জাপানে বাড়ছে ভালুকের আক্রমণ; দমনে শিকারি নিয়োগ, প্রয়োজনে গুলি
 
জাপানে ভালুকের তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ায় এবং আক্রমণে চলতি বছর ১২ জন মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে ভালুক নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শিকারি নিয়োগের পাশাপাশি পুলিশকে প্রয়োজনে ভালুককে গুলি করার অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবছে জাপান সরকার।
বৃহস্পতিবার জাপানের পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়া এবং মানুষের ওপর হামলা চালানো ভালুক দমনে প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করা হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান ভালুক সমস্যা মোকাবিলায় একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার এই পদক্ষেপগুলো প্রস্তাব করা হয়।
চলতি বছর ভালুকের আক্রমণে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০০০ সাল থেকে হিসাব রাখা শুরু হওয়ার পর দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ বছর ১০০ জনেরও বেশি মানুষ ভালুকের হামলায় আহত হয়েছেন।
জাপান সরকার ভালুককে জননিরাপত্তার জন্য 'মারাত্মক হুমকি' হিসেবে বর্ণনা করেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন অঞ্চলে ভালুককে সুপারমার্কেট, এমনকি হাইস্কুলেও ঢুকে পড়তে দেখা গেছে। অনেক বাসিন্দা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ আক্রমণের মুখে পড়ছেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ভালুক দমনে গৃহীতব্য পদক্ষেপগুলো চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
জাপানের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চল আকিতা প্রিফেকচারে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। এখানে ভালুকের আক্রমণে সর্বাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আকিতা অঞ্চলে ভালুক ধরতে ও তাড়াতে আত্মরক্ষাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।
 
জাপানে ভালুকের আক্রমণে রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বাড়লেও, ভালুক দমনে সরকারের সামনে রয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। বর্তমান আইন অনুযায়ী, জাপানের সামরিক বাহিনী ভালুককে গুলি করতে না পারলেও, তারা শিকারিদের ভালুক ধরতে এবং মৃত ভালুক পরিবহনে সহায়তা করতে পারে।
আকিতা প্রিফেকচারের গভর্নর কেনতা সুজুকি বলেছেন, মাঠপর্যায়ে ভালুকের সমস্যা মোকাবিলায় যারা কাজ করছেন, তারা এখন 'ক্লান্ত ও অবসন্ন'।
দেশটির শিকারি সম্প্রদায়ও সংকটে রয়েছে। জাপানে শিকারির সংখ্যা দ্রুত কমছে এবং অধিকাংশই বয়স্ক। একসময় পশম ও পিত্তের জন্য ভালুক শিকার জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু এখন তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। ফলে গ্রামীণ ও পাহাড়ি অঞ্চলে ভালুকের সংখ্যা বেড়ে গেলেও শিকারি কমে যাওয়ায় স্থানীয় মানুষ আরও ঝুঁকিতে পড়ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিচ নাট (ভালুকের প্রধান খাদ্য) এর অভাব ভালুকদের ক্ষুধার্ত করে তুলছে এবং তাদের মানব বসতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর ফলে মানুষের ওপর ভালুকের হামলার ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া জনসংখ্যা হ্রাস ও জনশূন্য বসতিগুলোকেও ভালুকের বিস্তারের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সংকট মোকাবিলায় জাপান সরকার গত সেপ্টেম্বরে অস্ত্র আইন শিথিল করেছে, যাতে আবাসিক এলাকায় ভালুককে গুলি করা সহজ হয়।
উল্লেখ্য, জাপানে দু'ধরনের ভালুক দেখা যায়: জাপানি ব্ল্যাক বিয়ার এবং আকারে বড় ও সাধারণত অধিক আক্রমণাত্মক ব্রাউন বিয়ার, যা হোক্কাইডো দ্বীপে পাওয়া যায়।

 
             
 
 
 
 
