ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগমুহূর্তে একাধিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল উত্তর কোরিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগমুহূর্তে নতুন করে একাধিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানায়, ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় পা রাখার একদিন আগে কোরীয় উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূলে সাগর থেকে স্থলভাগে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়।
কেসিএনএ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উল্লম্বভাবে নিক্ষেপ করা হয় এবং পূর্বনির্ধারিত পথে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় উড়ে নির্ধারিত লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হানে।
এদিকে, এশিয়া সফরে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানোর পর তাকে দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। 'ভিলেজ পিপল' ব্যান্ডের জনপ্রিয় গান 'ওয়াইএমসিএ' -এর সুরে অভ্যর্থনা জানানো হয় তাকে—এই গানটি ট্রাম্পের রাজনৈতিক সমাবেশগুলোতেও প্রায়শই বাজানো হয়।
এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে নেমে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে করমর্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর কিছুক্ষণ পর তিনি রানওয়ের পাশে অপেক্ষমান প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার মেরিন ওয়ান-এ ওঠেন।
মার্কিন সেনা সদস্যরা তাকে স্যালুট জানায়, এরপর হেলিকপ্টারটি গিয়ংজু শহরের উদ্দেশে উড়ে যায়। সেখানে ট্রাম্প এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং বক্তব্য দেবেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং-এর দপ্তর জানিয়েছে, তিনি গিয়ংজুর ঐতিহাসিক জাদুঘরে ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানাবেন। প্রাচীন প্রাসাদ ও রাজকীয় সমাধির জন্য বিখ্যাত এই শহরে দুই নেতা সামরিক গার্ড পরিদর্শন করবেন। এরপর কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার জন্য ট্রাম্পকে 'শান্তির দূত' হিসেবে সম্মাননা জানাবেন লি।
লি ট্রাম্পকে উপহার হিসেবে দেবেন প্রাচীন শিলা রাজ্যের ঐতিহাসিক 'চনমাচং' স্বর্ণমুকুটের প্রতিরূপ।
দুই নেতা পরবর্তীতে একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করবেন, যেখানে পরিবেশন করা হবে 'থাউজ্যান্ড আইল্যান্ড' ড্রেসিং—যা ট্রাম্পের জন্মস্থান নিউইয়র্কে তাঁর সাফল্যের প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট লি'র কার্যালয় থেকে।
দিন শেষে লি জে মিয়ং ট্রাম্পসহ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের আরও কয়েকজন নেতাকে নিয়ে বিশেষ এক 'সামিট ডিনার'-এর আয়োজন করবেন।
এদিকে, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তদারকি করা উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা পাক জং চোন এ বিষয়ে বলেন, 'নিউক্লিয়ার ফোর্স বা পরমাণু বাহিনীর উন্নয়নে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করছি।'
পাকের ভাষায়, এই পরীক্ষার লক্ষ্য ছিল 'বিভিন্ন কৌশলগত আক্রমণক্ষম অস্ত্রের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই এবং শত্রুদের সামনে আমাদের সক্ষমতা প্রদর্শন করা'। তিনি আরও বলেন, 'নিউক্লিয়ার যুদ্ধ-প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।'
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানায়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে উত্তর কোরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জলসীমা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিক্ষেপের প্রস্তুতি তারা শনাক্ত করে। তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্লেষণ চলছে এবং যেকোনো উসকানির জবাবে 'পালটা প্রতিক্রিয়া' দেওয়ার জন্য যৌথ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি বজায় রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহে উত্তর কোরিয়া স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষাও চালায়। দেশটি জানিয়েছিল, এসব ক্ষেপণাস্ত্র নতুন হাইপারসনিক প্রযুক্তির অংশ, যা তাদের পারমাণবিক প্রতিরোধক্ষমতা আরও জোরদার করবে।
সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এমন সময় হলো, যখন কয়েক ঘণ্টা পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং-এর সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গিয়ংজু শহরে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের আলোচনার ফাঁকেই এই শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানকালে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহী। তবে সিউল জানিয়েছে, এমন বৈঠকের সম্ভাবনা খুবই কম।
কিম আগেও বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার 'সুন্দর স্মৃতি' আছে, কিন্তু তিনি কেবল তখনই আলোচনায় বসবেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগের দাবি থেকে সরে আসে।
২০১৯ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ব্যর্থ পারমাণবিক কূটনীতির পর থেকে পিয়ংইয়ং ওয়াশিংটন ও সিউলের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনাই বন্ধ রেখেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার আগে মঙ্গলবার ট্রাম্প ছিলেন জাপানে, যেখানে তিনি উত্তর কোরিয়া কর্তৃক অপহৃত জাপানি নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি বলেন, 'আমরা আপনাদের পাশে আছি', যখন ওই পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জনদের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান।
উত্তর কোরিয়া ২০০২ সালে স্বীকার করে যে তারা ১৩ জন জাপানি নাগরিককে অপহরণ করে এজেন্ট প্রশিক্ষণের কাজে লাগিয়েছিল। জাপানের দাবি, মোট ১৭ জন নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছিল, যাদের মধ্যে পাঁচজনকে পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। উত্তর কোরিয়া বলেছে, আটজন মারা গেছে এবং বাকি চারজন কখনো দেশটিতে প্রবেশই করেনি।
