ কর্মকর্তাদের মতে, পোকরোভস্ক ও এর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত কোস্তিয়ানতিনিভকা শহর দখল করতে পারলে মস্কো দোনেৎস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় দুটি শহর—ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের দিকে উত্তরমুখী অগ্রযাত্রা শুরু করতে পারবে।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তারা পোকরোভস্ক এলাকায় এগিয়ে যাওয়ার দাবি করেছে।
তবে রয়টার্স জানায়, দুই পক্ষেরই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার সীমিত থাকায় এসব দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ওপেন সোর্স ছবির তথ্য একত্র করে তৈরি ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইন মানচিত্র প্রকল্প 'ডিপস্টেট' দেখিয়েছে, পোকরোভস্কের দক্ষিণাঞ্চলের একটি ছোট অংশ পুরোপুরি রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে শহরের বাকি অংশের বেশিরভাগই এখনো 'ধূসর এলাকা' হিসেবে চিহ্নিত, অর্থাৎ কোনো পক্ষেরই এটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই।
পরবর্তী প্রতিবেদনে ডিপস্টেট জানিয়েছে, রুশ সেনারা এখনো পোকরোভস্কের দক্ষিণাংশে অনুপ্রবেশ করছে এবং সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদাতিক সেনা অবস্থান করছে।
ডিপস্টেট জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী শত্রুপক্ষের দলগুলোকে শনাক্ত করে ধ্বংস করছে, যার ফলে শহরে আরও বড় বড় 'ধূসর এলাকা' তৈরি হচ্ছে—যেখানে কোনো পক্ষেরই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে শহরে মোতায়েন করা হয়েছেন এবং বিশেষায়িত ইউনিট ব্যবহার করে তারা অনুপ্রবেশকারী বাহিনীকে খুঁজে বের করছেন।
অন্যদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদমাধ্যম 'জভেজদা' শনিবার জানিয়েছে, পোকরোভস্কে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ শুরু করেছে। তারা দুটি ব্যক্তির ভিডিও প্রকাশ করেছে, সেখানে ওই দুই ব্যক্তিকে ইউক্রেনীয় সৈন্য বলে দাবি করা হয়েছে। তবে রয়টার্স জানায়, ভিডিওটির সত্যতা কিংবা কখন ও কোথায় তা ধারণ করা হয়েছে, তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
কিয়েভ জানিয়েছে, রাশিয়ার এগিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তারা বিশেষ বাহিনী নিয়ে একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করিয়েছে পোকরোভস্কে। তবে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের ওই বিশেষ বাহিনীর ১১ সদস্যকেই হত্যা করেছে।
একজন ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাশিয়ার দাবি অস্বীকার করে বলেছেন যে, পোকরোভস্কে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়নি এবং অভিযানটি এখনো চলছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, তাদের বাহিনী পোকরোভস্কের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত হ্রিশিনে এলাকা থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা প্রতিহত করেছে। ঐ এলাকায় চলমান যুদ্ধ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, রুশ বাহিনী সম্ভবত পোকরোভস্কের দিকে যাওয়া ইউক্রেনীয় সরবরাহ লাইনগুলো কেটে দেওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পোকরোভস্কের পরিস্থিতি 'কঠিন ও পরিবর্তনশীল' থাকলেও তারা শহরের কয়েকটি এলাকায় নিজেদের কৌশলগত অবস্থান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে।
রাশিয়ার লক্ষ্য হলো পুরো দোনবাস অঞ্চল দখল করা, যা লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক প্রদেশ নিয়ে গঠিত। বর্তমানে ইউক্রেন এখনো দোনবাসের প্রায় ১০ শতাংশ এলাকা—অর্থাৎ পশ্চিম দোনেৎস্কের প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার (১ হাজার ৯৩০ বর্গমাইল)—নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
